আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের গহিরার চরে চলছে শুঁটকি মৌসুম। ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ মৌসুম চলবে আগামী মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপকূলের জেলেরা। জানা যায়, উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুরের গহিরার চরের দেড় কিলোমিটারজুড়ে চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। এতে ২০ জনের বেশি ব্যবসায়ীর তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন শত শত শ্রমিক। তবে সাগর থেকে মাছ আহরণ ও শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাঁচ শতাধিক পরিবারের লোকজন। গহিরার চর ঘুরে ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রায়পুরের উঠান মাঝির ঘাট থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় শুঁটকি শুকানোর কাজ চলছে। এ কাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশু শ্রমিকরাও কাজ করছে। সাধারণত লইট্যা, চিংড়ি, ছুরি, চান্দা, পারসে, কাটামাছ ও হুন্দারাসহ বিভিন্ন প্রকার মাছের শুঁটকি প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোন পর্যায়ে লবণ কিংবা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। তাই এ শুঁটকির চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি। গহিরা এলাকার জেলে মাহবুব (২৮) বলেন, সাগরে ট্রলার করে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েন জেলেরা। প্রতি ট্রলারে থাকে ছয় থেকে সাতজন জেলে। উপকূল থেকে দুই-তিন ঘণ্টা ট্রলারে চালিয়ে সমুদ্র মোহনায় মাছ ধরেন তারা। মাছ ধরতে ব্যবহৃত হয় ভাসান ও টংজাল। মাছ ধরার পর উপকূলে ফিরে আসেন তারা। দিনের মাছ দিনে নিয়ে আসলে বরফ নেয়ার দরকার হয় না। তবে ভাসান জালের ক্ষেত্রে বরফ নিয়ে যেতে হয়। কারণ তারা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল (৪২) জানান, আগে থেকেই মাছ শুকানোর চাতাল তৈরি করে নেট দিয়ে রাখা হয়। লইট্যা মাছ শুকানোর জন্য বাঁশের বেড়া তৈরি করা হয়। লইট্যা, ছুরিসহ বড় বড় মাছগুলো আলাদা করে বাঁশের বেড়ায় শুকাতে দেওয়া হয়। বড় মাছগুলো শুকাতে সময় লাগলেও ছোট মাছগুলো দুই-তিনদিনে শুকিয়ে যায়। ভালোভাবে শুকানোর পর বিভিন্ন জাতের মাছগুলো আলাদা করে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর শুঁটকিগুলো বস্তায় ভরে বাজারজাতকরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। তিনি আরো বলেন, শুকানো শুঁটকিগুলো পাইকারে বিক্রি করি। মাছের প্রকারভেদে প্রতি কেজি দুই থেকে তিনশ আর ছয় থেকে সাতশ টাকা দরে। এতে লাভ হয় দিগুণ। নারী শ্রমিক মোমেনা খাতুন (৫৫) বলেন, এলাকায় আর কোনো কাজ নেই। তাই সংসারের খরচ চালাতে এখানে দৈনিক দেড়শ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। এলাকার বহু মানুষ এ কাজে জড়িয়ে পড়ায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এলাকায় সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ হুমায়ন মোরশেদ বলেন, আনোয়ারা উপকূলে শুঁটকি শুকিয়ে অনেকে লাভবান হচ্ছেন। তারা যাতে নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন