আতিকুর রহমান নগরী : আমি বাঙালি, কারণ আমার বাপ-দাদারা ছিলেন বাঙালি। আমি বাঙালি হিসেবে ফখর করি। গৌরবে আমি আত্মহারা হয়ে যাই। জন্মের পর থেকে আমরা আমাদের মায়ের মুখে যে ভাষা শুনে আসছি, সেটাই আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমরা নিজের মায়ের মতো করেই মাতৃভাষাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক শ্রদ্ধা ও ভক্তি করি। মাতৃভাষার জন্য একমাত্র বাংলা মায়ের সাহসী ছেলেরাই লড়াই করেছেন, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাঙালি সমাজে বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বলতে গেলে বাঙালি মুসলমানের আত্ম-অন্বেষায় যে ভাষা চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল, তার সূত্র ধরেই ভারতবিভাগোত্তর পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকাতে ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে তা বিরাট আকার ধারণ করে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৯)। ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে আমরা ভাষা সৈনিক বলি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে আমাদের বাংলা ভাষা পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎত্তম ভাষা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বর্তমানে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ ২৫ কোটিরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বাঙালির মাতৃভাষার জন্য এই আত্মত্যাগের ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্যারিসে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে ভাষার জন্য এই বিরাট আত্মত্যাগের ঘটনাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরপর থেকেই বিশ্বের সব দেশ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। খাতা-ডায়েরির পরিবর্তে ট্যাব-নোটবুক, প্যাড হাতে আসতে শুরু করেছে; তাই কাগজ-কলমের ব্যবহার অনেকাংশে কমতেছে। কোনো কিছুর প্রয়োজন দেখা দিলে সবজান্তা গুগলে সার্চ করে বের করে জরুরত মেটাই। এককথায় তথ্য-প্রযুক্তির ওপর ভর করে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। মূলত একটি সমন্বিত প্রযুক্তি যা আমাদের যোগাযোগ, মোবাইল, অডিও-ভিডিও, কম্পিউটিং সম্প্রচারসহ আরো বহুবিদ কাজের সমষ্টি। তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রয়েছে নীবিড় সম্পর্ক। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার দিন-দিন বাড়ছে। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে অগ্রগতি হয়েছে এর সুফল আর্থসামাজিক খাতে বিলিয়ে দিতে হবে। তথ্য ও প্রযুক্তির ছোঁয়া পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যমান; বাংলাদেশও এর থেকে পিছিয়ে নেই। দিন-দিন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই যাচ্ছে। সরকার দেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১০ সালের ৩০ জুন তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত করতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশনাল সদস্যপদ লাভ করে আমাদের দেশ।
বাংলাদেশ একটি ছোট্ট এবং জনবহুল দেশ। এদেশের অধিকাংশ লোক অল্পশিক্ষিত হওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ফলাফল বা অবদান সম্পর্কে খুব একটা অবগত নন তারা। মূলত তথ্য ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় যেগুলো প্রায়ই ইংরেজি দিয়ে লেখা থাকে। তাই বাংলাদেশের মতো সাধারণ মানুষদের বুঝতে সমস্যা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার ও সাধারণ জনগণকে তথ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করাতে হলে অবশ্যই একে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য করতে হবে। সে লক্ষ্যে এ ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ মাতৃভাষার অর্ন্তভুক্তি দরকার।
অপরদিকে তথ্য ও প্রযুক্তির অবদান ইংরেজির পাশাপাশি এখন বাংলাতেই সম্ভব হচ্ছে। কম্পিউটারে বাংলা ভাষা নানাভাবে লেখা যায়। কেউ বিজয়, কেউ অভ্র, আবার কেউবা অন্য কোনো কি-বোর্ড, লে-আউট ব্যবহার করে বাংলা লিখছেন। অনলাইনে বাংলা ভাষাতে ই-বুক ও পত্র-পত্রিকা প্রকাশ, গবেষণা, ওয়েবসাইট নির্মাণ, তথ্য ও ছবি অনুসন্ধান, ই-মেইল আদান-প্রদান, ব্লগিং ইত্যাদি করা যাচ্ছে। মোবাইলফোনে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা যুক্ত করায় অল্পশিক্ষিত, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ সবাই মাতৃভাষা বুঝতে ও চাইলেই সহজে ব্যবহার করতে পারছেন। ফলে উন্নত দেশগুলোর ন্যায় বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও এখন সহজেই কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি ব্যবহার করছেন এবং উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টাও করছেন। এইতো কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বাজারে আসে ফায়ারফক্স ওএস। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যা সম্পূর্ণ বাংলায় এমনভাবে লোকালাইজ করেছে যা পৃথিবীর সব ভাষাকেই মাতৃভাষায় উপস্থাপন করে যার দরুণ বিশ্ব এখন বাঙালির হাতের মুঠোয় চলে এসছে। আর তাদের লক্ষ্যে যেহেতু সাধারণ মানুষ, গ্রাম অঞ্চলের গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে খেটে খাওয়া মানুষ। কারণ গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, অল্পশিক্ষিত মানুষেরা আমাদের মাতৃভাষাকেই সহজে বুঝতে পারে।
পৃথিবীর কোনো ভাষা টিকে থাকবেÑগুটেনবার্গের ছাপাখানা আবিষ্কারের আগে এ প্রশ্নের উত্তরটা ছিল সহজ। বলা হতো, সেসব ভাষাই টিকে থাকবে, যেগুলোর লিখিত রূপ আছে। যে ভাষাগুলো কেবল ‘কথাবার্তায়’ চলে, তা পরিবর্তন হয়ে একসময় অজানায় পাড়ি জমাবে। ছাপাখানা আবিষ্ককারের পর, ব্যাপারটা অনেকখানি পাল্টে গেল। তখন বোঝা গেল, ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন তার ‘মুদ্রণরূপ’। পরের ইতিহাস অনেক দ্রুত এগিয়েছে। যে ভাষাগুলো তাদের অক্ষরের ছাপ পায়নি, সিসাতে তারা হারিয়ে যেতে শুরু করলো। বলা যায়, ভাষার ওপর প্রযুক্তির ছড়ি ঘোরানো সেই থেকে। এরপর টাইপরাইটার, ফটোটাইপ সেটি ক্রমশ উন্নত প্রযুক্তি! আসতে শুরু করলো। বিশ শতকের দিকে কম্পিউটার, কম্পিউটারের নিজের ভাষা কেবল ‘১’ আর ‘০’। তার সে ভাষা মানুষ সেভাবে বোঝে না, তাই তৈরি করা হলো নিয়মকানুন, অনুবাদক। আমাদের ভাষাকে কম্পিউটারের ভাষায় প্রকাশের জন্য একটা মোর্সকোডের মতো ম্যাপ বানানো হলো (মোর্সকোড হলো ড্যাশ আর ডটের মাধ্যমে ইংরেজি বর্ণমালা বোঝানোর সংকেতলিপি। টেলিগ্রাফে ব্যবহৃত হয়)। এগুলো কিন্তু মুশকিল নয়, বরং প্রযুক্তির ধারাবাহিক ক্রমবিকাশ। শিল্প ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ এই পৃথিবীর সবখানে এক সাথে হয়নি। ফলে কম্পিউটার নামের যন্ত্রটির বিকাশের সাথে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সবাই ছিলেন ইংরেজি ভাষাভাষী। ফলে তারা কেবল তাদের ভাষার (ইংরেজি) কথা ভেবে যাবতীয় কল-কব্জা, নীতিমালা বানিয়েছেন। কম্পিউটারের ব্যাপারটা এমন দ্রুত গতিতে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। অন্য ভাষী লোকেরা তাদের মতো করে, নিজ ভাষায় ব্যবহার করতে চাইল। কম্পিউটারবিদরা পড়লেন মহাবিপাকে কারণ, সব তো বানানো হয়েছে ইংরেজিকে কেন্দ্র করে। ‘যত মুশকিল তত আসান’ কাজে সবাই রাস্তাও বের করে ফেললেন। দুটো রাস্তার প্রথমটিও ইংরেজির সঙ্গে সহাবস্থান, আশু করণীয় হিসেবে। ফলে ইংরেজি কম্পিউটারে জাপানি, আরবি এমনকি বাংলা ভাষায় কাজ করা সহজ হয়ে গেল। এ কাজটা করার সময় কয়েকটি জাতি প্রথমেই ম্যাপের ব্যাপারে একমত হয়েছে। যেমন ভারতীয়রা, তারা আসকি থেকে ইসকি বানিয়ে নিয়ে সবাই সেটা মেনে চলেছে। আবার অনেক দেশে আসকির খালি জায়গাগুলো ‘যে যেমন খুশি’ তেমনই ব্যবহার করেছে। যেমন- আমরা। ফলে আমরা কম্পিউটারে বাংলা লিখতে পারলাম বটে, তবে আমার লেখা আর আপনার কম্পিউটারে ‘পড়া’ যায় না! এভাবে কম্পিউটারে ভাষার ‘স্থানীয়’ সমাধানের পাশাপাশি কাজ হলো ‘আন্তর্জাতিক’ সমাধানের। ফলাফল হিসেবে পাওয়া গেল ‘ইউনিকোড’। আসকিতে ছিল মোট ২৫৬টি সংকেত। ইউনিকোডে হলো ৬৫ হাজারেরও বেশি!
পৃথিবীর আর দশটি ভাষার মতো আমার মায়ের ভাষাও ঢুকে গেল ইউনিকোডে। অর্থাৎ ইউনিকোডে নির্ধারিত হয়ে গেল বাংলা ভাষার ‘ক’-কে কম্পিউটার কোন সংকেত হিসেবে চিনবে। যে সফটওয়্যারগুলো ইউনিকোড মেনে চলে তাদের বেলায় সব ‘ক’ একই সংকেতে চেনা যাবে। এভাবে আমাদের কম্পিউটারে বাংলা লেখার একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান হয়ে গেল। এখন সেটা মেনে নিলেই হয়। ইতোমধ্যে দেশে ও দেশের বাইরের অগুনতি বাংলাপ্রেমী তাদের চেষ্টা ও অধ্যবসায়ে ইউনিকোডে বাংলা লেখার নানা উপকরণ হাজির করে ফেলেছেন। ফলে ধীরে ধীরে হলেও কম্পিউটারে বাংলা ভাষা একটা প্রমিতমানের দিকে এগুতে শুরু করল। তবে ইউনিকোডে বাংলার এই প্রচলন কেবল যে লেখালেখির সমস্যার সমাধান করেছে, তা কিন্তু নয়। আগে যেহেতু আমরা কেবল কম্পিউটারে লেখালেখি বা হিসাব-নিকাশ করতাম, সেহেতু আমাদের সব ‘বাংলা সমাধান’ ছিল প্রোগ্রাম-নির্ভর। ইউনিকোড এসে আমাদের প্রোগ্রাম-নির্ভরতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। অর্থাৎ এখন আপনার কম্পিউটারে যদি ইউনিকোড সমর্থিত বাংলা চালু থাকে, তাহলে আপনি বাংলায় যেমন লেখালেখি বা হিসাব করতে পারবেন তা-ই নয়, আপনি পারবেন আপনার মায়ের ভাষায় ই-মেইল লিখতে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস লাইনটি বাংলায় লিখতে, ওয়েবসাইটটি বাংলায় সাজাতে, দিনপঞ্জি বাংলায় লিখতে কিংবা বাংলাতেই তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদান করতে! বলা যায়, একবারেই সব সমস্যার সমাধান। ইউনিকোডের প্রচলনে ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগের যতটা বিকাশ আমরা গত কয়েক বছরে দেখেছি, সরকারি ক্ষেত্রে ততটা দেখা যায়নি। তবে ২০০৮ সালে ভোটার তালিকা করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রবলভাবে সরকারি কর্মকা-কে ইউনিকোডে কাজ করেছে। দেশের সবচেয়ে বড় তথ্যভা-ারটি (ডাটাবেইস) বাংলা ভাষায়, ইউনিকোডেই হয়েছে। সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে পাওয়া গেছে ‘নিকস’ নামের একগুচ্ছ বাংলা ফন্ট এবং পুরোনো দলিল-দস্তাবেজ ইউনিকোডে রূপান্তরের জন্য রূপান্তরক (কনভার্টার)। কাজেই শুরুর প্রশ্নের একটা উত্তর আমরা পেয়ে যাচ্ছি। ইউনিকোডে সমর্থিত হলে একটি ভাষা টিকে যাবে কম্পিউটার জগতে এবং এর পাশাপাশি বস্তু জগতেও। তবে খটকা একটা থেকেই যাচ্ছে। কেবল ইউনিকোডে ম্যাপিং, কি-বোর্ড আর সফটওয়্যার থাকলেই সাইবার জগতে বাংলা ভাষা টিকে যাবে? উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের দ্বিতীয় দুনিয়া, ইন্টারনেটে। উনিশ শতকের সত্তরের দশকের শেষভাগে গবেষণাকাজের সহযোগিতার জন্য যে নেটওয়ার্কের জন্য, ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জোয়ারে সেটি এখন ঢুকে পড়েছে আমাদের ঘরেও। ইন্টারনেটের এক বিশাল জাল ক্রমেই মানব জাতিকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলছে সাইবার জগতের সূত্রে। সেই ইন্টারনেটেই তাহলে টিকে থাকতে হবে ভাষাকে! কেমন করে?
ইন্টারনেটে কেন মানুষ ঢোকে? সহজ জবাব তথ্য খুঁজতে, জানতে। এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটে যা কিছু পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগ ঠিক করে বললে ৮০-৯০ শতাংশ হলো ইংরেজি ভাষায়। ফলে ইংরেজি না জানলে সেখান থেকে কিছু বের করে আনা মুশকিল। আমাদের মতো দেশগুলোর তাতে আবার সমস্যা! এখন আমাদের দুটো পথ। নিজের মায়ের মুখে ইংরেজি ভাষা বসিয়ে দেয়া, প্রথমটা। অনেকেই আছে যারা এই মতবাদে বিশ্বাসী। গ্লোবাল ভিলেজের দোহাই দিয়ে তারা আমাদের ভাষা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিতে চায়। তবে আমরা তা কখনোই চাই না। ১৯৫২ সালে যে কারণে মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছি, ঠিক সে কারণেই আমরা ইন্টারনেটে মায়ের ভাষা চায়। বায়ান্ন’র সঙ্গে পার্থক্য হলো, তখন আমাদের ‘চাওয়ার’ দিন ছিল, এখন আমাদের ‘করার’ দিন। ইন্টারনেটে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার সব উপকরণই আমাদের আছে। দেশে এমনকি গড়ে উঠেছে স্বেচ্ছাসেবকদের এক বড় বাহিনীও। অনেকেই হয়তো জানে, ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় তথ্যভা-ার বাংলা উইকিপিডিয়া গড়ে তুলেছে একদল স্বেচ্ছাসেবী। রয়েছে বাংলা ভাষায় দিনপঞ্জি লেখার অনেক সাইট। বেশ কিছু ওয়েবসাইট এখন সম্পূর্ণ বাংলায়! এসবই আমাদের ভাষায় পতাকা উড়িয়েছে ইন্টারনেটে। তবে সেটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী, পারিশ্রমিকভিত্তিক সব ধরনের উদ্যোগ। বাংলা ভাষার সব সেরা সম্পদ, যা ইতোমধ্যে পাবলিক ডোমেইনে চলে এসেছে, সেগুলোকে ইন্টারনেটে উন্মুক্ত করা যায়। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন, বেগম রোকেয়াসহ সব মনীষীর সৃষ্টিকর্ম ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হোক। সরকারের কাছে গচ্ছিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সব ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ, ছবি, চলচ্চিত্রকে জনগণের সম্পদ (পাবলিক ডোমেইন) হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলো ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হোক। সরকারি পাঠ্যপুস্তকগুলোও ছড়িয়ে দেয়া হোক সাইবার জগতে। সব সরকারি ওয়েবসাইটে বাংলাকে বাধ্যতামূলক করে, বাংলা ভাষায় যেন ক্রেডিটকার্ডের লেনদেন করা যায়, এর আয়োজনও করা হোক। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এও জানি, ইন্টারনেটে আমার মায়ের ভাষাকে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করার লড়াইটা করতে হবে, বদলে দেয়ার প্রত্যাশী তরুণ প্রজন্মকে বাংলা ভাষায় ই-মেইল লিখে (রোমান হরফে নয়) তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদান করে। অতএব আসুন, ফেসবুক-টুইটার, ট্যাঙ্গো-বাইবার, হয়াটসআপ, ওয়েব-ব্লগসহ ইন্টারনেট দুনিয়ার সবস্থানে সক্রিয় হয়ে নিজ মাতৃভাষা বাংলার প্রেম বুকে লালন করে অনুপম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সংগ্রাম অব্যাহত রাখি অনাদর্শ আর পরাশক্তির বিরুদ্ধে। তাতেই বাড়বে বদলে দেয়ার শক্তি। ইতিহাস পরিবর্তনের জন্য রুখে দাঁড়াতে হয়েছে তরুণদেরই। এখন সেটা করতে হবে ইউনিকোড সমর্থিত কি-বোর্ডে ঝুঁকে, তথ্য-প্রযুক্তি, ইন্টারনেট তথা সাইবার জগতে।
ষ লেখক : প্রাবন্ধিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন