মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

তামাক চাষে প্রণোদনা, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশের অন্তরায়

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে তামাকের চাষ নিয়ন্ত্রণে একটি খসড়া নীতিমালাও প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যার অন্যতম বাস্তবায়নকারী সংস্থা কৃষি মন্ত্রণালয়। অথচ খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ই তামাকের ওপর বিদ্যমান ১০ শতাংশ রফতানি শুল্ক হ্রাসের পক্ষে একটি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছরের ১৩ মার্চ কৃষি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কৃষি মূল্য উপদেষ্টা কমিটির ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তামাক ফসলের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণী সভায় তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সভায় তামাকের সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনার কথা থাকলেও তামাক রফতানি বৃদ্ধির উপায়, তামাকের উৎপাদন, তামাক চাষিদের প্রশিক্ষণ, তামাক ব্যবসায় নিয়োজিত কোম্পানির সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য উপায় ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা হয়। সভায় বিভিন্ন তামাক কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তামাকবিরোধীদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিপরীতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত এবং সরকারের দ্বৈত নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। যা দেশের তামাকের আবাদ বৃদ্ধিতে প্রভাব রাখবে, বাড়াবে খাদ্য নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি, বিপন্ন হবে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি জমিতে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে তামাক রফতানির ওপর ১০ শতাংশ রফতানি শুল্ক আরোপ করা হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে কৃষিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রফতানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে এই শুল্কহার আবার ১০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
উক্ত সভায় তামাকের সর্বনিম্ন মূল্য তালিকা সংবলিত ২০ হাজার লিফলেট কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহায়তায় চাষি পর্যায়ে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রংপুর অঞ্চলে তামাক ক্রয়-বিক্রয় হয় এমন ২০টি খোলা বাজারে মূল্য তালিকা সংবলিত ৪০টি ফেস্টুন রংপুর তামাক ব্যবসায়ী সমিতির নিজস্ব অর্থে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে এসব কর্মকাÐের ফলে চাষিরা তামাক চাষে আরো উৎসাহিত হবে। অন্যান্য কৃষি পণ্য যেমনÑ ধানের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেয় কিন্তু তা প্রচারের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে দেখা যায় না।
‘বাংলাদেশে তামাক চাষের প্রভাব’ শীর্ষক একটি গবেষণা সমাপ্ত হয়েছে মর্মে সভার কার্যবিবরণীতে জানা গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি রিভিউ করে কমপ্লায়েন্স গাইডলাইন প্রণয়নের জন্য গঠিত সাব-কমিটি ৩ মাসের মধ্যে মতামত প্রদান করবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রকৃতপক্ষে তামাক কোম্পানি উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য এ গবেষণা ও গাইডলাইন তৈরি করছে। সভা থেকে তামাক চাষে জমি স¤প্রসারণ ব্যতিরেকে উন্নত চাষ পদ্ধতি এবং উফশী জাত প্রবর্তনের মাধ্যমে তামাক উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এর মাধ্যমে তামাক চাষের পক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নমনীয়তা ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, তামাক চাষে এ ধরনের সুবিধা ও প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত থাকলে কখনোই তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন