আবদুল আউয়াল ঠাকুর : একটি গ্রহণযোগ্য আলোচনা যখন সম্পন্ন হয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা যখন সম্পন্ন হয়েছে তখন সরকারি দলের পক্ষ থেকে কিছু বক্তব্য দেয়া হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনী ভাবনাকেন্দ্রিক। এই বক্তব্য ঠিক কবে নির্বাচন হবে তা নির্ধারণ করা না গেলেও কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনার সুযোগ রয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকের সূত্রপাত হয়েছিল বিএনপির সাথে বৈঠকের মধ্যদিয়ে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঐ বৈঠকে উপস্থিত থেকে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তিনি মূলত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সবগুলো পথ ও পদ্ধতির কথাই উল্লেখ করেন। এরপর অন্যান্য দল তাদের প্রস্তাব দিয়েছে, আলোচনা করেছে। এরমধ্যে সরকারের মন্ত্রী এবং জেপির সভাপতি অনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, আসলে প্রতিবারই নতুনদের দেয়ার ফলে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয় না। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কাউকে নিয়োগ দিয়ে দেখা যেতে পারে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয় কিনা। তার কথায় যুক্তি রয়েছে। যদি আমরা ধরে নেই বিদ্যমান বাস্তবতার কোন পরিবর্তন হবে না- সে প্রেক্ষিতে এ বক্তব্যে সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। অনেকেই তাদের আলোচনায় নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যদিও এ বিষয় নিয়ে বিএনপি মহাসচিব এক আলোচনায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যাইহোক, এ সংক্রান্ত আলোচনায় আওয়ামী লীগের তরফে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিন্ন কিছু করা হলে তারা তা মানবেন না যদিও রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্টের প্রতি যথাযথ সম্মান দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব অলোচনা চলাকালে প্রকাশিত কোন কোন খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা শেষ হলেই প্রেসিডেন্ট সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন। কমিটির প্রধান হিসেবে একজন সাবেক সচিবের নামও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে সংলাপ শেষে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, প্রস্তাব ও মতামত বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। যাই হোক, এ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও নিয়ম-নীতির বাস্তবতাতেই একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব নিয়েও কোন দ্বিমত নেই। এখন দেখার ব্যাপার, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্ট যেভাবে আশ্বস্ত করেছেন তা কতটা বাস্তব রূপ লাভ করে। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকা বিএনপি ও তার মিত্রদের সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে আগামী দিনের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক গতিতে এগুতে পারে।
চারদিকে যখন আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন হবে এ নিয়ে নানা আলোচনা-গুঞ্জন চলছে ঠিক সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, যথাযথ সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি যে সময়ের ইঙ্গিত করেছেন সে হিসেবে নির্বাচন এখনো খানিকটা দূরে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্যের পরপরই দলটির সাধারণ সম্পাদক আরো একটি রাজনৈতিক বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন। হিসেবে এখন নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের সময় নয়। এজন্য আরো খানিকটা সময় হাতে থাকার কথা। যদিও একথা সত্যি যে, ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত দুদলের কাউন্সিলেই মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখেই কর্মসূচি তুলে ধরা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গুঞ্জন উঠেছে, যে হয়ত সরকার নির্বাচন এগিয়ে আনতে পারে। যদি আওয়ামী লীগ আগামী দুমাসের মধ্যে ইশতেহার ঘোষণা করে তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে, মার্চ নাগাদ নির্বাচনের একটি ঘোষণা এলেও আসতে পারে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মিডিয়ায় বলা হয়েছে, যে কোন সুবিধাজনক সময়ে সরকার নির্বাচন ঘোষণা করতে পারে। এই সুবিধাজনক সময়ের নানামাত্রিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কোন কোন মহল মনে করছে, সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। তাদের ভাষ্যানুযায়ী ২০১৪ সালের একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিদারদের কথিত ‘সন্ত্রাসী’ ‘জঙ্গি’ বানিয়ে দেশে এক ধরনের দলীয় একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। ছলেবলে-কৌশলে বিরোধীদের কব্জা করা গেছে বলেও তারা মনে করছেন। মুখে তারা যাই বলুক, বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে আওয়ামী লীগের প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় নাকি খানিকটা সুফল মিলছে। সেদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার বাস্তবতাকে আরো যেসব বিষয়ের সাথে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে কথিত উন্নয়ন। সরকারি পক্ষ এটাও মনে করছে, সারাদেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। যে কোন এমনকি ছোট ছোট নির্বাচনেও এখন বলা হচ্ছে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার সমর্থকদের ভোট দিন। দেশের অর্থ পাচার বা যাই হোক, উচ্চসুদে ঋণের টাকা এনে নানা হিসেবের শুভঙ্করি ফাঁক যাই করা হোক না কেন জনগণ প্রত্যক্ষ করছে কাঁচা টাকার প্রভাব। এই প্রভাবকেই তারা সুবর্ণ সময় বলে ধারণা করছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপরটিকে তারা ক্যাশ করার পক্ষে। সরকার বা সরকারকে যারা মত-পরামর্শ দেন তারা যখন চাইবেন তখনই হয়ত নির্বাচনে তারিখ ঘোষিত হবে। এদিকে সরকারি মহল যখন মনে করছে তাদের এখন আর কোন ভয় নেই তখন তারা কিন্তু বিএনপিকে রাজধানীতে একটি জনসভা করার অনুমতি দিতেও ভয় পাচ্ছে ভয়। ভয়ের কারণ সম্পর্কে শীর্ষ অবস্থান থেকেও নানা কথা বলা হয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার কথা বলেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেছন, কর্মসূচি দিয়ে তারা বের হন না তাই তাদের অনুমতি দিয়ে লাভ কি। যদি ধরে নেয়া যায় যে, ২০১৫ সালের অবরোধকালীন সময়ের কথা তিনি তুলে ধরেছেন তাহলে এ কথা অবশ্যই বলতে হবে যারা মাঠে নামেনি তাদের বিরুদ্ধে কথিত জঙ্গি-সন্ত্রাসীর মামলা কেন? অন্যভাবে বলা যায়, যারা মাঠে নামে না তাদের অনুমতি দিতে এত ভয় কেন ? গত কয়েক বছর ধরেই তো দেখা যায় বিএনপি জনসভার অনুমতি চাইলেই নানা অজুহাত দাঁড় করানো হচ্ছে। এ কথা আন্তর্জাতিক মহল থেকে বলার পর এখন তাদেরও ভাড়াটিয়া বলে অভিহিত করা হচ্ছে। অসলে ভয় নির্বাচন নিয়েই। বিএনপির জনসভাতে যে স্বাভাবিক জনস্রোত হয় তা নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে এমন একটা ধারণা সংশ্লিষ্টদের মনে রয়েছে। সে বিবেচনা থেকেই সম্ভবত বিএনপিকে জনসভা করতে দেয়া হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন উপলক্ষে বেগম জিয়ার যেদিন সেখানে যাবার কথা তার আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, এর পেছনে নির্বাচনে পরাজয় ভীতি কাজ করেছে। যত জোরে এবং চিৎকারে বলা হচ্ছে তারা জনগণের আস্থায় রয়েছেন প্রকৃত অবস্থা যে ততটা নয় সেটি প্রমাণিত হয় সরকারদলীয় কর্মসূচিতে লোক সমাগমের প্রকৃতি দেখে। যাই হোক জনপ্রিয়তা প্রমাণের জন্য যে নিরপেক্ষতা প্রয়োজন সেটাই হচ্ছে গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রীও যখন মনে করেছেন প্রশ্নবিদ নির্বাচন তিনি চান না সে কারণে আগামী নির্বাচন প্রভাবমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে, সেটা আশা করাই সংগত ও শোভন।
যে ইশতেহারের কথা বলা হয়েছে সেখানে নিশ্চই জনগণের ‘কল্যাণের’ নানা আলোচনা থাকবে। গত ৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। একসময়ে বলা হতো আইয়ুবের উন্নয়নের দশক। এরপর শোনা গিয়েছিল এরশাদের উন্নয়নের ৯ বছর। তিনি অবশ্য ১০ বছর অতিক্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। জনতার রোষে পড়ে বিদায় নিয়েছেন। যদিও এখনো আবার ফিরে আসার আশায় রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে ৪ বছর অতিবাহিত হবার পর আরো পাঁচ বছরের আশায় পেয়ে বসেছে সংশ্লিষ্টদের। আমলা-প্রশাসন সবকিছুই ঢেলে সাজানো হয়েছে। একবারে নিম্নস্তর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এমনভাবে রাখা হয়েছে যে এখানে পান থেকে চুন খসার কোন সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার হয়েছে রায়। রায়ে বিচারক স্পষ্ট করেই বলেছেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। রায়ে দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক সম্পৃক্তার প্রসঙ্গ অত্যন্ত স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা একবারেই নিজেদের মধ্যকার। বলা হয়েছে, সম্পত্তি দখলে বাধা দেয়াই হত্যার মূল কারণ। এটা অবশ্য বলা হয়নি এই সম্পত্তি মূলত কে দখল করতে চেয়েছিল। র্যাবের যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তারা কার হয়ে এ কাজ করেছে? কে তাদের নির্দেশ দিয়েছে? বলা না হলেও এটা বোঝা কষ্টকর নয়। এর ফলে যে বিষয়টি আগামীতে জনগণের জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিতে পারে তা হলো যে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এবং নিরপেক্ষ থাকার যুক্তিতে র্যাব গঠন করা হয়েছিল তা এখন কতটা যৌক্তিক? যদিও র্যাবের থেকে বলা হয়েছে, ব্যক্তিবিশেষের দায় র্যাব নেবে না। পেশাদারিত্ব বজায় থাকবে। ইতোপূর্বে এই বাহিনী নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অংগনে যেসব প্রশ্নের জন্ম হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের ঘটনার রায় তার সুস্পষ্ট জবাব। রায় প্রমাণ করেছে গুম-হত্যার মত মানবাধিকাবিরোধী ঘটনার সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্য জড়িত। এটি সংবিধান বহির্ভূত আচরণ। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের জানমাল রক্ষা করাই হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে হয়ত সংশ্লিষ্টরা দায়িত্ব নিতেন। রায় ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জে মিষ্টি বিতরণের ধুম পড়ে। দেশের সাধারণ মানুষের মনে নতুন আশা সঞ্চারিত হয়েছে । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধী সদস্যদের জন্য সতর্ক বার্তা। আইনমন্ত্রী অনিসুল হক এই রায়কে আইনের শাসনের নজির হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এখন যা ঘটছে তা মূলত আওয়ামী লীগের আট বছরের ক্ষমতার জের ধরেই ঘটছে। এ দফায় সর্বপ্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হবার ঘোষণার সাথে সাথে শাহবাগের ফুলের দোকান লুটপাট ও দখল নিয়ে যা ঘটেছিল এখনো তা পূর্ণ উদ্যমে বহাল রয়েছে। একদিকে বলা হচ্ছে উন্নয়নে কথা অন্যদিকে উন্নয়নের নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের নানা ঘটনা। ছিটেফোঁটা যা বের হচ্ছে তাতেই তোলপাড়। এ পর্যন্ত নিজেদের আন্তঃকলহে দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। অনেক শিক্ষককে আহত-নাজেহাল হতে হয়েছে। সারাদেশে ধর্ষণ ছিনতাই রাহাজানি যা ঘটছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিন বছরে দেশে মোট ১২ হাজার ২৭৭টি হত্যাকা- ঘটেছে। এ সময়ে আওয়ামী লীগের আন্তকোন্দলজনিত সংঘর্ষে ১৪৬ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০১৪ সালে ৪৩ জন, ২০১৫ সালে ৪০ জন এবং ২০১৬ সালে ৭৩ জনে। একই সময়ে ৬১ হাজার ২১৬টি নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। তিন বছরে দস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনা রেকর্ড হয়েছে চার হাজার ৩৮৮টি। অপহরণের মামলা হয়েছে ২৪ হাজার আটটি। এই সময়ে সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এমনকি বিদেশী নাগরিকও খুন হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে গত তিন বছরে মোট পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। দিনে গড়ে মামলা হয়েছে ৫০০টি। মামলাগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে এক লাখ ৮২ হাজার ২২৭টি, ২০১৫ সালে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮৮০টি ও ২০১৪ সালে এক লাখ ৮৩ হাজার ৯২৯টি। এই তিন বছরে দায়ের হওয়া ১২ হাজার ২৫৭টি হত্যা মামলার মধ্যে ২০১৬ সালে তিন হাজার ৭২৮টি, ২০১৫ সালে চার হাজার ৩৫টি ও ২০১৪ সালে চার হাজার ৫১৪টি মামলা রেকর্ড হয়। আর তিন বছরে সারা দেশে ২৪ হাজার আটটি অপহরণ মামলার মধ্যে ২০১৬ সালে ৬৮২টি, ২০১৫ সালে ৯২০টি ও ২০১৪ সালে ৮০৬টি। এই যে ঘটনাবলী, এর মূলে রয়েছে একচ্ছত্র আদিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগ থেকে যখন ইশতেহারের কথা বলা হচ্ছে তখন নিশ্চয়ই এসব প্রশ্ন সংগতভাবেই উঠবে বা উঠতে পারে।
প্রকৃত বিবেচনাতেই গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে সেক্ষেত্রে কেবল দেশে নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আইনশৃঙ্খলা বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের খুনের সাথে জড়িত বাহিনীর নাম উঠে এসেছে। আমেরিকা এ কারণে র্যাবের প্রশিক্ষণেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর এ ধরনের ঘটনা কিছুদিনের জন্য হলেও থমকে ছিল। তবে তা হয়ত আবার ভিন্নভাবে হতে শুরু করেছে। বস্তবতার বিশ্লেষণে বলা যায়, এটি কেবল হত্যার বিচার নয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আদালতের সমুচিত জবাব। নারায়ণঞ্জের সাত খুনের ঘটনা উদঘাটিত হবার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্য কখনো চাপা থাকে না। আর বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, কেইই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এটাও প্রমাণিত হয়েছে, দেশে মানবতার বিরুদ্ধে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়ে চলেছে তারও বিচার হয়ত একদিন হবে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার যে রায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে একটি অংশের বিচার হয়েছে। আরো কিছু বিষয় নিয়ে জনমনে থাকা সন্দেহের অবসান হয়নি। হয়ত এভাবে হবেও না। সে জন্য এমন একটি পরিবেশের প্রয়োজন যেখানে বিচারকরা কাজ করবেন নির্ভয়ে। এ জন্যই প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের প্রতি জনগণের নিরংকুশ আস্থা থাকবে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার রায় একটি সুনির্দিষ্ট বার্তা দিচ্ছে।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন