কাজী সিরাজুল ইসলাম : নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে অভিযান চললেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। লঘু সাজার কারণে নকল-ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই থামছে না। সারা দেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মানহীন পণ্য। এর ফলে ক্রেতারা যেমন প্রতারিত হচ্ছে, তেমনি হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
এমনিতেই মানহীন কিংবা ভেজাল পণ্য উৎপাদকদের শাস্তি খুব একটা হয় না। এ ছাড়া পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতারও অভাব আছে। দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর থাকলেও তার তৎপরতাও সীমিত। ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান অনেকাংশেই রাজধানীতেই সীমিত। ঢাকার বাইরে তৎপরতা নেই বললেই চলে। ভেজাল বন্ধে নকল ভেজাল অপরাধের দ- বাড়াতে হবে।
খাদ্যে ভেজাল এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে কোনো খাদ্যই স্বস্তির সঙ্গে খাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বাজারে যেসব জুস ও পানীয় বিক্রি হয় তার সিংহ ভাগই মানসম্মত নয়। নামিদামি কোম্পানির তৈরি করা মিষ্টি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজারে যে ঘি, বাটার অয়েল ও ভোজ্যতেল বিক্রি হয় তার সিংহ ভাগই নকল-ভেজাল। শিশুখাদ্যের মানও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দুধে ভেজালের রাজত্ব বিরাজ করছে যুগ যুগ ধরে। এখন যেসব প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই মানসম্মত নয়। আম, কলা, আপেল, খেজুর ইত্যাদি ফল খেতে ভয় পায় এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো ফল পুষ্টির বদলে মানুষকে আরও রোগাক্রান্ত করছে।
আমি একাধিকবার লিখেছি, খাদ্যে নকল-ভেজাল বন্ধে সরকারি উদ্যোগ বা মোবাইল কোর্টের অভিযান যেমন অব্যাহত রাখতে হবে তেমনি এ জন্য গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলে এ আপদ থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত এ আপদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই।
খাদ্যপণ্যে ভেজাল জনস্বাস্থ্যের জন্য এ মুহূর্তে এক নম্বর হুমকি। এ হুমকি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সামাজিক সচেতনতার অভাবে তা কোনো কাজে আসছে না। খাদ্যে ভেজাল এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে কোনো খাদ্যই স্বস্তির সঙ্গে খাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে যে জুস বা পানীয় বিক্রি হয় তার সিংহভাগই মানসম্মত নয়। নামিদামি কোম্পানির তৈরি মিষ্টি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজারে যে ঘি, বাটার অয়েল ও ভোজ্যতেল বিক্রি হয় তার সিংহভাগই নকল ভেজাল। শিশু খাদ্যের মানও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দুধে ভেজালের রাজত্ব বিরাজ করছে যুগ যুগ ধরে।
এখন যেসব প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই মানসম্মত নয়। আম, কলা, আপেল, খেজুর ইত্যাদি ফল খেতে ভয় পায় এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো ফল পুষ্টির বদলে মানুষকে আরও রোগাক্রান্ত করছে।
খাদ্য সামগ্রী ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণের খবর ছড়িয়ে পড়ার ফলে দেশের সাধারণ ভোক্তারা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি হাইকোর্ট খাদ্যে ব্যাপক ভেজাল মেশানোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন। হাইকোর্ট তার নির্দেশে বলেছেন, বারবার বলার পরেও ভয়ঙ্কর এই অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। সরকারের ঢিলেঢালা মনিটরিং ব্যবস্থা এবং ভেজালের বিরুদ্ধে আইনের যথার্থ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর প্রবণতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
খাদ্যে নকল ভেজাল বন্ধে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলে এ আপদ থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নকল ভেজালের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারীদের সামাজিকভাবে চিহ্নিত করে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। ভেজাল বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নেবে- আমরা তেমনটিই দেখতে চাই।
কারাদ-ের পাশাপাশি অর্থদ- এমনভাবে বাড়াতে হবে যাতে অপরাধীরা ভয় পায়। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রধানকে পণ্য ভেজাল রোধের দায়িত্বে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশে নকল ভেজালের দৌরাত্ম্য কীভাবে বাড়ছে তার প্রমাণ মেলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিতে যেসব খাদ্যপণ্য পরীক্ষার জন্য যায় তার দুই-পঞ্চমাংশের মধ্যে ভয়াবহ ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিশুখাদ্যেও চলছে যথেচ্ছভাবে ভেজাল। জনস্বার্থে এ ব্যাপারে সরকারকে আইনগত ব্যবস্থা যেমন জোরদার করতে হবে তেমন নকল ও ভেজাল প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোতে লোকবলও বাড়াতে হবে।
জনমানুষের উদ্বেগ ও ভেজালের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে উচ্চ আদালত থেকেও একাধিকবার সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ যে বিশেষ কিছুই হয়নি তার প্রমাণ জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল। সেখানে দোকান থেকে সংগ্রহ করা মিষ্টির সব নমুনাই ভেজাল এবং সয়াবিন তেলের সংগৃহীত নমুনায় ৭৫ শতাংশই ভেজাল পাওয়া গেছে। কমবেশি ভেজাল পাওয়া গেছে সরিষার তেল, লবণ, হলুদের গুঁড়া, মধু, গুড়, বিস্কুট, ডাল, সেমাই, জেলিসহ আরো অনেক খাদ্যপণ্যে। তাহলে মানুষ খাবে কী? জীবনধারণ করবে কিভাবে? সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্য চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। তাই তারা কি শুধু নীতিজ্ঞানহীন কিছু মানুষের অত্যন্ত ক্ষতিকর লোভের শিকার হতেই থাকবে? এর আগেও বিভিন্ন সময় খাদ্য পরীক্ষায় প্রায় একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। খাদ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ডিডিটিসহ কার্বামেড, কার্বাইড, ক্রোমিয়াম, অ্যালড্রিন, আর্সেনিক, ফরমালিনের মতো অনেক বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এগুলো মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি, লিভার ও কিডনি অকেজো করে দেওয়াসহ বহু প্রাণঘাতী রোগের কারণ হচ্ছে।
কোন পণ্যে কী ভেজাল তা এত বেশি আলোচিত যে সাধারণ মানুষেরও মুখস্থ হয়ে গেছে। যেমন মাছে ও দুধে মেশানো হয় ফরমালিন। ফলমূল পাকাতে ব্যবহৃত হয় কার্বাইড। মুড়িতে ইউরিয়া, শুঁটকি তৈরিতে ডিডিটি, গুঁড়া মসলা, চানাচুর ও রঙিন খাবারে ব্যবহার করা হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কাপড়ের রং, সবজিতে সরাসরি কীটনাশক স্প্রে করা হয় এবং কীটনাশক সক্রিয় থাকতেই সেগুলো বাজারজাত করা হয়। মুরগির খাবার বা পোলট্রি ফিড তৈরি হয় ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে। তাতে থাকে ক্রোমিয়ামসহ নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। মুরগির মাংসের মাধ্যমে সেগুলো মানবদেহে চলে আসে। থাকে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি। এমনি আরো কত কী! সাধারণ মানুষের এ ক্ষেত্রে করার কী আছে? বাঁচতে হলে তাদের এসব পণ্যই কিনে খেতে হবে। এসব খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জনমানুষের উদ্বেগ ও ভেজালের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে উচ্চ আদালত থেকেও একাধিকবার সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ যে বিশেষ কিছুই হয়নি তার প্রমাণ জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল। সেখানে দোকান থেকে সংগ্রহ করা মিষ্টির সব নমুনাই ভেজাল এবং সয়াবিন তেলের সংগৃহীত নমুনায় ৭৫ শতাংশই ভেজাল পাওয়া গেছে। কমবেশি ভেজাল পাওয়া গেছে সরিষার তেল, লবণ, হলুদের গুঁড়া, মধু, গুড়, বিস্কুট, ডাল, সেমাই, জেলিসহ আরো অনেক খাদ্যপণ্যে। তাহলে মানুষ খাবে কী? জীবনধারণ করবে কিভাবে? সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্য চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। তাই তারা কি শুধু নীতিজ্ঞানহীন কিছু মানুষের অত্যন্ত ক্ষতিকর লোভের শিকার হতেই থাকবে? এর আগেও বিভিন্ন সময় খাদ্য পরীক্ষায় প্রায় একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। খাদ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ডিডিটিসহ কার্বামেড, কার্বাইড, ক্রোমিয়াম, অ্যালড্রিন, আর্সেনিক, ফরমালিনের মতো অনেক বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এগুলো মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি, লিভার ও কিডনি অকেজো করে দেওয়াসহ বহু প্রাণঘাতী রোগের কারণ হচ্ছে।
কোন পণ্যে কী ভেজাল তা এত বেশি আলোচিত যে সাধারণ মানুষেরও মুখস্থ হয়ে গেছে। যেমন মাছে ও দুধে মেশানো হয় ফরমালিন। ফলমূল পাকাতে ব্যবহূত হয় কার্বাইড। মুড়িতে ইউরিয়া, শুঁটকি তৈরিতে ডিডিটি, গুঁড়া মসলা, চানাচুর ও রঙিন খাবারে ব্যবহার করা হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কাপড়ের রং, সবজিতে সরাসরি কীটনাশক স্প্রে করা হয় এবং কীটনাশক সক্রিয় থাকতেই সেগুলো বাজারজাত করা হয়। মুরগির খাবার বা পোলট্রি ফিড তৈরি হয় ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে। তাতে থাকে ক্রোমিয়ামসহ নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। মুরগির মাংসের মাধ্যমে সেগুলো মানবদেহে চলে আসে। থাকে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি। এমনি আরো কত কী! সাধারণ মানুষের এ ক্ষেত্রে করার কী আছে? বাঁচতে হলে তাদের এসব পণ্যই কিনে খেতে হবে। এসব খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
য় লেখক : উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সাবেক সংসদ সদস্য, ফরিদপুর-১
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন