রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দু’পা হারানো এক প্রতিবন্ধীর দুর্বিষহ জীবনের গল্প

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আল আমিন মন্ডল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে : ডাক নাম প্রতিবন্ধী সুলতান। বয়স ৪৫ বছর। সবাই তাঁকে সুলতান আহমেদ নামে ডাকেন। সুলতানের জন্ম বগুড়ার গাবতলী দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের লাংলু দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের মতলুব আহম্মেদের পুত্র। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ৩য় সন্তান। তিনি হঠাৎ লাংলুহাটে সাংবাদিক দেখে ছুটে আসেন। সেখানে তিনি বর্ণানা করেন তাঁর প্রতিবন্ধী জীবনের সংগ্রামী কিছু কথা। সুলতান জানান, ১৯৯৭ সালে গাবতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি দু’পা হারিয়েছেন। হাত ও মাথাসহ শারীরিকভাবে তিনি এখন অচল। এরপর তাঁর জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। প্রায় ৫ বছরে ৮ লাখ টাকা চিকিৎসা করার পর আজ তিনি বড় অসহায়। দু-মুটো ভাত জোটাতে পারছেন না। অর্থের অভাবে চিকিৎসা অনেক আগেই বন্ধ। ফলে তিনি এখন দুর্বিষহভাবে জীবনযাপন করছেন। আজো তিনি পাননি কোনো সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা ও ভাতা কার্ড। ফলে সে জীবনটাকে বাঁচাতে অন্যের ২০ শতক জমিতে রোপণ করে নানা প্রজাতির বৃক্ষের চারা গাছ। নিজের চলাফেরার জন্য ভ্যানগাড়িতে ড্রাইভার হিসাবে রেখেছে রুবেল নামের এক দিনমজুর শ্রমিককে। তিনি তাঁর ডালিয়া নার্সারি থেকে যে টাকার চারা বিক্রি হয় সে টাকায় শ্রমিকের দিনমজুরি ও দু-মুটো ভাত যোগাতে হচ্ছে। এরপর আর্থিক অনাটনের মধ্যেও সে সংগ্রামী জীবনে বেঁচে থাকার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা নেই। নেই কোনো ঔষধ। ফলে তিনি দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট থাকলেও তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাননি। ফলে তিনি নিরুপায় হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিসহ সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাংবাদিকের হাত ধরে অনুরোধ করেন, তাঁর কষ্টের কথাগুলো পত্রিকায় প্রকাশ করার জন্য। সুলতান প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁকে বা তাঁর নার্সারিতে কেউ সহযোগিতা করেননি। সুলতান জানান, গাবতলীতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আজ তিনি অসহায় প্রতিবন্ধী হয়েছেন। সুলতান আরো জানান, ১৯৮৭ সালে সোনাতলা নাজির আকতার কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তিনি জড়িত ছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি দক্ষিণপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেছেন। এরপরও তিনি দীর্ঘদিন যাবত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। যে কোনো আ’লীগের কর্মসূচিতে তিনি ঘরে বসে থাকতে পারেন না। ভ্যানে বসে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালন করতে। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজো তাঁকে কেউ সহানভ‚তির দৃষ্টিতে দেখেননি। পাননি একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড। গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিল্টন হোসাইন জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অবশ্যই সুলতানকে সহযোগিতা করা হবে। গাবতলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বিটুল জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাবতলী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম মুক্তা জানান, শুনে খুব খারাব লাগল। যুবলীগ সবসময় তাঁর পাশে থেকে সহযোগিতা করবে। গাবতলী উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজকর্মী নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিবন্ধী সুলতানের বিষয়টি জানা ছিল না। বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করে দেখা হবে। দক্ষিণপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম সাইফুল জানান, সুলতানের জীবন পরিবর্তনের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড অবশ্যই দেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন