শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

বাংলাদেশকে প্রকৃত শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে জাতীয় সংস্কৃতি লালনের কোনো বিকল্প নেই

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবদুল গফুর : একটা কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, বাংলা ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। কথাটা সত্য। কিন্তু পূর্ণ সত্য নয়। পূর্ণ সত্য হলে বাংলাদেশের আশপাশের আরও যেসব বাংলাভাষাভাষী জনপদ ছিল, সেগুলোও স্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্গত হতো। সেগুলো অবাঙালি নেতৃত্বাধীন আরেকটি রাষ্ট্রের (ভারত) অন্তর্ভুক্ত হতো না। যে ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে ওইসব বাংলা ভাষাভাষী জনপদ স্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি সেটি ছিল ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের ধর্মভিত্তিক পার্টিশন।
ইতিহাস পাঠক মাত্রই জানেন, উপমহাদেশে ১৯০ বছর ব্রিটিশ শাসনের অবসানে ১৯৪৭ সালে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা পাকিস্তান নামের দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হয়। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ সেদিন উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হিসেবে পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। ইতিহাস পাঠকগণ এটাও সাক্ষ্য দেবেন যে, উপমহাদেশকে ধর্মভিত্তিক একাধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত করার যে আন্দোলন পাকিস্তান আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করেছে, সে আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানদের ভূমিকাই ছিল প্রধান।
যে রাজনৈতিক সংগঠনটির মাধ্যমে উপমহাদেশের মুসলমানরা ব্রিটিশ শাসনামলে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম পরিচালনা করে সেই নিখিল ভারত মুসলিম লীগের জন্ম হয় ১৯০৬ সালে ঢাকায় নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে। ওই মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে ১৯৪০ সালে উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম সমস্যার বাস্তবতাভিত্তিক সমাধান হিসেবে উপমহাদেশকে হিন্দু ও মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চসমূহে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাঙালি মুসলমানদের তদানীন্তন জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। এই লাহোর প্রস্তাবই পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করে যদিও প্রস্তাবের কোথাও ‘পাকিস্তান’ শব্দ ছিল না।
যাই হোক, ১৯৪০ সালের এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশে পাকিস্তান আন্দোলন পরিচালিত হয়। পরবর্তীকালে উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রাক্কালে ১৯৪৬ সালে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে নির্বাচনে একমাত্র তদানীন্তন অবিভক্ত বঙ্গ প্রদেশেই মুসলিম লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সমর্থ হয়। ফলে দিল্লিতে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ লেজিসলেটারদের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে মূল প্রস্তাব উত্থাপনের সৌভাগ্য অর্জন করেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকারের চিফ মিনিস্টার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানদের এই উপর্যুপরি ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাছে তাদের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তাদের প্রথম থেকেই হতাশ হতে হয়। এই হতাশার প্রথম পর্বেই ছিল রাষ্ট্রভাষা প্রশ্ন। তদানীন্তন সমগ্র পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জন নাগরিক ছিলেন পূর্ব বঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা। তাদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ আমলাদের মধ্যে উর্দু ভাষীদের বিপুল সংখ্যাধিক্যের সুযোগে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই একটা গোপন চেষ্টা শুরু হয়ে যায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার। এর প্রমাণ পাওয়া যায় নতুন রাষ্ট্রের পোস্টকার্ড, এনভেলপ, মানি অর্ডার ফর্ম প্রভৃতিতে শুধু ইংরেজি ও উর্দু ব্যবহার থেকে।
এই পটভূমিতেই ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। যে সংগঠনের মাধ্যমে এই আন্দোলন শুরু হয় তার নাম তমদ্দুন মজলিস। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তরুণ শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাশেম। তিনি এবং তার সহকর্মীরা (সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শামসুল আলম, ফজলুর রহমান ভূঁইয়া, নুরুল হক ভূঁইয়া, সানাউল্লাহ নুরী, শাহেদ আলী, আবদুল গফুর) সবাই ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের উৎসাহী কর্মী। তাদের দৃষ্টিতে ভাষা আন্দোলন ছিল পাকিস্তান আন্দোলনের স্বাভাবিক পরবর্তী অধ্যায়।
১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে জন্ম নেয়া সাংস্কৃতিক সংস্থা তমদ্দুন মজলিস ওই মাসেরই ১৫ তারিখে শুরু করে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন একটি পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে। ওই পুস্তিকার লেখক ছিলেন তিনজন: তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবুল কাশেম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ। আগেই বলেছি অধ্যাপক আবুল কাশেম ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের তরুণ কর্মী। অপরদিকে অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন ও আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের দুটি সাংস্কৃতিক সংস্থা যথাক্রমে ঢাকাকেন্দ্রিক পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ এবং কলকাতাকেন্দ্রিক পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির অন্যতম নেতা।
পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত ঢাকা ও কলকাতাকেন্দ্রিক উভয় সাংস্কৃতিক সংস্থার নামের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান শব্দ উল্লেখ থাকার তাৎপর্য খুঁজতে আমাদের যেতে হয় পাকিস্তান আন্দোলনের মূল ভিত্তি ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে। ওই প্রস্তাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করা হয়, উপমহাদেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাসমূহে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালের দিল্লি কনভেনশনে লাহোর প্রস্তাবের আংশিক সংশোধন করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উত্থাপিত যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় সে প্রস্তাব উত্থাপনকালীন ভাষণে সোহরাওয়ার্দী একপর্যায়ে বলেন, ‘অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, পাকিস্তানই আমার চূড়ান্ত দাবি কিনা। আমি সে প্রশ্নের কোনো জবাব দেব না, তবে আমি এ কথা অবশ্যই বলব যে, এ মুহূর্তে পাকিস্তানই আমার প্রধান দাবি। [দৈনিক ইত্তেফাক, সোহরাওয়ার্দী সংখ্যা, ১৯৬৩]। এর অর্থ লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়ন মোতাবেক উপমহাদেশে মুসলিম অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা তিনি নাকচ করে দিলেন না।
এখানে আরও উল্লেখ করতে হয়, ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের প্রাক্কালে বাংলার মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম এবং কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসুর উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাইরে একটি সার্বভৌম অবিভক্ত বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব ওঠে তার প্রতি মুসলিম লীগ হাই কমান্ডের সমর্থন থাকলেও গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল প্রমুখ অবাঙালি কংগ্রেস নেতা ও শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি প্রমুখ বাঙালি হিন্দু মহাসভা নেতার বিরোধিতার কারণে সে প্রচেষ্টা ভ-ুল হয়ে যায়। তখন শেষোক্ত নেতা (শ্যামা প্রসাদ) এমনও বলেছিলেন, ভারত ভাগ না হলেও বাংলা ভাগ হতেই হবে। তা না হলে বাঙালি হিন্দুরা নাকি চিরতরে বাঙালি মুসলমানের গোলাম হয়ে যাবে! অর্থাৎ তার কাছে বাঙালি মুসলমানের চেয়ে অবাঙালি হিন্দুর আধিপত্য অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।
তাদের এ মনোভাবের আরও বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় উনিশশ একাত্তরে যখন আমাদের জনগণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তখন আমাদের এপার বাংলার সংগ্রামের প্রতি ওপার বাংলার গদগদ সমর্থনকালীন তাদের প্রকৃত রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। আমাদের সংগ্রামের প্রতি তাদের গদগদ সমর্থন থেকে বাংলাদেশের অনেকের ধারণা হয়েছিল, তারাও বুঝি আমাদের মতো বাঙালিদের বৃহত্তর স্বাধীনতার সমর্থক। তাদের তখন বলা হয়েছিল, আমরা যেমন পিন্ডি ছেড়েছি আপনারা দিল্লি ছেড়ে আসুন শক্তিশালী বৃহত্তর বাংলা রাষ্ট্র গড়ে তুলি। তখন তাদের জবাব ছিল, আমরা ভাষা হিসেবে বাঙালি হলেও রাষ্ট্র হিসেবে ভারতীয় নাগরিক থাকাই পছন্দ করি। অর্থাৎ বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিবর্তে অবাঙালী হিন্দু নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রই ছিল তাদের অধিক কাম্য।
এই করুণ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আজ এ সত্য স্বীকার করে নেয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই যে, বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে ইসলাম ও বাংলা ভাষার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির ওপর। প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যতই সাহায্য করে থাকুক, তা যে উদ্দেশ্যহীন ছিল না তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। একাত্তরের মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে আমাদের প্রধান নদী গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করেছে পাশাপাশি অন্যান্য অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ ও গ্রোয়েন নির্মাণ করেছে, বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকায় অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং বিএসএফের মাধ্যমে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের অপহরণ ও হত্যাকা- অব্যাহত রেখে প্রমাণ দিয়েছে যে, সে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী স্বাধীন দেশ হিসেবে নয়, তাদের একটি আশ্রিত রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে অধিক আগ্রহী।
এককালের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের রাজধানী কলকাতায় এখন হিন্দি ভাষীদের আধিপত্য সুপতিষ্ঠিত। দুর্বল সাংস্কৃতিক ভিত্তির সুযোগে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে হিন্দির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। অন্যদিকে যা কিছু আমাদের জাতীয় ও সংস্কৃতির মূল প্রবাহ ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাকেই হেয়প্রতিপন্ন করা এ দেশের এক শ্রেণির হীনমন্যতাগ্রস্ত বৃদ্ধিজীবীর রুটিন ওয়ার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতাকে অজেয় ও শক্তিশালী করে তুলতে হলে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাকে জোরদার ও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধ করে জাতীয় সংস্কৃতি জোরদার করে তোলা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্য যেমন আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির মূল প্রবাহ জোরদার করার দিকে নজর দিতে হবে, তেমনি বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি শিল্পকলার প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতীয় আদর্শ ও জাতীয় সংস্কৃতির ব্যাপক প্রতিফলন ঘটানোর কাজে নিরলস কাজ করে যেতে হবে। সর্বোপরি নেতিবাচক ভূমিকার পরিবর্তে ইতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে সব অবাঞ্ছিত বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করতে হবে। একমাত্র এ পথেই স্বাধীন শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সর্বাত্মক অগ্রগতি সম্ভবপর হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন