জামালউদ্দিন বারী : পরিসংখ্যান ও সরকারি বক্তব্য-বিবৃতিতে গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়েছে বলে দাবি করা হলেও এ সময়ে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ, এফডিআই, বৈদেশিক কর্মসংস্থানে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই বললেই চলে। তথাপি দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ সামাজিক অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগতির যে ধারা দেখা যাচ্ছে তা অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর ধারাবাহিকতা বজায় থাকার ফল। সেই সাথে খরা-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে এ সময়ে বড় ধরনের ফসলহানি না হওয়া এবং কৃষি উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকায় তা অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। দেশের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা, জ্বালাও-পোড়াও, গণতন্ত্রহীনতা ও জননিরাপত্তার চরম অবনমন না ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিশ্চিতভাবে আরো শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারত। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার মতো বড় শ্রমবাজার প্রায় এক দশক ধরে কার্যত বন্ধ থাকার পরও বৈদেশিক রেমিটেন্সে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। রেমিটেন্স ও রফতানী প্রবৃদ্ধি বজায় থাকায় বিশ্বমন্দার সময়ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল স্থিতিশীল। পশ্চিমা অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে পরোক্ষভাবে ইতিবাচক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। অর্থাৎ বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং তৈরি পোশাক রফতানি খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে মূল ভূমিকা পালন করেছিল। বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক রেমিটেন্স, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ, এই চিত্র বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থা নির্দেশ করলেও দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা অথবা বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতার কারণে হাজার হাজার কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশের শিক্ষিত বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান এবং দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে প্রত্যাশিত উপযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। উপরন্তু গত এক দশকে দেশ থেকে বৈধ-অবৈধ পথে নানাভাবে হাজার হাজার কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। যখন উপযুক্ত বিনিয়োগ না থাকায় দেশের ব্যাংকগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার তারল্য বা অলস অর্থ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন প্রভাবশালী মহলকে নতুন নতুন ব্যাংক খোলার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মূলত সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য, দেশের পুঁজিবাজার ও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হওয়া অর্থের বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালীরা জনগণের টাকা বিদেশে সেকেন্ড হোমের নামে, বিদেশি ব্যাংকে বেনামি অ্যাকাউন্টে জমা করে অথবা নতুন ব্যাংকের শেয়ারে ব্যয় করার মধ্য দিয়ে দেশে লুটপাটের অর্থনীতির জালকে আরো বিস্তৃত করেছে। এ অবস্থার উত্তরণে সরকারের যেন কিছুই করণীয় নেই।
দেশের অর্থনীতির চাকা সবল হলে স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আট বছরে দেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়েছে বলে দাবি করা হলেও দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও কর্মসংস্থানে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা এবং জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে শুধু হাজার হাজার কোটি টাকাই বিদেশে পাচার হয়নি, সেই সাথে হাজার হাজার মানুষও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিয়ে অনেকেই সাগরে নিমজ্জিত হয়ে, জঙ্গলে দুর্বিপাকে পড়ে মৃত্যুর কবলে পড়েছে। অনেকেই থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার জলদস্যুদের হাতে কৃতদাসের জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। অথবা বিভিন্ন দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বিদেশের জেলে বন্দি জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। গত বছর প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, বিভিন্ন দেশের জেলে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। আমরা যখন নানা অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান ও উন্নয়নের সূচক দেখিয়ে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার দাবি করছি, আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভলগ্নে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, ঠিক তখন আমাদের সমাজদেহ এবং অর্থনীতির রন্ধ্রে বড় ধরনের বৈষম্য ও শুভঙ্করের ফাঁক উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষত উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে যখন দেশের কোটি কোটি মানুষ বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকছে, তখনো দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা এবং বিদেশের জেলে স্বাধীন বাংলাদেশের হাজার হাজার নাগরিক ধুঁকে মরার যে চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে বার্তা দিচ্ছে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য তা সুখকর নয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত এদেশের মানুষ বারবার রক্তাক্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের স্বাতন্ত্র্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পেরিয়ে এসে আমরা যখন মহাসাড়ম্ভরে একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল, উন্নত বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের প্রস্তুত নিচ্ছি, তখন বাংলাদেশের বেকার তরুণরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ছাড়ছে। এদেশের কোটিপতিরা ধনসম্পদ বিদেশে পাচার করে দিয়ে বিদেশে সেকেন্ড হোম বানিয়ে বসবাসের চিন্তায় মশগুল হয়ে আছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রভাবশালী মহলের হাতে লুটপাট ও দেউলিয়া হয়ে পড়ছে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জনগণের গচ্ছিত, বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো টাকাও ডিজিটাল লুটপাটের শিকার হয়ে বিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অন্যতম আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
দেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় আছে নির্ধারণ করা যায় জনগণের জীবনমান, জনগণের কর্মসংস্থান, সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে। বিগত দশকের শেষদিকে পশ্চিমা অর্থনীতিতে যখন বড় ধরনের ডিপ্রেশন দেখা দিয়েছিল, তার প্রথম প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ডাউন-টার্নের মধ্যে, বিশেষত শত শত ব্যাংক-বীমা ও মর্টগেজ কোম্পানির কর্মী ছাঁটাই ও দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমা অর্থনীতির মন্দা প্রকট আকারে আবির্ভূত হয়। ফেনি মে-ফেনি ম্যাক, ম্যারিল লিঞ্চ, লেহম্যান ব্রাদার্সের মতো বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ ব্যাংকসহ শত শত ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলেও কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তখনো বিলিয়ন ডলারের মুনাফা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছিল এবং এসব দেউলিয়া ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলো তারা কিনে নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে ঘটছে সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা। ব্যাপক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও লুটপাটের কারণে ও হাজার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি, কু-ঋণের ফাঁদে পড়ে বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলো যখন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে তখন সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে অর্থ বরাদ্দ করে এসব ব্যর্থ ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকিং সেক্টরের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও ব্যাংক পরিচালকদের লুটপাটের মচ্ছবের মধ্যেও ব্যাংকিং খাতের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হিসেবে লাখ লাখ নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করার রেকর্ড সৃষ্টিকারী দেশের সচ্ছে সফল বিশ্বমানের বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করে দেয়ার। আয়োজন করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, বেহাত হয়ে যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ এবং যথোপযুক্ত শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার বদলে দেশের সবচেয়ে সফল ব্যাংকটির কর্মকর্তা ও পরিচালকদের সরিয়ে দিয়ে ব্যাংটিকে নতুন পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা এবং দেশি আন্তর্জাতিক আইন, শর্ত ও নীতিমালা মেনে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনার সুযোগ বাংলাদেশে আছে। এসব আইনগত নীতিমালা ও স্বচ্ছতা মেনেই বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক ব্যাংকিং সেক্টরে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সেখানে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের ব্যক্তিরা জড়িত থাকলে আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদেরকে নিবৃত্ত করার কোনো বিধান আছে কিনা আমার জানা নেই। দেশের রাজনীতি নানাভাগে ও মতাদর্শে বিভক্ত হলেও দেশের আইন এবং অর্থনীতি অভিন্ন ধারায় পরিচালিত হয়। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতির একক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বাইরে ইসলামী অর্থনীতির একটি ফল্গুধারা প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। শত বছরের পুরনো লন্ডনের দ্য ব্যাংকার্স ম্যাগাজিন বিশ্বের ৫ হাজারের বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্য থেকে শীর্ষ ১০০০ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করে আসছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের নাম উঠে আসছে। গত পাঁচ বছরে ইসলামী ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে এই সূচকে তার অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। দেশে লাখ লাখ নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অনন্য গৌরবের অধিকারী হয়েছে ইসলামী ব্যাংক। দেশের শিল্প, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সেবা খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি খেলাধুলা, গণমাধ্যম, শিল্প-সাহিত্যে ও আর্তমানবতার সেবায় ইসলামী ব্যাংক অনন্য ভূমিকা পালন করেছে আসছে। দাতব্য ও সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মকা-ে ইসলামী ব্যাংক সর্বদা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে।
দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদ ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলছেন। যে কোনো ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। যে দেশে দুর্নীতির-লুটপাটের অর্থনীতির শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে, সে সব বাস্তবতার নাগপাশ কাটিয়ে যে ব্যাংকটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে বিশ্ব দরবারে উচ্চ মর্যাদায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে, যাদের সততা ও কর্মদক্ষতা ব্যাংকটিকে এ পর্যায়ে উন্নীত করেছে তারাও যদি কোনোভাবে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকেন, তাদেরও বিচার হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। তবে জঙ্গি অর্থায়নের ধুয়া তুলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের ব্যাংকটি লুটপাট ও দেউলিয়া হতে চলেছে কিনা ব্যাংকের অনেক গ্রাহকের মনে এই আশঙ্কা এখন প্রবল হয়ে উঠেছে। ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পদে বড় ধরনের রদবদলের পর সম্প্রতি এই ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তায় একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন পরিবর্তনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। সেখানে উপস্থিত বক্তাদের অনেকেই ইসলামী ব্যাংকের সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রা ধরে রাখার সম্ভাব্য কর্মকৌশল সম্পর্কে মতামত রাখার বদলে পুরো ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কেই অবাস্তব ও নেতিবাচক কথাবার্তা বলেছেন। কেউ কেউ ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পলিটিক্যাল ইসলামের মতোই অবাস্তব বলে অভিহিত করেছেন। তারা বাংলাদেশে বসে এমন সময় এ ধরনের মন্তব্য করছেন, যখন ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পরিচালিত বাংলাদেশের একটি ব্যাংক দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, পাশাপাশি ব্যাংকটি বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যাংক হিসেবে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। আর ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম এখন সারা বিশ্বেই দ্রুত বর্ধনশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব লাভ করছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩০০ ব্যাংক এবং ২৫০টির অধিক বীমা ও মিউচুয়াল ফান্ড এখন ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে যুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়। প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলো যেখানে ঋণের মূলধনের পুরো দায়ভার গ্রাহক বা ঋণ গ্রহিতার ওপর চাপিয়ে থাকে, ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমে তা ব্যাংক এবং গ্রাহকের মধ্যে লাভ-লোকসান ও দায়দেনার মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে থাকে। নির্দিষ্টহারে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থায় এককভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে সমুদয় দায় আদায় করে নেয়ার ব্যবস্থা থাকার পরও শত শত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে ইসলামী ব্যাংকিং-এর প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছে বিশ্বের মানুষ। ২০০০ সালে যেখানে সারা বিশ্বে ইসলামিক ব্যাংকিং খাতের টার্নওভার ছিল ২০০ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৫ সালে ইসলামী ব্যাংকিং খাতের টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ তা কমপক্ষে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের কতিপয় সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরোধিতা করতে গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে যেমন নিজেদের এলার্জি প্রকাশ করে থাকেন, একইভাবে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কেও তাদের ক্ষোভ ও এলার্জি প্রকাশ করেছেন। সারা বিশ্বে যেমন ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের হাত ধরে বাংলাদেশও তার অংশীদার। প্রচলিত ব্যাংকিং ধারার বাইরে গিয়ে সুদমুক্ত ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে ইসলামী ব্যাংক কোটি গ্রাহকের আস্থা অর্জন করলেও ইসলামের নামে এলার্জিযুক্ত কিছু ব্যক্তির জন্য তা গাত্রদাহের কারণ হতে পারে। তবে ইসলামী ব্যাংকের নতুন শীর্ষব্যক্তিরা ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা ও মৌলিক নীতিমালা অক্ষুণœ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে শুধু এই ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, ব্যাংক পরিচালনায় তাদের আগামী দিনের সিদ্ধান্ত ও কর্মকা-ই ঠিক করবে ইসলামী ব্যাংক তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারছে, নাকি গতানুগতিক ব্যাংকে পরিণত হতে যাচ্ছে।
bari_zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন