ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে সামরিক বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে সামরিক বাহিনী রাখাইনে হস্তক্ষেপ করে। জাতিসংঘের এ সংস্থাটির মানবিক ত্রাণবিষয়ক সমন্বয় দফতরের গত সোমবার সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ২১ হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাংশে বাস্তুচ্যুত হয়। গত ৯ অক্টোবর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা ও অভিযানের ফলে এসব মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আনুমানিক ৬৬ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা আরো বলে, যদিও উত্তর রাখাইনের অনেক অঞ্চলে পুনরায় মানবিক কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু সরকার এখনও রাখাইনের মূল কেন্দ্রে বিদেশি আন্তর্জাতিক কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না।
এদিকে লন্ডনে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (এআরএনও) নেতা নুরুল ইসলাম বলেছেন, মিয়ানমার সরকার সংকটের অবসান চাইছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার ভাষ্যমতে, মিয়ানমার অতিরিক্ত সময় চাইছে আরও মানুষ মারার জন্য। সমাধানের জন্য সময় চাইছে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। তারা যদি সত্যিকার অর্থে সমাধান চাইত তারা আন্তর্জাতিক তদন্ত দল রাখাইনে প্রবেশ করতে দিত। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাউকে এখন পর্যন্ত প্রবেশ করতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। দুনিয়া তো জানে না সেখানে কী হচ্ছে। নিরপেক্ষ কেউ যদি সেখানে না ঢুকতে পারে তাহলে কীভাবে আমরা বিশ্বাস করব?Ñবলছিলেন রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের নেতা নুরুল ইসলাম। মিয়ানমারকে কোনও সময় দেয়া উচিত নয় বলে মনে করেন মি. ইসলাম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জরুরি ভিত্তিতে আরও বেশি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এখনও রাখাইন প্রদেশে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে বলে অভিযোগ করেন রোহিঙ্গা নেতা। রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতি সংকটজনক উল্লেখ করে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।
এর আগে খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতন ও সৃষ্ট সংকট নিরসনের জন্য আরো সময় চায় দেশটির সরকার। গত সোমবার সিঙ্গাপুরে এক নিরাপত্তা ফেরামে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা উপপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মিন্ট নোয়ে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারিত খবরাখবর সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ছে এবং এ বিষয়ে সরকার অবহিত। সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। নিরপরাধ বেসামরিক লোকজনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ সরকার ক্ষমা করবে না।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের আয়োজনে ফুলারটন ফোরামে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামুদ্দিনের হুঁশিয়ারির জবাবে হুসেইনের মিন্ট নোয়ে এসব কথা বলেন। ফোরামের আলোচনায় হিশামুদ্দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো সুযোগ নিতে পারে। কারণ, তারা দক্ষিণ-পূর্ণ এশিয়ায় একটি ঘাঁটি গড়তে চাইছে। রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আসিয়ানের সংহতির জন্য একটি পরীক্ষা হতে চলেছে। ধামাচাপা না দিয়ে এর সমাধান করতে হবে। এটা মুসলিমদের অনেকের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং বিষয়টিতে আবেগ যুক্ত রয়েছে। প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত অক্টোবর থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে কথিত বিদ্রোহীদের নির্মূল করতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। বিবিসি রয়টার্স, ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন