বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

উদ্ভাবন হোক বিশুদ্ধ প্রশংসিত ও পুণ্যের

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রায়হান রাশেদ : প্রযুক্তির ফ্রেমে বন্দি হয়ে আজকের বিশ্বের মানব প্রাণী অনৈতিক মন্দ পাপাচার আবিষ্কারে রেকর্ড গড়ছে। নিজেদেরকে দুশ্চরিত্র ও মন্দ কাজের আইডল বানাচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্ম তাদের রেখে যাওয়া উদ্ভাবন পথে বিচরণ করছে অবলীলায়। নতুন প্রজন্মের এহেন কাজে কেউ প্রশ্ন তুললে উঁচু গলায় গর্ব করে বলে দাদাদের নাম। পরবর্তী জেনারেশন যার কাজ অনুসরণ করবে উদ্ভাবক সেই কাজের মুনাফা পাবে। উদ্ভাবক ঘরে বসে কিংবা কবর দেশে শুয়েই আবিষ্কারের প্রাপ্য পাবে। তার রেখা আসা জীবন চরিত্রের অনুগামী ব্যক্তির একটা বড় অংশ সে সব সময় পাবে। তার রেখে আসা পাপ-পুণ্যের যথাযথ ফলাফল তার জীবনের হিসাব খাতায় লিপিবদ্ধ হবে।
ইসলাম বলেÑ জীবন হোক নববি আদর্শে মহিমাময়। ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আইকন অনুসারী হও পুণ্য কাজের। সবার অন্তরে বেঁচে থাকো মুত্তাকীরূপে। তবে তোমার যাপিত জীবন সাফল্য। মৃত্যুর পরেও কবরে আরামে শুয়ে শুয়ে পাবে রেখে যাওয়া পুণ্য কাজের প্রাপ্তি। আল্লাহ বলেন- “এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর”। ফুরকান ৭৪।
ইবরাহিম নাখয়ি বলেন- ‘এই দোআয় নিজের জন্য কোনো সরদারি ও নেতৃত্ব প্রার্থনা করা উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য এই যে, আমাদেরকে এরূপ যোগ্য করে দেন, যাতে মানুষ ধর্ম ও আমলে আমাদের অনুসরণ করে এবং আমাদের জ্ঞান ও আমল দ্বারা তারা উপকৃত হয়। ফলে আমরা এর সওয়াব পাব’।
দুনিয়াতে ভালো কাজ রেখে যেতে পারলে পরকালে মিলবে অফুরন্ত সওয়াবের ভা-ার। সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে কবর দেশ। ভরপুর হবে পুণ্যের উজ্জ্বল ডায়েরি।
কালের চাকায় ভর করে পৃথিবী এখন নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারে রত। প্রযুক্তি উৎকর্ষ সাধনে মহাব্যস্ত। প্রতিযোগিতার মাঠে নামছে উদ্ভাবকরা থালাবাসন লয়ে। আবিষ্কারের কীর্তিতে মহাউৎসব, আনন্দ, আহ্লাদে সময় যাপন করে উদ্ভাবকরা। নিজের প্রসূত আবিষ্কারকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করে প্রচার মাধ্যম অভিনয়ের মঞ্চ আরো যতসব। জনপ্রিয় করে তুলতে সুযোগ-সুবিধা স্পেশাল অফার নৈতিক থেকে অনৈতিক কাজের বেশি উপকরণ তুলে ধরে খুব তোড়জোড়ের সঙ্গে।
মন্দ কাজ উদ্ভাবনে কোনো প্রাপ্তি নেই। আখেরে কোনো সফলতা নেই। আছে যাতনা লাঞ্চনা অপদস্ততা। মন্দ পাপ কাজের উদ্ভাবক তার কাজের একটা পাপের অংশ সে সব সময় পাবে। দুনিয়ার জীবন এবং আখেরাতের জীবনেও। প্রত্যেক ভালো কাজের উদ্ভাবক তার কাজের প্রাপ্তি সওয়াব সে সব জীবনে পাবে। পৃথিবীতে আগত যত মানুষ তার রেখে যাওয়া কাজ করবে সে তার একটা সওয়াবের অংশ পেতে থাকবে। তার আমলের খাতা সওয়াবে পূর্ণ হতে থাকবে। রাসূল (সা.) বলেন- “যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো ভালো নিয়মের প্রচলন করে সে তার বিনিময় পাবে। এবং তারপরে যারা সে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে তাদের বিনিময়ও পাবে। কিন্তু এতে তাদের বিনিময় কিছুমাত্র কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ নিয়ম চালু করবে তার ওপর সে গোনাহের বোঝা চেপে বসবে এবং তারপরে যারা সে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে তাদের বোঝাও তার ওপর গিয়ে পড়বে। কিন্তু তাদের বোঝা কিছু মাত্র কমবে না।” বোখারি ১০১৭।
মানুষ তার জীবনের যে অংশ পৃথিবীর বুকে রেখে যায় সে যদি সৎ, নিষ্ঠাবান হয় তাহলে তার জীবন স্বার্থক সফল। সু সন্তানের মাধ্যমে সে সওয়াবের অফুরান ঝুলির মালিক হতে থাকবে দু’জাহানে। নবিজি (সা.) বলেছেন- “কোনো মানুষ যখন মারা যায়, তিনটি সূত্র ছাড়া সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। অব্যাহত সূত্র তিনটি হলো, সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম ও তার জন্যে দোআ করে এমন নেক সন্তান।” মুসলিম ১৬৩১।
পৃথিবীর বুকে প্রথম রক্তপাত ও মানুষ খুন করে আদম সন্তান কাবিল। তার মাধ্যমে খুনের উদ্ভব হয়। সেই আদি কাল থেকে আরম্ভ করে দুনিয়া ধ্বংসঅবধি পৃথিবীতে যত রক্তপাত খুন হবে তার সওয়াব কাবিল পেতে থাকবে। ঠিক তদ্রুপ পৃথিবীতে প্রত্যেক আবিষ্কৃত ভালো-মন্দ, অন্যায়, চরিত্রহীনা যত ধরনের কাজ আবিষ্কার হয়েছে এর সঠিক প্রাপ্তি ও ফল আবিষ্কারক পাবে। ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত- নবি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তিই অন্যায়ভাবে নিহত হবে তার রক্তপাতের দায়িত্ব হযরত আদম (আ.)-এর প্রথম সন্তানের (কাবিল) উপর পড়বে। কারণ সেই প্রথম ব্যক্তি যে হত্যার নিয়ম চালু করেছে।” বোখারি ৭৩২১।
সুতরাং আমাদের চিন্তা-ভাবনা, আবিষ্কার উদ্ভাবন রেখে যাওয়া স্মৃতিসৌধ, ধন-সম্পত্তি সব কিছু হোক পরিশুদ্ধ। নতুন প্রজন্মের সভ্যতা ভব্যতার পাঠ।
য় লেখক : সমাজ গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন