নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : নীলফামারীর সৈয়দপুরে একের পর ইটভাটা গড়ে উঠছে। ফলে আকাশে উড়ছে কুন্ডলী পাকানো কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত কালো ধোঁয়ার বিষ। ইটভাটার ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে চারদিক। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। গাছে ফলছে না তেমন ফল, ক্ষেতে হচ্ছে না আশানরূপ ফলন। ইটভাটার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সোনা ফলানো মাটি। ইট ভাটার তপ্ত আগুনে পুড়ছে এখানকার উর্বর মাটি। নিয়ম-কানুনেন তোয়াক্কা না করে দো-ফসলী ও তিন-ফসলী জমির উপর গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০টি ইট ভাটা। আর এতে জমিতে ফসল না ফলায় বিপর্যয়ে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। সৈয়দপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশি ২২টি ইটভাটা রয়েছে কামারপুকুর ইউনিয়নে। সেখানকার কৃষক রফিকুল ইসলাম, সুশীল চন্দ্র সরকার, আজিজার রহমান ও রশিদুল ইসলাম জানান, কামারপুকুরে বেশিরভাগ ইটভাটাগুলো গড়ে ওঠেছে উর্বর আবাদী দো-ফসলী ও তিন-ফসলা উর্বর জমিতে। ইট তৈরির জন্য ভাটা মালিকরা নামমাত্র টাকা দিয়ে দুই তিন ফিট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দুই তিন ফিট মাটি কাটার কথা বললেও অনেক সময় চার পাঁচ ফিট মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। মূলত তারা জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। যা দিয়ে ইট তৈরি করে তারা আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। আর ওইসব জমিতে চার পাঁচ বছর কোন ফসল ফলছে না। কৃষকরা অভিযোগ করেন, কিছু কৃষক ইট ভাটায় জমি দেয়ার কারণে জমিগুলো ডোবায় পরিণত হয়েছে। এর ফলে পাশের উর্বর জমিগুলো ভেঙে পড়ছে ওই ডোবায়। ফলে বাধ্য হচ্ছে অন্য কৃষকরা ইটভাটায় জমি দিতে। অনেকে মনে করেন, এটা ইটভাটা মালিকদের জমি নেয়ার কৌশল। এতে করে লাভবান হচ্ছেন ইটভাটার মালিক ও দালাল চক্র। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব ইটভাটায় মাটি নেই। সেবব ইটভাটার মালিক ট্রাক্টরের সাহায্যে দূরবর্তী এলাকার আবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় আনছেন। এতে করে ওইসব এলাকারও আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং বিরতিহীনভাবে ট্রাক্টর চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে এলাকার লোকজন এসব মাটিবাহী ট্রাক্টরগুলো আটক করলেও দালালচক্রের মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে যথা নিয়মে চলাচল করে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোমায়রা মন্ডল জানান, প্রায় সবগুলোই ইটভাটা আবাদি জমির উপর বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদন সমৃদ্ধ উর্বর কৃষি জমির মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এছাড়া ইট ভাটার ফলে ধোঁয়ায় গাছে ফল ধরছে না। পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। এতে করে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু ছালেহ মো. মুসা জঙ্গীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন