রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নামসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে চলছে অর্থবাণিজ্য

সরকারি অর্থে নিজস্ব বাড়ি, শিক্ষক নেই, হয় না পাঠদান

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা : বাগেরহাটের শরণখোলায় নামসর্বস্ব তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে দীর্ঘদিন ধরে অর্থবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। সরকারি নীতিমালারও তোয়াক্কা করছে না তারা। এগুলো হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক কৃষি ইনস্টিটিউট (কোড নম্বর- ৩৬০৭০), মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট (কোড নম্বর-৩৬০৯৮), এবং কোহিনুর হক মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ (কোড নম্বর-৩৬০৮০)। সাইনবোর্ড সর্বস্ব একই পরিবারের ওই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোর্ড থেকে শুধুমাত্র পাঠদানের অনুমতি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে নামমাত্র শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক নেই, নিয়মিত পাঠদানও চলে না। অথচ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি অর্থে নিজস্ব বাড়ি তৈরিসহ বছরের পর বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে অর্থবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ওই চক্রটি। এলাকার সচেতন মহলে এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এম সাইফুল ইসলাম খোকন তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক হাওলাদারের নামে কোন্তাকাটা ইউনিয়নের তালতলী এলাকায় ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এবং একই ইউনিয়নের রাজৈর এলাকায় শরণখোলা ডিগ্রি কলেজের পাশেই ২০১১ সালে তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন কোহিনূর হক মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ। তার ভাই শরণখোলা ডিগ্রি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক মো. আমিনুল ইসলাম মামুন ২০০৯ সালে গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক কৃষি ইনস্টিটিউট। একই সাথে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্বও পালন করছেন। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানের বাস্তবিক অর্থে কোনো কার্যক্রম নেই। তালতলীতে একটি টিনশেড ভবনে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কাগজ-কলমে দেখানো হচ্ছে দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এবং কোহিনুর হকের নামে শিক্ষক আমিনুল ইসলাম মামুনের নিজস্ব বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝোলানো রয়েছে। এছাড়া, তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন সময় প্রায় অর্ধশত মেট্রিক টন টিআর, কাবিখাসহ সরকারি অনুদান বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এর নামমাত্র কাজ করে বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তিন প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটির অনুকূলে ১৫ লাখ টাকা করে ব্যাংক সলভেন্সি (আর্থিক সচ্ছলতা) থাকার কথা থাকলেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে শরণখোলার কোনো ব্যাংকে একটি টাকাও জমা নেই। এমনকি তিন প্রতিষ্ঠানের নামে যে পরিমাণ জমি থাকার কথা তাও নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে চার বছরের কৃষি ডিপ্লোমাসহ বিভিন্ন শাখায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। হাজিরা খাতায় দেখানো হচ্ছে নিয়মিত পাঠদান। কিন্তু বাস্তবে কোনো বিভাগেই কোনো শিক্ষক নেই, পাঠদানও হয় না। শুধুমাত্র ৬ মাস পর পর ভাড়া করা লোকদের দিয়ে সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়া হয়। বোর্ড পরীক্ষাও চলে একইভাবে। পরীক্ষায় চলে নকলের হিড়িক। তিন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠাতা এম সাইফুল ইসলাম খোকনের ছোট ভাই শরণখোলা ডিগ্রি কলেজেরে বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক মো. আমিনুল ইসলাম মামুন। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি একাই। একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলাম মামুন বলেন, আমি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনভাতা ভোগ করে থাকি। আমার মূল প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক কৃষি ইনস্টিটিউটে পার্টটাইম দায়িত্ব পালন করি। এটা স্থানীয় প্রশাসন অবহিত আছে। প্রতিষ্ঠাতা এম সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল নীতিমালা অনুসরণ করেই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোর্ডের নীতিমালা অনুসরণ না করে পরিচালিত হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন