আবদুল আউয়াল ঠাকুর : দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যারা স্থিতিশীলতার কথা বলছেন তারা ঠিক, নাকি যারা মনে করছেন কবরের শান্তি বিরাজ করছে তারা ঠিক? রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে এধরনের বিতর্ক থাকলেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্যের দোর্দ- প্রতাপ নিয়ে কোন মহলেই বিতর্ক নেই। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এ ব্যাপারে একমত যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে অপরাধ প্রবণতা ঢুকে পড়েছে। এই শ্রেণীর সদস্যের সংখ্যা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। তবে তাদের ভূমিকা যে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্টরা একমত। এর কারণ নিয়েও নানা কথা রয়েছে। বাস্তবতা এই যে, কতিপয় পুলিশ সদস্যের অপরাধ প্রবণতা দিন দিনই বাড়ছে। একের পর এক অলোচিত ঘটনার পরও তারা নিজেদের অপরাধ প্রবণতা থেকে নিবৃত্ত করতে পারছে না। এক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি থানায় কমবেশি ৫০টি খাত থেকে বখরা আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর বেশিরভাগ থানার অফিসার ইনচার্জ ও ইন্সেপেক্টরের মাসিক অবৈধ আয় ১৫ লাখ টাকার উপরে। পুলিশের আলোচ্য প্রবণতার মধ্যে রয়েছে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, মামলা তদন্তে ঘুষ নেয়া, গ্রেফতার বা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া, জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ইত্যাদি। এর পাশাপাশি ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক বেচাকেনা, স্বর্ণ চোরাচালান, ধর্ষণসহ বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। এক মামলার আসামি ভিন্œ মামলায় চালানসহ আরো কিছু ভিন্ন পন্থায় টাকা আয়ের অভিযোগও রয়েছে কোন কোন সদস্যের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, একই থানায় কোন কোন পুলিশ সদস্য চাকরি বিধি ভেঙ্গে থানা এলাকায় ব্যবসা খুলে বসেছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে হাউজিং ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়েছে, তারা শুধু টাকা নেয়ই না দেয়ও। চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে নিয়োগ-বদলি, মিশনে যাওয়া, পদোন্নতিসহ চাকরি রক্ষা, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন খাতে তারা টাকা-পয়সা খরচ করছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় পুলিশের সাবেক একজন উপ-মহাপরিদর্শক একটি দৈনিককে বলেছেন, এটা অতীতে কখনো ছিল না। ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনীর সুনাম রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এসব বিষয় গুরুত্বের সাথে আমলে নেয়া। সরকারের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এএইচএম এরশাদ সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, এখন পুলিশ হতে ১০ লাখ আর স্কুল শিক্ষক হতে ৫ লাখ টাকা লাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্লাহ বলেছেন, শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ পুলিশ সদস্যের কর্মকা-ের কারণে গোটা পুলিশ বিভাগের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
দেশ পরিচালনায় অইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোন সুয়োগ নেই। একটি স্বাধীন দেশে জনোপযোগী প্রশাসন গড়ে তুলতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের ভূমিকাকেই অগ্রগণ্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এই বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যের আচরণ কতটা জাতীয় স্বার্থের অনুবর্তী সেদিকটিই মূলত ভাববার বিষয়। সময়ে হত্যা-গুমসহ যেসব গুরুতর অভিযোগ উঠছে তা নিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চেয়ে জনগণ সফলকাম হয়েছে এমন প্রমাণ নেই তা হয়তো বলা সঠিক হবে না তবে এই সফলতার মাত্রাও প্রশ্নবিদ্ধ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা সত্যি যে, আইন-শৃঙ্খলা বহিনীর পোশাকে রাস্তা থেকে, বাসা-বাড়ি থেকে, এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের বাসা থেকে নিয়ে লোক ধরে নিয়ে যাওয়ার যে সব ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উত্তরটা ছিল একই রকম। বলা হতো, না আমরা এটা করিনি, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত চলছে। এরপর হয়তো দেখা যেত খাল বা নদীর কিনারে ঝোঁপেঝাড়ে, নর্দমা, ড্রেনে লাশ পড়ে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তাও না। আজ পর্যন্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ইলিয়াস আলীসহ অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি। জীবন্ত মানুষের এভাবে হাওয়া হয়ে যাওয়া এবং সংশ্লিষ্টদের নীরবতা সাধারণ মানুষের কাছে যে নির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দেয় সেকথাই এখন সবকিছু ছাপিয়ে উঠছে বা উঠতে শুরু করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দায়িত্বশীলরা বলেছেন, পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। এই যে অধিকার তা এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে সে আলোচনাও উঠে এসেছে সম্প্রতি কোন কোন ঘটনায়। গত কিছুদিনে এই অধিকার এবং ক্ষমতার ব্যবহার যে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সে কথাই বলাই বাহুল্য পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, কে কখন কোথায় হেনস্থা হবে তা বলা যাচ্ছে না। সাদা পোশাকে পুলিশের টহল নিষিদ্ধ করা হলেও রাতে তারা যথারীতি বহাল রয়েছে। মাত্র কদিন আগে বলা হলো, শ্যোন এ্যারেস্ট করা যাবে না। অথচ ৭০টি মামলায় জামিন পাওয়ার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোমা হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামির সূত্র ধরে দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শ্যোন এ্যারেস্ট করা হলো। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে একথা বলাই যেতে পারে, প্রকাশ্য নির্দেশ আর গোপন কোন নির্দেশের ব্যাপার হয়তো রয়েছে। এমন কোন অধিকতর ক্ষমতাধর কর্তৃপক্ষ হয়তো রয়েছ যে প্রকাশ্য কর্তৃপক্ষের তোয়াক্কা করে না।
আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুর্বলকে রক্ষা করা। বর্তমান বাংলাদেশে আইন দুর্বলকে রক্ষা নয় বরং দুর্বলকে আক্রান্ত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করা নিয়ে এত তুলকালামকা- ঘটেছিল সে সম্পর্কে দায়িত্বশীল মহল থেকে বলা হয়েছিল, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া অপরাধ। একথা আইনগতভাবে ঠিক। সংগত প্রশ্ন হচ্ছে, এই বাধার আওতা বা সীমানা কতটা? ফুটওভারব্রিজ দিয়ে না চলার অপরাধে যখন পথচারিকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হলো তখন বলা হলো, তিনি কাজে বাধা দিচ্ছিলেন। বাধা দেয়ার কারণে কি শারীরিকভাবে হেনস্থা করার বিধান আইনসম্মত? বিষয়টি হয়তো সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধ বা এধরনের ঘটনা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে আলোচনা চলছে। নতুন আলোচনা অর্থহীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে একজন পুুরুষ পুলিশ যখন মাদকের অভিযোগে তল্লাশীর কথা বলেন তখন তো ভাববার রয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি না শালীনতা রক্ষা জরুরি। এসব ক্ষেত্রে নাগরিকদের কিই-বা করণীয় রয়েছে! পুলিশের কাজে সহযোগিতা করতে দেয়ার অর্থ কি তা নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। আর সহযোগিতা না করার অর্থ যা তাতো পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এ দেশে আগে কোন পুলিশ ছিল না। তাদের কোন ভূমিকাও ছিল না। রাজধানীর ফুটপাত, অলিগলি সর্বত্রই এখন পুলিশ পোস্ট রয়েছে। যেকোন যাত্রী ফুটপাত দিয়ে হেঁটে গেলে তা যদি কোন পুলিশের মনে হয়, এটা সহযোগিতা নয় সেক্ষেত্রে করণীয় কি? যখন কোন বিশেষ অবস্থা হয় তখন দেখা যায়, বাসস্টপেজ বা মধ্যবর্তী পথে যারা নেমে পড়েন তাদের অনেকেই বিশেষ করে যারা সাধারণ পোশাকে থাকেন তাদের ভাগ্যেই ঘটে কারাবাস। মুক্তি পেতে নানা প্রসঙ্গ রয়েছে। এসবই হচ্ছে আইনের আওতায়। এই যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব কার্যত জননিরাপত্তার জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্যই এর সাথে সকলে জড়িত নয় তবে যারা জড়িত তারা যে একেবারে ফেলনা সেকথাও সঠিক নয়। সম্প্রতি বিবিসির সাথে আলোচনায় বিভিন্ন জন এর বর্ণনা করেছেন। কিভাবে তারা এইবিশেষ শ্রেণীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাস্তবতা তো এটাই যে, সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তার জন্য থানা পুলিশ করতেই ভয় পায়। আইনগত বাধ্যবাধকতা ছাড়া ওমুখী কেউ হতে চায় না। এটা নাগরিক নিরাপত্তার বিবেচনায় ইতিবাচক নয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, গুরুদ-ের অপরাধ হলেও অনেকক্ষেত্রে শাস্তি হয় লঘু। বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাকে অনেক সময় জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এদিকে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ডিএমপিএস শাখায় যেসব অভিযোগ নথিভুক্ত হয় তা প্রকৃত অপরাধের চেয়ে কম। কাগজে-কলমে অভিযোগের যে সংখ্যা দেখানো হয় প্রকৃত অভিযোগ তার চেয়ে অনেক বেশি। অনেক অভিযোগ সদর দফতর পর্যন্ত আসে না।
একশ্রেণীর পুলিশের দোর্দ- প্রতাপের পেছনে যে, কোন না কোন আনুকূল্য কাজ করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে অনৈতিক এবং নানা ধরনের অপকর্মের খবর বেরিয়েছে। এরপর দেখা গেছে, সাজার পরিবর্তে তাদের সুবিধা প্রাপ্তিই ঘটেছে। এই প্রবণতার পেছনে যে রাজনৈতিক প্রশ্রয় কাজ করে আসছে তাতে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই। এর দ্বিমাত্রিক ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথমত, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্রধরে সরকার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে পুলিশের ওপর অধিক নির্ভর হওয়ায় কোন না কোনভাবে এক শ্রেণীর পুলিশের মনে হতে পারে তারাই ক্ষমতার মূল উৎস। সম্প্রতি কোন কোন ঘটনাকে কেন্দ্রকরে পুলিশের কেউ কেউ নিজেকে রাজা দাবি করার নেপথ্য কাহিনী মূলত এটাই। দ্বিতীয়ত, পুলিশ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম। বিশেষ করে ঘুষ লেনদেনের কথাও প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে। দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পেলে দুর্নীতির প্রবণতা এবং বেতোয়াক্কা ও বেপরোয়াভাব বৃদ্ধি পাবে এটাই তো স্বাভাবিক। এই প্রবণতা কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে তার একটি প্রাসঙ্গিক উদাহরণ তুলে ধরা হলো- মিরপুর এলাকার একটি নামকরা স্কুলের সামনে থেকে বিকেলে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে একটি প্রাইভেট কার হাওয়া হয়ে গেল। মালিক নিয়মানুযায়ী থানায় জিডি করলেন। সকালে একটি নাম্বার থেকে ফোন এলো, আপনার গাড়িটি আমাদের কাছে আছে। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিলে বিবেল ৩ টার মধ্যে পাওয়া যাবে নয়তো ভেঙে বিক্রি করে দেব। মালিক সম্ভাব্য সকল জায়গায় ধরনা দিলেন। প্রকারান্তরে তারা যা বললেন তার অর্থ হচ্ছে আপস করাই ভালো। ছিনতাইকারীরাও অনড় ছিল। একই নাম্বার থেকে বার বার ফোন করে। শেষমেশ নির্দিষ্ট অংকে ফয়সালা করতে হয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি তাদের ব্যবসা। এ থেকে তারা পাবে মাত্র ১০ হাজার টাকা। বাকিটা বণ্টন হবে। তাদের কথা অনুযায়ী, চার ভাগে এ টাকা দিতে হয়েছে। গাড়ি উদ্ধার হওয়ার পরপরই নির্দিষ্ট থানার কর্মকর্তা মালিকের কাছে গাড়ির খবর জানতে চেয়ে ফোন করেন। সব শুনে তিনি বলেন, জিডিটা একটু পরিবর্তন করতে হবে। সে অনুযায়ী মালিক তাই করেছেন। এ ধরনের ঘটনা অসংখ্য। কিছুদিন আগে এক ব্যবসায়ীর সন্তান উদ্ধারের বেলায়ও এমনকি হয়েছিল। তিনি মূলত মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করেই তার সন্তানকে উদ্ধার করেন। যদিও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করেছিল তার সফলতা হিসেবে। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পুলিশকে অধিকতর ব্যবহারের ফলে সামাজিক অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে।
বর্তমানে আরো যুক্ত হয়েছে পুলিশ সোর্সের হয়রানি। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত কেউই এ ধরনের প্রবণতার বাইরে নয় এখন। বাবুলের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাও নানামাত্রিক আলোচনার সূত্রপাত করেছে। এ ঘটনায় সোর্সের ব্যবহার হলেও মূল বিষয় ভিন্ন। পুলিশকে সোর্স নিয়েই কাজ করতে হয়। এই সোর্স ভালো কি মন্দ সে অলোচনায় না গিয়েও বলা যায়, চাঁদা আদায় বা অনৈতিক কাজে সোর্সের ব্যহারের কোন কারণ নেই। কেউ সম্মানের ভয়ে, কেউ জীবনের ভয়ে, কেউ সম্পদরক্ষার তাগিদে অথবা অন্য কোন কারণে সমাজের প্রায় সকল শ্রেণীই এই শ্রেণীর আচরণে ক্ষুব্ধ। চা বিক্রেতা বাবুল এবং রিকশাশ্রমিকের মৃত্যু আরো একটি প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। এটা সবারই জানা, রাস্তার অবৈধ ব্যবসায়ীরা নিয়মিত চাঁদা দিয়েই তাদের এই বেঁচে থাকার কাজটি চালিয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ঢাকার রাস্তায় যেসব রিকশা চলছে তা মূলত চাঁদা দিয়েই চলছে। এ হার কত তা নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। নগরীতে যারা নিয়মিত চলাচল করেন তারা প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ করেন, ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা অবস্থায়ই এসব চালক রাস্তার দায়িত্বশীলদের হাতে কিছু গুঁজে দেয়। তাহলে আলোচ্য ক্ষেত্রে এমন কি ঘটেছে যে চাঁদার জন্য খুদে ব্যবসায়ী বা রিকশাচালককে প্রাণ দিতে হলো। খুদে ব্যবসায়ী বলেছে, তার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ চালানোর মত টাকা নেই তাই চাঁদা দেয়ার সামর্থ্য সে হারিয়ে ফেলেছে। অনুরূপ ঘটনা রিকশাচালকের বেলায়ও হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীলরা স্বীকার না করলেও এটাই সত্যি যে, বিনিয়োগ বন্ধ্যত্ব এবং নতুন পে-স্কেলের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনে নতুন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কথিত উন্নয়ন ও তার সাথে দুর্নীতির সম্পর্ক থাকায় কারো কারো হাতে কাঁচা পয়সা থাকলেও সাধারণের অবস্থা করুণ। সরকারি হিসেবে আয় উন্নতির কথা বলা হলেও বাস্তবে বাড়ছে বৈষম্য। বিনিয়োগ না থাকায় আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে গেড়ে বসেছে চোরাচালানিরা। ফলে সাধারণ মানুষ অর্থনৈকিতকভাবেও নিষ্পেষিত হচ্ছে। এই বাস্তবতার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে বাবুল বা রিকশাচালকের মৃত্যু। মূলত এ ঘটনা গোটা দেশের সাধারাণ মানুষের অর্থনৈতিক চালচিত্রের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
এক শ্রেণীর পুলিশের ভূমিকা বা অপকর্মের কারণে গোটা দেশ যখন আতঙ্কপুরীতে পরিণত হয়েছে তখন সরকারের কোন কোন মহল মনে করছে, দেশে যেকোন সময়ের চেয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দেশের পরিস্থিতি ও বিনিয়োগ বাস্তবতা তৈরি করতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল যখন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, সরকারে ভেতরেও যখন নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে তখন প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হচ্ছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হয়তো কারাগারে যেতে হবে। যেসব মামলার সূত্র ধরে একথা বলা হচ্ছে সেগুলো মূলত ১/১১-এর সময়কার। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐ সরকারের করা মিথ্যা মামলাগুলো ক্ষমতাসীনরা প্রত্যাহার করলেও সেসব মামলাতেই খালেদা জিয়াকে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। জেল-জুলুম নিয়ে যে বেগম খালেদা জিয়া ভাবেন না সেকথা তিনি শুধু বলেনইনি প্রমাণও করেছেন। ১/১১-এর সময়ে তিনি দেশ ছাড়তে চাননি। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পরও অনেকে অনেক কথা বলেছেন। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই তিনি চলে এসেছেন। মানুষ আজ সন্ত্রস্ত তাতে কোন সন্দেহ নেই। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পৌর নির্বাচনে অনিয়ম সত্ত্বেও ব্যাপক কিছু ঘটেনি একথাও সত্যি। সংসদে সরকারি দলের নানাজন বেগম জিয়াকে নিয়ে নানা কথা বলছেন। এ সব প্রমাণ করে না দেশ স্বাভাবিকভাবে চলছে। জননিরাপত্তার ধারণা থেকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিবেচনা করতে হবে। সংগত বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, সবকিছু যখন ঠিকঠাক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে তখন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ভয় কিসের?
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন