শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী কামরুন্নাহার

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন জীবন সংগ্রামী নারী কামরুন্নাহার (৩৪)। নারায়ণঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার  কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকায় স্বামী, শাশুড়ি, ৩ ছেলে ও ২ মেয়েসহ ৮ সদস্যের সংসার তার। স্বামীর কাঁচামাল ব্যবসার বার বার লোকসান হওয়ায় ঋণের জালে আটকে পড়ায় হতাশ হয়ে একাধিকবার বাপের বাড়ি চলে যান তিনি।  আবার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে অতিকষ্টে চলছিল তাদের সংসার। প্রশিক্ষণের অভাবে দেশীয় জাতের গরু পালনেও দেখল না আলোর মুখ। সামান্য রোগ বালাই হলেই পালের গরুটি মারা যেত। তাই সাংসারিক অভাব অনটন আরো বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতেও হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি। এক সময় কথা হয় একটি এনজিও (ব্র্যাক ব্যাংকের মাঠ কর্মী)’র সাথে। তার পরামর্শে গবাদি পশু পালনের ওপর একটি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারী চিকিৎসক হাবীব ইফসুফের সাথে আলাপ-আলোচনা করে দেশীয় জাতের পরিবর্তে সংকর ও অস্ট্রেলিয়ার উন্নত জাতের গাভী পালন শুরু করেন।  শুরুতে নিজের জোগাড় করা ৫০ হাজার টাকা ও প্রশিক্ষণ নেয়ায় ব্র্যাক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। এ সময় দেড়লাখ টাকা দিয়ে একটি অস্ট্রেলিয়ার উন্নত জাতের গাভী ক্রয় করা হয়। গাভীটি প্রতিদিন ১২লিটার দুধ দেয়ায় দৈনিক ৫০ টাকা থেকে ৬০টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করে। এক দিকে কিস্তি পরিশোধ, অন্যদিকে সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে থাকে। একই আয় থেকে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া করাতেও কোন রকম কষ্ট হয় না। সময়ের ব্যবধানে গাভী পালনের জন্য আলাদা ঘর, প্রশিক্ষণের সকল সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ, উন্নত জাতের গাভী সঠিকভাবে পালন করে আলোর মুখ দেখে কামরুন্নাহার। এখন তার খামারে ৩টি গাভী, দুটি বাছুর ও একটি ষাঁড় রয়েছে। এসব গাভী থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে মিলে ২৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়। সকালের দুধ স্থানীয় মিষ্টির দোকানে পাইকারি দর তথা ৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করে দেয়। আর বিকেলে বাসা বাড়িতে রোজ হিসেবে ৬০ টাকা করে বিক্রি করে দেন। এভাবে প্রতিদিন ১৩শ’ টাকা দুধ বিক্রি থেকে আসে। পরে গো খাদ্য বাবদ খরচ হয় ৩০০ টাকা, অন্যান্য খরচ আরো ২০০ টাকা। হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৮শ’ টাকা আয় হয়। এ টাকা থেকে মাসিক কিস্তি দিয়েও মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তার স্বামী বিল্লাল হোসেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ঈদ উল আযহার জন্য এ বাছুর থেকে একটি করে ষাঁড় পালনের জন্য রেখে বাকিগুলো গো-খাদ্যর অভাবে বিক্রি করতে দেন। তবে তার দাবি গো-চারণ ভূমি, সবুজ ঘাস জাতীয় খাদ্যের অভাবে গবাদি খামার থেকে পালিত গরুর মাংসের স্বাদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইকোনোমিক ইম্পাওয়ারমেন্ট ফর পুওর অ্যান্ড ভালনারেবল উইমেন ইন বাংলাদেশ (ইইপি)’র সিনিয়র ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা বলেন, সারা বাংলাদেশেই আমরা দরিদ্রদের মধ্যে তাদের চাহিদামত খাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। শুধু প্রশিক্ষণেই সীমাবদ্ধ নয় আমাদের কর্মসূচি। কামরুন্নাহারকে প্রশিক্ষণ পরবর্তী  ব্যাংক থেকে ঋণ আদায়, মার্কেটিং, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাথে সমন্বয়সহ সকল বিষয়ে সহযোগিতা করেছি। এভাবে যারা প্রশিক্ষণ নেয় তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করে থাকি। এ সময় তিনি আরো বলেন, শুধু মাত্র রূপগঞ্জেই ৩৬০০ পরিবারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদের মধ্যে ৩৩৩৪ জন সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভবান হয়েছেন। উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারী চিকিৎসক মো. ইউসুফ হাবীব বলেন, প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ে হাল ছেড়ে দেয়। এটা ঠিক না। সঠিক পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ অবলম্বন করলে কোন খামারিই লোকসানের মুখে পড়বে না। কামরুন্নাহারের সফলতার পেছনে সঠিক পদ্ধতি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন