শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

রফতানির বিপরীতে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ তৈরী পোশাকের মতো সুবিধা পাবে- তোফায়েল আহমেদ

নগদ সহায়তা চাই- মো. আব্দুল কাদের খান, চারদিনব্যাপী গ্যাপেক্সপো উদ্বোধন

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। এ খাত থেকে মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ ভাগ আসে। তৈরি পোশাক সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং। পশ্চাৎসংযোগ এই শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পোশাক শিল্পে প্রায় ৩০টি পণ্যের প্রয়োজন, যা একসময় আমদানি করতে হতো। অথচ বর্তমানে দেশের শিল্পের চাহিদা মিটিয়ে এগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। বর্তমানে এ সেক্টরে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৬ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২১ সালে রপ্তানির পারিমাণ দাঁড়াবে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাই গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতের রফতানির বিপরীতে নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে আশ্বস্ত করেন বানিজ্যমন্ত্রী। এদিকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে রফতানির বিপরীতে নগদ সাহায়তা দাবি করেন বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান।
গতকাল বৃৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে চারদিনব্যাপী গ্যাপেক্সপো-২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ), এএসকে ট্রেড এন্ড এক্সিবিশন প্রা. লি. ও জাকারিয়া ট্রেড এন্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করে।
ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ইপিবি থেকে এক্সেসরিজ রফতানির ব্যাপারে সকল তথ্য সংগ্রহ করবো এবং নগদ আর্থিক প্রণোদনার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করব। আশা করছি কোনো ধরনের আইনি জটিলতা না থাকলে তৈরি পোশাক খাতের  মতো করে তারাও এই সুবিধা পাবে। তবে ব্যবসায়ীদের এমনভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে কোনো ধরনের সুবিধা ছাড়াই তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এখানে ওষুধ শিল্প ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এখানে এক্সেসরিজ খাতও গুরুত্ব পাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, আমরা যখন ব্যবসা শুরু করি তখন প্রথমবারই সাইজট্যাগের কারণে শিপমেন্ট পিছিয়ে যায়। যা আমদানি করতে হতো হংকং থেকে। এজন্য পাঁচদিন অপেক্ষার পর তা আনতে লোক পাঠাতে হয়েছে। বিজিএমইর সাবেক এই সভাপতি বলেন, শুধু প্যাকেজিংয়ের কার্টনের জন্য তিনমাস আগে অর্ডার করতে হতো। এখন আগের রাতে অর্ডার করলেই পেয়ে যাই।
বিজিএপিএমইএ সভাপতি আব্দুল কাদের খান বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণের রোডম্যাপ ঘোষণা করছে। এরই আলোকে বিজিএমইএ ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাও ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে।
এজন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা দাবি করে তিনি বলেন, অন্যান্য রপ্তানি খাতের ন্যায় এ সেক্টরকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান, ব্যাংকের সুদের হার হ্রাসকরণ, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রদান, ইউপি এবং আমদানি প্রাপ্যতা ইস্যুর ক্ষমতা অত্র এসোসিয়েশনের উপর অর্পণ করতে হবে। তিনি বলেন, এ খাতটি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে রপ্তানি বাণিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ সকল সুযোগ-সুবিধা অত্র এসোসিয়েশনকে প্রদান করা হলে রপ্তানি বাণিজ্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশও উপকৃত হবে। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং পণ্য রপ্তানি করে বিগত অর্থ-বছরে প্রায় ৬ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। বিজিএপিএমইএ’র দাবির সমর্থনে এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছে। এ খাতের বিকাশের জন্য তাদের হাতে ইফটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) প্রদানের ক্ষমতা দানের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ-র ইউপি ক্ষমতা পাওয়ার পর নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে হলেও এ খাতকে সব ধরনের সুবিধা দেয়া দরকার। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাত এর মধ্যেই ৪৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করছে।
বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ বলেন, তৈরি পোশাক খাতকে আজকের অবস্থানে আনার পেছনে নগদ সহায়তা নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে। তাই কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে এক্সেসরিজ খাতকেও নগদ সহায়তাসহ সব ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া উচিত।
গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং সেক্টর তৈরি পোশাক শিল্পের পশ্চাৎসংযোগ শিল্প হিসেবে কাজ করে আসছে। তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫০০ এর অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৩০ এর অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং পণ্য উৎপাদন করে থাকে। উৎপাদিত পণ্যসমূহ হলো পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ইলাস্টিক, বাটন, বাটন ট্যাগ, কলার স্ট্যান্ড, বাটার ফ্লাই, লেবেল, করোগেটেড কার্টন, জিপার, হ্যাংটেগ, ব্যাক বোর্ড, নেক বোর্ড, সুইং থ্রেড, প্রাইস ট্যাগ, ফটোবোর্ড, গামটেপ, টিস্যু, ট্যুইল টেপ, এম্ব্রয়ডারি, প্যাডিং, কুইলটিং ইত্যাদি। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান পূর্বে এসকল পণ্যসমূহ বিদেশ হতে আমদানি করতো। বর্তমানে পোশাক শিল্পের পুরো চাহিদাই আমাদের সেক্টর মিটিয়ে আসছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে এবং লিড টাইম কমে গিয়েছে। এছাড়ও এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যসমূহ দেশের চাহিদা মিটিয়ে সরাসরি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রপ্তানি বাণিজ্যকে বহুমুখীকরণ এবং সম্প্রসারণের জন্য ৮ম বারের মতো ‘গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং এক্সপোজিশন (গ্যাপেক্সপো)-২০১৭’ আয়োজন করা হয়। এ মেলায় কনকারেন্ট ইভেন্ট হিসেবে গার্মেনটেক (১৬তম গার্মেন্ট ও এ্যালাইড মেশিনারি ট্রেড শো) এবং ইয়ার্ন ফেব্রিক্স সোর্সিং ফেয়ার-২০১৭ (৮ম ইয়ার্ন ও ফেব্রিক্স সোর্সিং ফেয়ার) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলাটি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে। উক্ত মেলায় দেশি ও বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৮টি হলে প্রায় ৬০০টি স্টলসহ ৮০০টি বুথ থাকছে। মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, তাইওয়ানসহ ২৪টি দেশের ৪০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সল্যুশন, সাবলিমেশন এবং স্ক্রিন প্রিন্টের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডিসিসি এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। সম্প্রতি, ডিসিসি প্রিন্ট ভিশন এলএলপি টেক্সটাইল, প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং এক্সপার্টাইজ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। মেলার উদ্বোধন শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ডিসিসি প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ সম্পর্কে ডিসিসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার এইচ এন আশিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির গ্রাহকদের অনুরোধের ফলে ডিসিসি বিশ্বমানের টেক্সটাইল প্রিন্টিং স্টুডিও এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও ইন্ডাস্ট্রিতে এক্সপার্টিজ তৈরি করতে বাংলাদেশে ধাভাল কালার কেম (ডিসিসি) তার কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। গ্যাপেক্সপো ২০১৭-তে অংশগ্রহণে মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা ডিসিসি-এর সেবাসমূহ সম্পর্কে জানতে পারবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন