বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

প্রতিবন্ধী ৩ ছেলে ও স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে নিয়ে অসহায় পিতার আর্তনাদ

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কামাল হোসেন, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে : হে আল্লাহ তুমি আমার মরণ করো। আমি আর সইতে পারি না। শেষ বয়সে অসুস্থ শরীরে বাজারে বাজারে ভিক্ষা করে ১০ জন সদস্যের পরিবার চালাতে হচ্ছে। একি আমার দ্বারা সম্ভব? আবেগে ভরা ক্ষোভের সাথে কান্নাজড়িত কণ্ঠে উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়াল গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে সাব্বির উদ্দিনের (৭০) সাথে সরজমিনে তার বাড়িতে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, নিজে ডায়বেটিকস, উচ্চরক্তচাপ ও হার্টের সমস্যায় জর্জরিত। ঠিকমত চিকিৎসা করাইতে না পেরে অসুখ দিন দিন বাড়তেই আছে। মরার উপর খাঁড়ার ঘার মত আমার ৫ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে ৩ ছেলে পাগল, ১ ছেলে মাদকাসক্ত, মেয়েটি স্বামী পরিত্যক্ত। মাত্র একটি ছেলে ভাল, সে ঢাকায় থাকে। সাব্বির তার জীবন কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তার বড় ছেলে আধাপাগল আব্দুল খালেক (৪৫) ভ্যান চালিয়ে নিজের সংসার চালায়। দ্বিতীয় ছেলে টানু (৪০) ১০ বছর আগে থেকে পাগল হয়ে শ্মশান ও গোরস্থানকে স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে বেছে নিয়েছে। শুধু খাবারের সময় বাড়ি আসে। খেতে না পেলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারপিট করে। একটি ছেলে রেখে তার বৌ বাপের বাড়ি চলে গেছে। তৃতীয় ছেলে সিটু (৩৫) মাদকাসক্ত হয়ে শুধু বাজারে বাজারে ভবঘুরে। নেশাদ্রব্য কিনতে টাকার প্রয়োজন হলে বাড়ি এসে হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে নেশাদ্রব্য কিনে খায়। চতুর্থ ছেলে এক সন্তানের জনক লালচাঁন (৩০) ৬ বছর আগে মনাকষা বাজারে হলুদের হাট ইজারা নিয়ে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তখন থেকেই আর কোন কাজে না গিয়ে শুধু বাড়িতেই বসে সারাদিন বাড়িতে অলস সময় খাটায়। ছোট ছেলে বিভিন্নস্থানে কামলা হিসাবে কাজ করে। একমাত্র মেয়ে জাহানারা বেগম তালাক প্রাপ্ত হয়ে একটি ছেলে নিয়ে আমার বাড়িতেই আছে। আগে পরের কামলা খেটে ভালই টাকা উপার্জন হতো। বর্তমানে বয়সের ভারে ও তিন ধরনের অসুখের কারণে আর খাটতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে বাজারে ভিক্ষা করি। তা থেকে সংসার চালায় ও ঔষধ কিনি। সাব্বির উদ্দিনের স্ত্রী তুলিয়ারা বেগম জানায়, অসুস্থ স্বামী, পাগল ৩ ছেলে, স্বামী পরিত্যক্ত এক মেয়েসহ পর্বতসম পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মানবেতর জীবনযাপন করলেও  শুধু স্বামীর একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড ছাড়া কোন সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পায়নি। তিনি সরকারি অনুদানের জন্য সবার সুদৃষ্টি কামনা করেন। সাব্বিরের মেয়ে স্বামী পরিত্যক্ত জাহানারা বেগম জানান, স্বামীর পরকীয়াতে বাধা দিতে গিয়ে তালাক প্রাপ্ত হয়ে ৮-১০বছর থেকে বাপের বাড়িতে আছি। মেম্বারকে বলেও একটি কার্ড পায়নি। শত কষ্টের মধ্যে ও বাপের বাড়িতেই থাকতে হয়। পরিবারটি সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী তৌফিকুল আলম মিয়া, একই গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক জিয়া ও পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমানসহ এলাকার অনেকেই জানান, এ পরিবারটি শুধু খড়িয়াল গ্রামেই নয়, মনাকষা ইউনিয়নে এত অসহায় পরিবার আর নেই। এব্যাপারে মনাকষা ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সংশিষ্ট ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কোন সুযোগ-সুবিধা আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই পরিবারকে দেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন