প্রয়াত নেতা কাজী জাফর আহমেদের আত্মজীবনীতে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উদারতার প্রভূত প্রশংসা এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়াকে ক‚টনীতিক সেরা সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তরফদার প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রকাশিত কাজী জাফর আহমদের ‘আমার রাজনীতির ৬০ বছর জোয়ার ভাটার কথন’ শীর্ষক আত্মজীবনীতে তার সংগ্রামী ও আন্দোলনমুখর রাজনৈতিক জীবনের নানা অধ্যায়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করেছেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ১৯৭৩ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে কাজী জাফর আহমেদ লিখেছেন টঙ্গি থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি নির্দেশে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করার ঘটনায় তিনি বলেন, সে সময় বামপন্থী জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে টঙ্গির একটি কারখানায় গেলে জাতীয় শ্রমিক লীগের লালবাহিনীর কর্মীরা তাকে ঘেরাও করে ফেলে।
ঘেরাও থেকে বের হওয়ার কোন উপায় না পেয়ে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত কাজী জাফর আহমেদ সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসায় টেলিফোন করে জানান যে, শ্রমিক লীগের কর্মীরা তাকে টঙ্গির একটি কারখানায় ঘেরাও করে রেখেছে এখান থেকে যদি আমি বের হতে না পারি, তাহলে আমি জীবন নিয়ে হয়তো আর ফিরতে পারব না। কাজী জাফর আহমেদ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আমার কথা শুনে কারখানার লোকেশন সম্পর্কে জেনে নিয়ে বললেন, কিছু সময়ের মধ্যেই তোকে উদ্ধারের জন্য আমি ব্যবস্থা করছি। এরপর কাজী জাফর আহমেদের বর্ণনায় জানা যায়, তার টেলিফোন পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টেলিফোনে বিশেষ নির্দেশ দিয়ে জানান যে, কাজী জাফর আহমদ টঙ্গিতে শ্রমিক লীগের ঘেরাওয়ের মধ্যে আছে। তাকে উদ্ধার করে নিয়ে সরাসরি আমার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসায় নিয়ে আসতে হবে, তার সঙ্গে আমার একটি বৈঠক আছে। এরপর কিছু সময়ের মধ্যেই টঙ্গি থানার তৎকালীন ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একটি স্কোয়াড টঙ্গির কারখানায় গিয়ে শ্রমিক লীগের ঘেরাওয়ের মধ্য থেকে তাকে উদ্ধার করে সরাসরি নিয়ে আসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসায়। একজন বিরোধী দলের নেতা হওয়া সত্তে¡ও কাজী জাফর আহমেদের টেলিফোন পেয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য পুলিশ পাঠানোর কথা উল্লেখ করে আত্মজীবনীতে বলা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উদারতা ছিল এ রকমই বিশাল ও মহানুভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দূরদর্শীতা, কৌশল ও দক্ষ কূটনীতির কথা উল্লেখ করে কাজী জাফর আহমেদ লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে মাত্র তিন মাসের মাথায় ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনীতিক কৌশলের অন্যতম সেরা সাফল্য- কারণ বিশ্বের ইতিহাসে কোনো দেশ থেকে মিত্রবাহিনীর এত দ্রæত প্রত্যাহার করে নেয়ার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন