মহসিন আলী মনজু, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে : এক বছর অতিবাহিত হলেও দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের গভীর নলকূপে সংযোগ মেলেনি বিদ্যুতের। বরেন্দ্র বিভাগের অধীনে দাসিয়ারছড়ার ভূ-খন্ডে দুটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলেও জোটেনি কৃষকদের ভাগ্যে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা। পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের কৃষকরা জমিতে সেচ দেয়ার আশায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও ধরনা দিচ্ছে কর্মকর্তার পেছনে। কিন্তু চালু করা হয়নি বরেন্দ্রের গভীর নলকূপ দুটি। তবে বরেন্দ্র বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুতের রোষানলে খেসারত দিতে হচ্ছে কৃষকের। ফলে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ক্ষেত লাগানো নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছে বরেন্দ্রের অধীনে থাকা দাসিয়ারছড়ার অধিবাসীরা। জানা গেছে, এ অঞ্চলের কৃষকরা স্বল্প খরচে সেচ পাওয়ার আশায় বরেন্দ্র বিভাগের অধীনে দুটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে এক বছর আগে। এ গভীর নলকূপ দুটি বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়ার কালিহাট ও খড়িয়াটারী গ্রামে স্থাপন করা হয়। ডিপ শ্যালো মেশিনের আওতায় শতাধিক কৃষক সমিতিভুক্ত হয়ে জামানতের এক লাখ করে টাকা দেন কুড়িগ্রাম বরেন্দ্র জোন অফিসে। তাদের সাথে চুক্তি হয় দ্রুত বরেন্দ্রের পাইপ লাইন স্থাপন করে সেচ দেয়ার। সে আলোকে মেশিন ঘর নির্মাণ করে বসানো হয় এক হাজার ফিট গভীর নলকূপের পাইপ লাইন। এতে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী পাইপ লাইন সরবরাহ না হওয়ায় আরো অতিরিক্ত লাইন দেয়ার জন্য ১৩ হাজার ২৬০ টাকা জমা দেয় সমিতির কৃষকরা। পাইপ স্থাপনের জন্য অতিরিক্ত টাকা দেয়া হলেও খড়িয়াটারী গ্রামে পাইপ দেয়ার হদিস নেই কুড়িগ্রাম জোন কর্তৃপক্ষের। তারা বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে জমির ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ধারদেনা করে টাকা জোগান দিলেও মিলছে না সেচের পানির ব্যবস্থা। দাসিয়ারছড়ায় অন্যান্য দফতরের ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে ঠিকই কিন্তু বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির লোকজন। ফলে গত ইরি-বোরো মৌসুমে গভীর নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বরেন্দ্রের আওতায় জমির মালিকরা। পরে তড়িঘড়ি করে শ্যালো মেশিন ভাড়া নিয়ে কোনোমতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করেন গভীর নলকূপের আওতায় তিনশ বিঘা জমির মালিকরা। যার কারণে ফসল তেমন ফলেনি ওই জমিগুলোতে। লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষকদের। এবারো সেই অবস্থায় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন বরেন্দ্রের অধীনে থাকা কৃষকরা। মেশিন সরবরাহ করা হলেও সংযোগ নেই বিদ্যুতের। দ্রুত গভীর নলকূপ দুটি চালু করা না হলে মেশিনের যন্ত্রাংশ ও পাইপ লাইন নষ্ট হওয়ার উপক্রমও রয়েছে। দাসিয়ারছড়ার কালিহাটের সমিতিভুক্ত কৃষক নজরুল ইসলাম ও খড়িয়াটারী গ্রামের আকবর আলী জানান, ধারদেনা করে স্বল্প খরচে সেচ পাওয়ার আশায় বরেন্দ্র বিভাগে টাকা জমা দিয়েছি। গত বছরের লাইন তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। সে জন্য শতাধিক কৃষকের জমিতে সেচের নালা দেয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুতের লাইনের কোনো খবর নেই। অফিসের লোকজন টালবাহানায় ফেলাচ্ছে আমাদেরকে। এবারো ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে পারব কিনা সন্দেহ রয়েছে। নাগেশ্বরী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আখতারুজ্জামান জানান, ৬৮ বছর পর বাংলাদেশের ভূ-খ-ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাড়াহুড়া করার কিছুই নেই। সেচ নীতিমালার জটিলতা থাকার কারণে সংযোগ হয়নি। বরেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। কোনো কাগজপত্র অফিসে জমা দেয়নি তারা। এখন কাগজপত্র জমা দিলে সংযোগের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন বিভাগের কুড়িগ্রাম জোনের কর্মকর্তা নুর ইসলাম জানান, সংযোগ চালু করার জন্য একাধিকবার কাগজপত্র বিদ্যুৎ অফিসে জমা দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা জানিয়েছে ঢাকা থেকে অনুমোদন হলে সংযোগ হবে। খড়িয়াটারী গ্রামে পাইপ স্থাপনের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন