বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চুয়াডাঙ্গা-দর্শনার ১৮ কি.মি. সড়ক এখন মরণফাঁদ

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : বিভিন্ন স্থানে বিপজ্জনক বাঁক, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই গাড়ির বেপরোয়া চলাচল, সড়কের বিভিন্ন স্থানে সতর্কীকরণ ট্রাফিক সিগনাল না থাকা ও সেইসাথে হাজার হাজার অবৈধযানের অবাধ চলাচলের কারণে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা ভায়া দামুড়হুদা সড়কপথে মৃত্যুর মিছিলে লাশের সংখ্যা বাড়ছেই। গত এক বছরেই এ রুটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে নারী, শিশু, পুলিশ ও কারারক্ষীসহ অন্তত ১৭ জন। আহত হয়েছে শতাধিক। ক্ষতিসাধন হয়েছে যানবাহনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদের। জানা গেছে, নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলার চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা ভায়া দামুড়হুদা ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিপদজনক বাঁক, সড়কের পাশে হাটবাজার, সতর্কীকরণ ট্রাফিক সিগনাল না থাকা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই করে অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালনা, মাদকাসক্ত মোটরসাইকেল চালক, অদক্ষ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ চালক দ্বারা চালিত হাজার হাজার অবৈধযানের অবাধ চলাচলই এ সড়কে দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে গত এক বছরে সড়কের বিপদজনক বাঁকসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী, শিশু, পুলিশ ও কারারক্ষীসহ অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। সেইসাথে ক্ষতিসাধন হয়েছে বেশ কয়েকটি যানবাহনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদের। সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি জয়রামপুর চায়ের দোকান মোড়ে দুইটি যাত্রীবাহী কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষে উভয় গাড়ির চালক, হেলপার ও যাত্রীসহ মোট ৪জনের মৃত্যু হয়। সময় নারী ও শিশুসহ আহত হয় ১১ জন। ২ মার্চ লোকনাথপুর পাগলাদহ বাঁকে ট্রাকের চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। ১৭ জুন দর্শনার মা ও শিশু হাসপাতালের বাঁকে তেলবাহী ট্যাঙ্কলরির সাইড দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে ২০যাত্রী আহত হয়। ৩ অক্টোবর কোষাঘাটা বাঁকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নুরুজ্জামান (৩০) নামের এক কারারক্ষীর মৃত্যু হয়। ১০ নভেম্বর কোষাঘাটা বাঁকে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী জি এম ছাইদুর (৩৮) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ ২৩ ডিসেম্বর  জয়রামপুর শেখপাড়া বাঁকে পাথরবোঝাই ১০চাকার একটি ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ একই পরিবারের ৩ জনসহ মোট ৪ জন নিহত হয়। এসময় আহত হয় আরোও ৬ জন। এছাড়াও পুলিশ লাইনের সামনে, লোকনাথপুর পেট্রল পাম্পের সামনে, জয়রামপুর কাঁঠালতলা ও দর্শনা ফায়ার সার্ভিসের সামনে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ট্রাক্টর, আলমসাধু ও করিমনের ধাক্কায় এক শিশুসহ মোট ৪ জনের মুত্যু হয়েছে। সেইসাথে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের যানবাহনের ক্ষতিসাধনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব যানবাহনের মালিকরা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এ সড়কে জেলখানার সামনে, কোষাঘাটা মাদরাসার সামনে, ফকিরপাড়া, জয়রামপুর শেখ পাড়া ও চায়ের দোকান, লোকনাথপুর পাগলাদহ থেকে ফায়ার সার্ভিসের মাঝে, দর্শনার হঠাৎপাড়া থেকে মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে পর্যন্ত মোট ৭টি বিপদজনক বাঁক রয়েছে। রাস্তার পাশে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বেশ কিছু অবৈধ দোকানপাট, লোকনাথপুর থেকে দর্শনা পর্যন্ত রাস্তার পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বাড়িঘর, দামুড়হুদা সদরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কাঁচাবাজার, ডুগডুগি পশুহাট ও কাঁচাবাজার, জয়রামপুরের কাঁঠাল তলায় রাস্তার পাশে কাঠের গুঁড়ির স্তুপ দেখা গেছে। সেইসাথে বিভিন্ন স্থানের বাঁকগুলির রাস্তার দু’পাশে ঝোপ-জঙ্গলসহ অবৈধ বাড়িঘর। কোন দিক থেকে যানবাহন আসলে এসবের আড়ালে থাকায় সহজে দেখা যায় না। সড়কের বেশিরভাগ স্থানে কোন ধরনের সতর্কীকরণ ট্রাফিক সিগনাল যেমন, সামনে বাজার, পুল, বিদ্যালয়, রাস্তার বাঁক, ক্রসিং রোডসহ কোথাও মানুষজনের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং, স্পিড ব্রেকার বা বাঁকে হলুদ-কালো রঙের ডোরাকাটা খুঁটির কোন অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। কোন সময় এসমস্ত স্থাপন করা হয়ে থাকলেও সড়ক বিভাগের নজরদারির অভাবে এসবের বেশিরভাগই চুরি বা নষ্ট হয়ে বর্তমানে তার উপস্থিতি চোখে পড়ে না। রাস্তার সাথে বেশ কিছু ইটভাটার অবস্থানের কারণে সারা বছরই এ সড়ক দিয়ে ইট, কাঠ, মাটি, বালি বোঝাই ট্রাক্টর, পাওয়ারট্রলি, লাটাহাম্বার যাতায়াত করে। এ সড়কের ধারে প্রতি সোমবারে ডুগডুগি ও বৃহস্পতিবারে শিয়ালমারি পশুহাট বসে। এ সমস্ত হাটের দিন ছাড়াও প্রায় সপ্তাহ জুড়েই গবাদিপশু বোঝাই শত শত ট্রাক ও পাওয়ারট্রলি, লাটাহাম্বার, আলমসাধু নামক অবৈধ যানবাহন চলচল করে। রাতদিন বাস-ট্রাকের সাথে পাল্লা দিয়ে সমস্ত সড়ক জুড়ে যাত্রী ও মালামাল নিয়ে চলাচল করে শত শত নসিমন, করিমন, লাটাহাম্বার, পাখিভ্যান নামক অবৈধযান। বিভিন্ন স্থানে সড়কের উপর চলে ধান, ভূট্টাসহ বিভিন্ন জিনিস শুকানোর কাজ। এ ছাড়াও এ সড়কের চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা রেলরুটের দর্শনা হঠাৎ পাড়া নামক স্থানে লেভেল ক্রসিংয়ে কোন গেট বা গেটম্যান না থাকায় প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। কয়েক বছর আগে চলন্ত ট্রেনের সাথে একটি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই বাসের ৪জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, অদক্ষ, অশিক্ষিত, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ চালক দ্বারা ব্রেক, লাইট, হর্ন, ফিটনেসবিহীন অবৈধযান চালনা ও সেইসাথে সম্প্রতি একই মোটরসাইকেলে ২-৩ জন করে মাদকাসক্ত যুবকদের দ্রুতগতিতে সড়কে বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে বহুগুণ। সড়ক বিভাগসহ প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় সড়কপথে দিনের পর দিন নানা অনিয়ম বেড়েই চলেছে। ফলে সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষজনের চলাচল ক্রমান্বয়েই হয়ে উঠেছে মারত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে সচেতন মহলের দাবি, অনতিবিলম্বে এলাকার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ যানবাহন প্রত্যাহার, এলাকার ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত ও সংস্কারসহ সমস্ত অনিয়ম দূর করে সড়কপথে নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচল ও জনসাধরণের নিরাপদে পথচলা নিশ্চিত করা হোক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন