তালুকদার মো. কামাল, আমতলী (বরগুনা) থেকে : মোতাহার বেপারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হরেও কপালে জোটেনি ভাতা, পথে পথে ভিক্ষা করেই কাটে দিন। ভিক্ষা করার সময় তার সাথে কথা হয় আমতলী পৌর শহরে। তিনি বানারীপাড়া উপজেলার ব্রাহ্মনকাঠী গ্রামের আমিন উদ্দিন বেপারীর ছেলে মোতাহার বেপারী। বয়স এখন প্রায় ৭৫ বছর। ১৯৪২ সালের ২৫ নভেম্বর তার জন্ম। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ২৮ বছর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৯নং সেক্টরের মেজর আতিকুর রহমানের অধীনে তিনি বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি উক্ত মেজরের নেতৃত্বে ঢাকার পিলখানায় অস্ত্র জমা দেন এবং পরবর্তীতে মাননীয় মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের চিঠির মর্মানুসারে রক্ষী বাহিনীতে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার কয়েক দিন পূর্বে মার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। কিন্তু তার মা মারা যান। মায়ের দাফন-কাফনের পর চাকরিতে যোগদান করতে যাবেন এমনি সময় রেডিও’র খবরে জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু সপরিবারের নিহত হয়েছেন। এর কয়েক দিন পর তিনি ঢাকায় গিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন তার ব্যাটালিয়ান নং-র্থ্রী, কোম্পানি নং-সি, ব্যাচ নং ৩২৫৫। ঐ সময় রক্ষী বাহিনীর অনেক সদস্যকে সেনা বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের প্রায় ১শ’ জনকে বরখাস্ত করা হয়। চাকরি হারিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার বেপারী। ইতিমধ্যে বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি যা ছিল সবই ভয়ঙ্কর সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে নানা ধরনের কাজকর্ম করে স্ত্রী, পুত্র-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। বানারীপাড়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম খান তার আপন শ্যলক। জমা-জমি নিয়ে তার সাথে বিরোধ থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ না করায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পাননি। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে। বয়সের ভারে ন্যূব্জ মোতাহার বেপারীর ১ ছেলে, ৪ মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে বরগুনা জেলার পোটকাখালী আশ্রায়ন প্রকল্পের ১টি ঘরে বসবাস করে আসছেন। স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ-কর্ম করেন এবং নিজে শারীরিক পরিশ্রম করতে না পারায় ভিক্ষা করে জীবন-যাপন করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন