বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঢেঁকিই তাদের একমাত্র সম্বল

| প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : শত বছর বয়সী জহির উদ্দিন কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক আগেই। বয়সের ভারে আজ অচলাবস্থা। চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই। এমনকি কানেও ঠিকমত শুনতে পান না। সারা জীবন অন্যের বাড়িতে কামলা দিয়ে আসা প্রায় শত বছর বয়সী জহির উদ্দিনের এখন বেঁচে থাকাও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি। নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়ন নবগ্রাম গ্রামে বাড়ি। তার দুই মেয়ে আবিয়া বেওয়া (৬৫) ও জুলেখা খাতুন (৬০) প্রতিবন্ধীকে নিয়ে একটি কুড়েঘরে বসবাস করেন। একটি মাত্র থাকার ঘর। ঘরটি বাঁশের বেড়ায় কাঁদামাটির প্রলেপ, টিনের ছাউনি। ঘরে ভাঙা একটা চৌকি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ঘরের বাহিরে বারান্দায় শীতের সময় বাতাসে ঠা-ার হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে পলিথিন টাঙিয়ে সেখানে শুয়ে থাকেন জহির উদ্দিন। বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়ার গত ১১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার এক মেয়ে। বিয়ে দিয়েছেন পাশের গ্রামে। জামাইয়ের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। তারা কোন খোঁজখবর রাখে না। ছোট মেয়ে জুলেখা খাতুন। জন্মের পর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। দৃষ্টিশক্তি কম, কথাও অস্পষ্ট। লাঠি ধরে চলাফেরা করে। এখনও তার কোন প্রতিবন্ধী কার্ড হয়নি। এক সময় মানুষের বাড়িতে বছরে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন জহির উদ্দিন। শারীরিক শক্তি হারিয়ে বয়সের ভারে আজ তিনি অক্ষম। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় চলাচল করেন। প্রায় ২৫ বছর থেকে আর কাজ করতে পারেন না। গত ১০ বছর থেকে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। তবে বয়স্ক ভাতা দিয়ে তিন সদস্যের ভরণপোষণ কষ্টকর হয়ে উঠেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। ঘরের পাশেই তাল পাতার ভাঙাচুরা ছাউনির নিচে ‘ঢেঁকি’। আর ‘ঢেঁকি’ একমাত্র তাদের সম্বল। গত ১০ থেকে ১১ বছর ঢেঁকি দিয়ে প্রতিবেশীদের আটা কুঁড়ে (চাউল ভেঙে) সেখান থেকে তারা যা দেয় তা দিয়ে দিন পার হয়। আর আটা কুঁড়তে সহযোগিতা করেন বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়া। বয়স হওয়ায় তিনি এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না। তবে বর্ষা মৌসুমে ঝড়বৃষ্টিতে তাল পাতার ভাঙাচুরা ছাউনি দিয়ে পানি পরলে সেদিনের মতো আটা কুঁড়া বন্ধ থাকে। কোনো আয়ের উৎস না থাকায় একই পরিবারে তিনজন সদস্য আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে এসে তারা যেন খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে এজন্য সরকারসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করছেন এলাকাবাসী। প্রতিবেশী শরিফুন বিবি বলেন, খুব কষ্টে থাকেন তারা। কেউ আটা কুঁড়তে আসলে সেখান থেকে যে যা দেন তা খেয়েই তারা থাকেন। তাদের কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগে। প্রতিবেশি নওগাঁ বিএমসি কলেজের খন্ডকালিন শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, পরিবারটা খুবই অসহায়। একবেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে দিন পার করতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয় না। তারা যেন দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারেন এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন। মান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদ দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, এমন অসহায় পরিবারের কথা জানা নেই। তবে জরুরি ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন