বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

ফরমালিন এবং আমাদের জনস্বাস্থ্য

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু : দেশে দিন দিন খাদ্যে বিষ ও ভেজাল দেয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। সবার চোখের সামনেই এসব ঘটনা ঘটছে। বাজারে এমন কোন ফল নেই, যাতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যাবে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের জীবনের কথা না ভেবে অধিক মুনাফার লোভে খাদ্যে ভেজাল দিয়েই যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় ভেজাল বিরোধী কিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা থেকে কাক্সিক্ষত ফল আসছে না। ফরমালিন ধ্বংস করছে মানবদেহ এবং জাতীয় জীবন। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জন্য এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশবাসীকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারে এখন ফরমালিন। ফলে আমরা অনেক ফরমালিন খেয়ে বড় বড় রোগের শিকার হচ্ছি। এর ফলে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
অথচ ভেজাল ছাড়া কোনো খাদ্যপণ্য কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকি ফলমূল কিনেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। হোটেলে যে মুরগি কিংবা গরু বা খাসির মাংস পরিবেশন করা হয় তা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধে উঠছে সেটি মরা মুরগি কিংবা অন্য কোনো জন্তুর মাংস কিনা। ফরমালিনসহ নানা বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে ফলমূল ও মাছ তরতাজা রাখা হয়, যা খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জীবনঘাতী রোগে। এমনকি পকেটের টাকা খরচ করে বোতলজাত যে বিশুদ্ধ পানি কেনা হয় তার বিশুদ্ধতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
খাদ্যপণ্যে ভেজাল জনস্বাস্থ্যের জন্য এ মুহূর্তে এক নম্বর হুমকি। এ হুমকি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সামাজিক সচেতনতার অভাবে তা কোনো কাজে আসছে না। খাদ্যে ভেজাল এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে কোনো খাদ্যই স্বস্তির সঙ্গে খাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে যে জুস বা পানীয় বিক্রি হয় তার সিংহভাগই মানসম্মত নয়। নামিদামি কোম্পানির তৈরি মিষ্টি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজারে যে ঘি, বাটারঅয়েল ও ভোজ্যতেল বিক্রি হয় তার সিংহভাগই নকল ভেজাল। শিশু খাদ্যের মানও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দুধে ভেজালের রাজত্ব বিরাজ করছে যুগ যুগ ধরে।
এখন যেসব প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই মানসম্মত নয়। আম, কলা, আপেল, খেজুর ইত্যাদি ফল খেতে ভয় পায় এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো ফল পুষ্টির বদলে মানুষকে আরও রোগাক্রান্ত করছে।
খাদ্য সামগ্রী ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণের খবর ছড়িয়ে পড়ার ফলে দেশের সাধারণ ভোক্তারা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। হাইকোর্ট খাদ্যে ব্যাপক ভেজাল মেশানোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন। হাইকোর্ট তার নির্দেশে বলেছেন, বারবার বলার পরেও ভয়ঙ্কর এই অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। সরকারের ঢিলেঢালা মনিটরিং ব্যবস্থা এবং ভেজালের বিরুদ্ধে আইনের যথার্থ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর প্রবণতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও কৃষক খাদ্য সামগ্রীতে এবং কৃষি পণ্যে মানুষ ও প্রাণীর জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে আসছে অতি মুনাফার লোভে।
দুধে মেলামাইন মেশানোর অপরাধে চীনে যেখানে অপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর হয়, বাংলাদেশে ঠিক একই অপরাধে শাস্তি হয় মাত্র তিন মাস জেল। এ ধরনের অপরাধের কোন শাস্তি না হওয়ার কারণেই বাংলাদেশে আজ খাদ্যে ভেজাল মেশানো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানেও অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে। এদিকে প্রায় প্রতিটি খাদ্যসামগ্রীর বিষক্রিয়ার ফলে কিডনি ও লিভারের অসুখে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতা আসলে দেশবাসীর বিরুদ্ধে, খাদ্যে ভেজালকারীদের পক্ষে যাচ্ছে। সরকারকে খাদ্যে ভেজালকারীর বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্যের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
খাদ্যে নকল ভেজাল বন্ধে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলে এ আপদ থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নকল ভেজালের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারীদের সামাজিকভাবে চিহ্নিত করে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন