জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা : আলুতে স্বয়ংসম্পন্ন জয়পুরহাট জেলায় লোকশানে ঘেরা আলু ফসল ঘরে তোলার পর বাজারে বিক্রি করে মূলধনী উঠছে না কৃষকের। ধারদেনা করে আলু লাগিয়ে লাভের আশায় সেই অর্থ দিয়ে বোরো চাষে ভাবনা থাকলেও কৃষক তা আর করতে পারছে না। আলু বিক্রির পর লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়ে বোরো চাষ শুরু করেছে জয়পুরহাটের কৃষকরা। ইতি মধ্যে প্রায় সব জাতেরই আলু উত্তোলন শেষের দিকে। আলুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে কৃষক শুরু করেছে বোরো চাষ। জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় এবার ৭২ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ টন। গত ২০১৫-১৬ মৌসুমে জেলায় ৭১ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল এবং এতে উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৭ টন। যা জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে আলুর ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বেশী লাভের আশায় বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক ও মহাজনদের নিকট থেকে ধারদেনা ও ঋণ করে ফেলায় অধিকাংশ কৃষক এবার আলু চাষাবাদ করেছিলেন। কিন্তু আলুর দাম কম হওয়ায় ঋণ পরিশোধ দূরের কথা উৎপাদন খরচ উঠছে না। বর্তমান বাজারে গ্যানোলা আলু প্রতি মণ ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, কার্ডিনাল, অ্যারোস্টিক ৩০০ টাকা, ডায়মন্ড ৩২০ থেকে ৩৫০ এবং বিভিন্ন জাতের পাকড়ি আলু ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এসব আলু প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৫৫ মণ পর্যন্ত ফলন হলেও সার, বীজ, বালাইনাশক, সেচ দেয়া ও মজুরিসহ উৎপাদন খরচ হয়েছে। ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা।
লাভের আশায় আলুর চাষ করে এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এদিকে, বোরো ধানের বীজতলা তৈরী সম্পন্ন হওয়ায় আলুর লোকসান ঘাড়ে নিয়ে কৃষকরা এখন সময় গুনছে বোরো চাষ নিয়ে। বর্তমানে অধিকাংশ জমিতে আলু থাকলেও বেশী দাম ও ফলনের অপেক্ষায় না থেকে কৃষকরা জমি থেকে আলু উত্তোলন ও বোরো ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার ইকরগাড়া গ্রামের কৃষক মতিয়র রহমান, কালাই উপজেলার হাতিয়ার গ্রামের কৃষক কবিরুল হোসেন, পাঁচবিবি উপজেলার বুধইল গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান, আক্কেলপুর উপজেলার মাতাপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান, সদর উপজেলার কাশিয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান ও এনামুল হক বলেন জয়পুরহাট জেলার মাটি আলু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী এজেলার উৎপাদিত আলু নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান এবং বিদেশেও রপ্তানী হয়। বর্তমানে বাজার মূল্য অব্যহত থাকলে আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারাবে তাই আলুর এ অপূরণীয় লোকসান পুশে নিতে এখন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। এবার জেলায় ৪২ হাজার ৫৩০ ত্রিশ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৮০ আশি হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর, আক্কেলপুর উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর ও ক্ষেতলাল উপজেলায় ১১ হাজার ২০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বেশী জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে হাইব্রিড গ্যানোলা ও ম্যানোলা জাতের আলু ১১০ থেকে ১২০ মণ, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, রুমানা, বট পাগড়ী, লেডিস রোজেটা, কারেজ, ফেন্সিনা, সুন্দরী জাতের আলু ৭০-৮০ মণ, পাহাড়ী ৬০-৭০ মণ প্রবিন্ড ৬৫-৭০ মণ এবং দেশী জাতের আলু ৬০-৬৫ মণ উৎপাদন হয়েছে। তারা উভয়ে বলেন ধারদেনা করে আলু লাগিয়ে সে আলু বাজারে বিক্রি করে খরচ উঠছে না। বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক, মহাজনদের নিকট ধারদেনা শোধ করা যাচ্ছে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সধেন্দ্রনাথ রায় বলেন চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় আলুতে কোন রোগবালাই হয়নি। ফলে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে হিমাগার গুলিতে নির্দেশনা মেনে সঠিক সময়ে পুষ্ট আলু মজুদ করলে আগামীতে আলুর দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন