বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কুষ্টিয়ায় ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : কুষ্টিয়ায় ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সেই সাথে তীব্র যানজটে নাকাল হচ্ছে শহরবাসী। বিশেষ করে শহর এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অনুমোদনহীন এসব অটোরিকশা। অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচলকারী ইজিবাইকগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অলিগলিসহ মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লাইসেন্সবিহীন এসব ইজিবাইক। এসব অবৈধ ইজিবাইকের অদক্ষ চালক, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেওয়া এবং যাত্রী উঠানো-নামানোর কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। আহত হয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করেছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। সবশেষ ২০১৬ সালের গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ট্রাকচাপায় ইজিবাইকের তিন যাত্রী নিহত হয়। নিহতরা হলেনÑ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের ছানোয়ারের মেয়ে সাদিয়া আক্তার ছন্দা (১৫)। সে ঝাউদিয়া বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী এবং এরই পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দালপুরের গোপালপুর গ্রামের উজিরের ছেলে রবিউল (৩৫)। সে ওই ছাত্রীর মামা। নিহত অপরজন কুমারখালী উপজেলার কমলাপুর জোতপাড়া এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে ফজলু (৫০)। তিনি কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেট এলাকার আবাসিক নিউ ডায়মন্ড হোটেলের মালিক। কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভা থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৭টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৌর এলাকায় বর্তমানে কমপক্ষে চার গুণ ইজিবাইক চলছে। এসব ইজিবাইকের চালকরা খুবই অদক্ষ এবং বিভিন্ন পেশা থেকে এসেছেন। কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইমরান আলী জানান, শহরের মধ্যে অবৈধ যানবাহন পেলে আটক করি। আমরা অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। শহরের মজমপুর এলাকায় ট্রাফিক কার্যালয়ের সার্জেন্ট সুমন বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন সড়কে চলাচল করলেও শহরের এনএস রোড ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বটতৈল থেকে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ত্রিমোহনী পর্যন্ত আট কিলোমিটার এলাকায় ইজিবাইক বেশি চলাচল করছে। এসব সড়কে চলতে গিয়ে চালকরা প্রতিযোগিতা করেন। যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানো হয় ও ইউটার্ন নেন। এতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এ নিয়ে পৌরসভার তদারকি দরকার। তিনি বলেন, মহাসড়কে ইজিবাইক চালানো একেবারে অবৈধ। মহাসড়কটি পৌর এলাকার ভেতরে হওয়ায় সেটা দেখভাল করার দায়িত্ব পৌরসভার। পৌর এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ইজিবাইকগুলোর কারণে যানজট হয়। বেপরোয়া চলাচলের কারণে অন্য যানবাহনের ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সড়কগুলোতে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শহর ও শহরতলির স্বল্প আয়ের মানুষ এসব অটোরিকশা চালায়। এ ছাড়া শহরতলির বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন চলছে শত শত অটোরিকশা। অদক্ষ চালকরা এসব অটোরিকশা ভাড়ায় নিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলাচল করায় দুর্ঘটনার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন না মেনে যে যার মতো রাস্তায় ৪/৫টি লাইন করে চালাতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় পথচারী বা অন্য যানবাহন চালকদের সঙ্গে অটোরিকশা চালকদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। সূত্র জানায়, এক বছরের জন্য একটি ইজিবাইককে ২ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ইজিবাইকের চালক নিয়মের ধার ধারেন না। গলিপথ থেকে শুরু করে মহাসড়ক পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ান। এদিকে, একজন চালক প্রতিদিন একটি অটোরিকশার মালিককে ভাড়া দেন সাড়ে তিন থেকে ৪০০ টাকা। অন্যদিকে ভাড়া দিয়েও চালক সারা দিন ওই অটোরিকশা চালিয়ে আয় করেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়াও এসব অটোরিকশার পেছনে প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে। ফলে বাড়তি এ বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌরসভার লাইসেন্স শাখার পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় সময় পৌরসভায় ইজিবাইকের লাইসেন্স করতে বলা হয়। না করলে পৌরসভার ভেতরে আটকে রাখা হয়। পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ রানভীর আহমেদ বলেন, গত মাসে মাসিক সভায় ইজিবাইকের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইকের চলাচলে বিধি আরোপসহ কিছু বিষয় আলোচনা হয়েছে। অচিরেই একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু জানান, শহর ও শহরতলিতে ইজিবাইকের যে বেপরোয়া চলাচল, তা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বা পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে একদিকে বাইপাস নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের সব যানবাহন শহরের মধ্য দিয়ে যায়। এ ছাড়াও কুষ্টিয়ার বিভন্ন শিল্পকারখানার গাড়িগুলো শহরের মধ্যদিয়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি রেলগেটের কারণে দুইপাশে প্রচুর যানজট লেগে থাকে। তিনি আরো বলেন, শহরে যানজট নিরসনে ফোরলেনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় চিসিম জানান, মহাসড়কে ইজিবাইক চালানো অবৈধ। এখানকার বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পৌরসভার। কিন্তু পৌরসভা এসব চালানোর অনুমতি দিচ্ছে, অথচ তদারকি করছে না। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জহির রায়হান জানান, এসব ইজিবাইকের কারণে কিছুটা দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। অনেক বিপথগামী সুপথে ফিরে কাজ করে খাচ্ছে। এসব মাথায় রেখে শহর ও মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পৌরসভা ও জেলা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন