সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জ্বালানি সংকট দূর করতে গোবরের শলা

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : জ্বালানির অভাব দূর করতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় গোবরের তৈরি মুইঠ্যা বা শলা (ঘুঁটে) বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জ্বালানি হিসেবে এসবের চাহিদা থাকায় শীত মৌসুমে উপক‚লজুড়ে গোবরের শলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা। এতে করে নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ঘুঁটে বিক্রি করে সংসারের অভাব দূর করছেন বেশিরভাগ নারী। জানা যায়, অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের শিশু সন্তানদের দিয়ে রাস্তার পাশ, মাঠ বা গবাদিপশুর বিচরণের স্থান থেকে গো-বর্জ্য সংগ্রহ করে থাকে। আবার অনেক নারী পার্শ্ববর্তী সচল পরিবারের গোয়ালঘর থেকেও গো-বর্জ্য সংগ্রহ করেন। পরে নারী ও শিশুরা গৃহস্থালী কাজের ফাঁকে বা অবসরে জ্বালানির জন্য এ ঘুঁটে তৈরি করে। পাটকাঠি, গাছের সরু ডালপালা ও বাঁশের কঞ্চিতে গোবর মাখিয়ে রোদে শুকানো হয়। সরেজমিন উপজেলার বদলপুরা বেড়িবাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কয়েকজন নারী সরু ডালপালা ও বাঁশের কঞ্চিতে মুঠো মুঠো গোবর মাখিয়ে তৈরিকৃত শলাগুলো রোদে শুকাতে দিচ্ছে। এ সময় কথা হয় গোবরের শলা তৈরিতে ব্যস্ত স›দ্বীপের সুফিয়া বেগমের সাথে। স্বামী-সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বদলপুরা মেরিন একাডেমির পাশে বেড়িবাঁধের কুঁড়েঘরে থাকেন সুফিয়া। স্বামী গাছ কাটার কাজ করে যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চলে না। লেখাপড়া না থাকার কারণে কোথাও চাকরি-বাকরি না পেয়ে তিনি এ কাজে ঝুঁকে পড়েন। ঘরের জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে গোবরের লাকড়ি বিক্রি করে যে টাকা পান তিনি তা সংসারে খরচ করেন। একই এলাকায় গোবরের শলা তৈরিতে ব্যস্ত গৃহিণী পারভীন আক্তার (৩০) বলেন, বর্ষা মৌসুমে গোবর সংগ্রহ করে গর্তে জমিয়ে রাখি। শীতকালে শলা বা মুইঠ্যা তৈরি করে মাঠে শুকায়। ভালভাবে শুকানোর পর ঘরের প্রয়োজন মিটিয়ে বাদবাকি আশপাশের চায়ের দোকানিদের কাছে বিক্রি করি। ১০০ শলা লাকড়ির দাম ১৫০ টাকা আর একবস্তা মুইঠ্যা বা ঘুঁটের দাম ২০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তারা আরো জানান, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত পাটখড়ির পাশাপাশি গোবরের তৈরি শলা বা মুইঠ্যার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এ উপজেলায়। তারা জ্বালানির বিকল্প হিসেবে গোবরের তৈরি লাকড়ি (ঘুঁটে) ব্যবহার করছেন। গোবরের তৈরি লাকড়ি দিয়ে নিজেদের জ্বালানি সমস্যা তো দূর হচ্ছে আবার তা বাজারে বিক্রি করে সংসারের অভাব দূর করছেন। গোবরের লাকড়ি তৈরির আগে পরিমাপ মতো পাটখড়ি কেটে গোবর ও তুষ (কুড়া) একত্রে মিশিয়ে পাটখড়িতে মাখিয়ে রোদে শুকাতে হয়। পাশাপাশি মুঠো করে ঘষি বানিয়ে রোদে শুকিয়েও ব্যবহার করা যায়। বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ জানান, দিন দিন জ্বালানি সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। জ্বালানি সংকটের কারণে গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। জ্বালানির অভাবে রান্না করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় গরীব গৃহিণীদের। এমনকি দফায় দফায় গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকে গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গোবরের তৈরি মুইঠ্যা বা শলার লাকড়ি। এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাবেয়া চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, কিছুদিন আগে এর ব্যবহার ছিল গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রায় সব শ্রেণির মানুষ এ গোবরের লাকড়ি স্বল্পমূল্যে কিনে জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের মহিলারা গোবরের শলা লাকড়ি তৈরি করে নিজেদের জ্বালানির চাহিদা মিটিয়েও তা বিক্রি করে সংসারের খরচ চালিয়ে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন