সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাস্তবায়নে গড়ে উঠবে উপশহর খুলবে সম্ভাবনার দুয়ার

আনোয়ারায় ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্প

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতাধীন এলাকা হওয়ায় চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আগামী পাঁচ বছরে উন্নয়ন হবে আকাশচুম্বি। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল, পারকি সমুদ্র সৈকত আধুনিকায়ন, কেইপিজেডে শিল্পায়ন বৃদ্ধিসহ উপক‚ল সুরক্ষায় ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এ উপজেলায়। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ ঘিরে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে আনোয়ারায় গড়ে উঠবে উপশহর। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনায় বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করে চলেছে একের পর এক বৃহৎ প্রকল্প। পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা এবং কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এ সরকারের অনেক বড় উদ্যোগ। এরমধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের টানেল প্রকল্পটি অভিহিত হয় স্বপ্নবিলাসী এক পরিকল্পনা হিসাবে। কিন্তু সেই স্বপ্নের ঘোর কেটে গিয়ে টানেল এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলেছে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। আর এ টানেল নগরীর বিমান বন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে বহির্গমন হবে আনোয়ারা উপজেলায়। গেল বছরের ১৪ অক্টোবর উদ্বোধন হওয়া এ প্রকল্প নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কবলে পড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘরবাড়ি হারানোর দুশ্চিন্তা তো আছেই। তবে টানেল নির্মিত হলে শহরের কাছে থেকেও অনুন্নত এলাকাটি উন্নয়নমুখী হতে বেশিদিন সময় নিবে না। টানেলের সাথে যুক্ত হবে মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ। এটি আনোয়ারা উপজেলা হয়ে কক্সবাজার যাবে। যে কারণে আনোয়ারায় চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পটি গড়ে তোলা হচ্ছে। বেজা সূত্র জানায়, ৭৭৪ একর জমিতে এ প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। উপজেলার বটতলী, হাজিগাঁও, বেলচ‚ড়া ও বৈরাগ মৌজার উপর এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, রাসায়নিক দ্রব্য, ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ, প্লাস্টিক সামগ্রী, কৃষিনির্ভর যন্ত্রপাতি, আইটি সম্পর্কিত শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। ৩৭১টি শিল্পকারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ারায় চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। নাজ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজের দায়িত্ব পায়। কালাবিবি দিঘী এলাকায় রাস্তার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফকিরখীল এলাকার সংযোগ সড়কের কাজ দ্রæতগতিতে চলছে। নাজ এন্টারপ্রাইজের প্রকৌশলী তারেকুল ইসলাম জানান, প্রকল্প উদ্বোধনের পর শুরু হওয়া কালাবিবি দিঘী এলাকার সংযোগ সড়কের কাজ শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে ফকিরখীল এলাকায় সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের মূল কাজ শুরু হবে। অপরদিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে গহিরা উপক‚লে আনোয়ারা-১ নামে আরো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৬১১ দশমিক ৪৭ একর জমিতে এটি গড়ে তোলা হবে। সমুদ্রবন্দরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় এ শিল্পজোনে জাহাজ নির্মাণ ও সিমেন্ট শিল্পের বিকাশ ঘটবে। আর এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আশির দশকের শেষের দিকে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আনোয়ারায় শিল্পবিপ্লবের ছোঁয়া লাগে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানা, কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড), সাদমুছা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে দেশের খ্যাতনামা কয়েকটি শিল্পগ্রæপ আনোয়ারায় জমি কিনে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে। এতসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেই আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে। সম্প্রতি পারকি সমুদ্র সৈকত আধুনিকায়ন প্রকল্প একনেক অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। সৈকতে ১৩ একর জায়গার উপর রিসোর্ট করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। এছাড়াও সৈকত ব্যবস্থাপনায় আরো একটি প্রকল্প তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। চট্টগ্রাম সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ্ বলেন, পারকি সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা দিনদিন বাড়ছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সৈকতে সড়কবাতি, ট্যুরিস্ট পুলিশ স্টেশন ও পার্কিং প্লেস অতীব জরুরি। এদিকে, কেইপিজেড ঘিরে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। এখানকার বাসিন্দাদের জীবনমানেও পরিবর্তন এসেছে। কেইপিজেড চালু হওয়ার পর এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নির্মাণাধীন অন্যান্য শিল্প ইউনিটগুলো তৈরির পর পুরোদমে উৎপাদনে গেলে আরো ২৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কেইপিজেডের এজিএম মুশফিকুর রহমান জানান, নতুন নতুন শিল্প ইউনিট ও অন্যান্য অবকাঠামো স্থাপনের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এসব শিল্প ইউনিট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাছাড়া উপক‚ল সুরক্ষায় ২৮০ কোটি টাকার বড় একটি প্রকল্প সম্প্রতি একনেক অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রকল্পের ২৪০ কোটি টাকার কাজ হবে আনোয়ারা উপক‚লে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৪২টি প্যাকেজের মধ্যে ১৫টি প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. কায়ছার উদ্দিন। এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ ঘিরে আনোয়ারায় চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। গহিরা উপক‚লে আরো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। উপক‚লে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সিসি বøক ডাম্পিংয়ের জন্য ২৪০ কোটি টাকার কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলেই আনোয়ারার বর্তমান চিত্র পাল্টে যাবে। আনোয়ারা হবে শহরের নিকট আরেকটি উপশহর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন