রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গোদাগাড়ীতে জমিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার মণ টমেটো

| প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো: হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রতি বছর শেষ মৌসুমে দাম না পাওয়ায় কৃষককেরা জমি থেকে শ্রমিক দিয়ে টমেটো উঠাচ্ছে না ফলে জমিতে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ টমেটো। গত ১০ বছর ধরে গোদাগাড়ী উপজেলাসহ পৌরসভা এলাকায় হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার আয়াতন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৭শ’ হেক্টর, ব্ল­কের সংখ্যা ২৭টি, মৌজার সংখ্যা ৩৯৪টি, লোক সংখ্যা ২লাখ ৯৭ হাজার (প্রায়)। গত বছর গোদাগাড়ীতে টমেটো আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। এবছর ২ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করা হয়েছে, এদের মধ্যে সালামত, বঙ্গবীর, ভিএলÑ৬৪২, ইউএসÑনসীব, সুফল, বিজলী, রকি, লাভলী, বিপল, মন্টু, মন্টু সুপার জাতটি উল্লেখযোগ্য। টমেটোর জমিতে গাছ, ফুল, ফল ভাল থাকায় চাষিরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। নতুন টমেটো প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায়। ঢাকা, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, চিটাগাং প্রভৃতি একাকার টমেটো ব্যবসায়ীরা গোদাগাড়ী উপজেলা এসে টমেটো ক্রয় করে বস্তা, বক্স, ঝুড়িতে সাজিয়ে শ’ শ’ ট্রাকে বোঝায় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর মৌসুমে কৃষকেরা টমেটোর দাম ভালই পেয়ে থাকেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম পরিমাণ জমিতে টমেটো চাষ করা হচ্ছে। গোদাগাড়ীর কৃষকেরা টমেটো চাষের জন্য আগাম জাতের পারিজা ধান চাষ করেছিল। কিন্তু অনাবৃষ্টি অবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে ধানের ফলন ভাল হয়নি। ধানের নায্য মূল্য না পাওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠেনি। এ ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা জামিতে টমেটো চাষ করেছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় টমেটো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ১টি বিশ্বস্ত সূত্র মতে জানা গেছে , গোদাগাড়ী উপজেলার আয়াতন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৭শ’ হেক্টর, ব্ল­কের সংখ্যা ২৭টি, মৌজার সংখ্যা ৩৯৪টি, লোক সংখ্যা ২লাখ ৯৭ হাজার (প্রায়)। গত বছর গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। এ বছর সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এ বার যে সব জাতের টমেটো চাষ করা হচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে বঙ্গবীর, নায়েক, সবল, সুরক্ষা, জয়, পোষারুপি, হাইটোম, হাইব্রিড ও দেশীজাত। এখানে মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ টমেটো ১৫শ’ টাকা থেকে ২হাজার টাকা, মাঝামাঝি সময়ে ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকা, শেষ সময়ে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। বিক্রিত টমেটো বস্তা, ঝুড়ি, কার্টুনে করে পাবনা, বগুড়া, নাটোর, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মৌসুমের শেষে ক্রেতারা টমেটো ক্রয় করতে চাচ্ছেন না বলে বর্তমানে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। এ উপজেলার কোন প্রকার হিমাগার না থাকায় হাজার হাজার মণ টমেটো সংরক্ষণের অভাবে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গোদাগাড়ী পেলিপ্যাডে, সিএন্ডবি, গিয়াসপুরসহ বিভিন্ন এলাকয় যেখানে টমাটো পাকানো হচ্ছিল সেখানে হাজার হাজার মণ টমেটো কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা ফেলে রেখেছেন। সেগুলো পচে গেছে। ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এ প্রতিবেদককে জানান, এসব কীটনাশক ব্যবহার করা টমেটো খেয়ে লিভার সিরোসিস, ক্যন্সার, জন্ডিস, ক্রণিক, ডিসেন্ট্রিসহ নানা জটিল রোগ হতে পারে।  গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক মে. আলাউদ্দিন  এ প্রতিবেদককে জানান, গত বছর ২ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে ৪০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছিলাম। এবার আড়াই বিঘা জমিতে নায়ক জাতের টমেটো চাষ করেছিলাম। নি¤œমানের বীজের কারণে উৎপাদন খরচ উঠেনি। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানের  সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোদাগাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া টমেটো চাষের জন্য খুব উপযোগী। অন্যান্য ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় এখানে টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটেছে। কিন্তু প্রতি বছর সংরক্ষণের অভাবে হাজার হাজার মণ টমেটো পচে নষ্ট হয়ে যায় এবং মৌসুমের শেষে, দাম কম থাকায় শ্রমিক দিয়ে টমেটো তুলে লাভ হয় না বলে কৃষক জমি থেকে টমেটো তুলতে চায় না। ফলে হাজার হাজার মণ টমেটো জমিতে পচে নষ্ট হয়ে যায়। সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হলে কৃষক আরও বেশি লাভবান হবে ইনসাআল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন