শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ইটভাটা গ্রাস করছে ফসলি জমির টপসয়েল

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ভাটাগুলোতে ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। ফলে ফসলি এই জমিগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাটি কেটে নেওয়া এ জমিগুলোতে চলতি রবি মৌসুমে আলু-সরিষার চাষ না করায় তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেই সাথে ভাটাগুলোতে গাছ ও কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করলেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নীরব রয়েছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরসহ বন্দর নগর তালোড়া ও চামরুল ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে মাঠের মধ্যে কয়েক বিঘা জমি দখল করে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। সরকারি নিয়মানুসারে আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়মও মানা হয়নি। এদিকে উপজেলার ভাটার মালিকরা ইট তৈরি করতে জমির মাটি ব্যাবহার করছে। বিভিন্ন গ্রামে মাঠের ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নেয়া হচ্ছে। গ্রামের সহজ সরল কৃষকদের প্রলভিত করে ট্রাক প্রতি ৩শ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ টাকা হারে এই সব মাটি ক্রয় করে জমির দেড় থেকে দুই ফুট গভীর করে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন ফসলি জমির মাটি কাটার এই প্রবণতা বেড়েই চলছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরা শক্তিও আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়াও ফসলি জমির উপরি স্তর কেটে নেওয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়ামসহ অর্গানিক বা জৈব্য উৎপাদনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। গত ১৫ জানুয়ারি সদরের খোলাশসহ চামরুল ইউনিয়নের আটগ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত বিঘা জমির উপরিভাগ মাটি কেটে নেওয়ায় জমিগুলো চলতি রবি মৌসুমের আলু-সরিষার চাষ করা হয় নাই। মাটি কাটা অবস্থায় জমিগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শস্যভা-ার হিসাবে পরিচিত এই উপজেলার ফসলি জমিগুলো ভবিষ্যতে বন্ধ্যা জমিতে পরিণত হবে এবং বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। উত্তরাঞ্চলের শস্যভা-ার হিসাবে পরিচিত এই দুপচাঁচিয়া উপজেলায় অপরিকল্পিত ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরিসহ জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নেওয়ায় ফসলি জমি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমিও ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ দিকে গড়ে উঠা এই সব ইটভাটার মালিকরা সরকারের প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে কয়লার পরিবর্তে ভাটাই অবাধে গাছ ও কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ইটভাটা চত্বরেই প্রকাশ্যে স্তূপ করে রাখা হয়েছে শত শত মন গাছসহ বিভিন্ন গাছের ডাল ও বড় বড় কাঠের গুল। ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানোর ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনজ ও ফলজ গাছ। সরকারি বিধি-বিধান না মেনেই ফসলি জমির উপরে ইটভাটাগুলো গড়ে উঠেছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরসহ চামরুল ও তালোড়া ইউনিয়নে মোট ১০টি ভাটা রয়েছে। এছাড়াও দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের সীমান্তবর্তী এলাকা নাগর নদীর কোল ঘেঁষে কাহালু উপজেলার কাশিমালা জোগাড়পাড়া, বীরকেদার, ঘোনকালাই এলাকায় আরও ৮টি ভাটা গড়ে উঠেছে। চারিদিকে কৃষি জমি আর মাঝখানে ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমির উপর এসব ভাটা। প্রজাতন্ত্র আইন ১৯৫০-এর অধীনে জেলা প্রশাসক ১৯৯০ সালে একটি সার্কুলার ইস্যু করেন যাতে বলা আছে, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। সেই সাথে জনবসতির ৩ কিলোমিটার এর মধ্যে ইটভাটা স্থাপন না করার সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু উপজেলার ইটভাটাগুলোর অধিকাংশই মালিক এই আইন অমান্য করে ভাটা স্থাপন করেছে। এ ব্যাপারে গত ১৫ জানুয়ারি রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদ পারভেজ এর সাথে মুঠোফোনে যোগযোগ করলে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ইটভাটাগুলোতে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি তার কার্যালয়ের আওতাভুক্ত নয়। তবে ইটভাটায় লাইসেন্স দেওয়ার আগে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। এলাকায় ইটভাটাগুলো তার সময়ে স্থাপন না হওয়ায় এ সংক্রান্তে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে কিনা না তা তার জানা নেই বলে জানান। তিনি আরো জানান এলাকার ফসলি জমির উপর থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। জমির মালিকরা স্বেচ্ছায় মাটি বিক্রয় করলে এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন কিছু করার থাকে না। তবে জমির উপরের উর্বরাস্তর কেটে নেওয়ার ক্ষতির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। একই সাথে তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। এ দিকে এলাকার পরিবেশ রক্ষাসহ ফসলি জমি রক্ষার্থে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন