এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচনের পর এবার স্থানীয় ইউপি নির্বাচনও চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ ঘোষণার পরই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় নির্বাচনী ডামাঢোল। এ নির্বাচনের ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেত্রীবৃন্দ এলাকায় প্রাথমিক প্রচারণা শুরু করলেও এখানো পর্যন্ত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার ইউনিয়নগুলোর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা। তবে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে দলীয় নেতা-কর্মী বাদ দিয়ে পদ-পদবী ছাড়া টাকার জোরে দলের মনোনয়নের আশায় জেলা-উপজেলার নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অনেকে গত ৫ বছরে চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এলাকায় কোন ধরনের উন্নয়ন কর্মকা-ে না থাকলেও পদ-পদবী ছাড়া সেই চেয়ারম্যানগণ আবারো দলের ব্যানারে নির্বাচনের জন্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নেতাদের কাছে ধরণা দিতে দেখা যাচ্ছে। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের প্যানেল তৈরি করার জন্য নীতিমালা ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রের ঘোষিত নীতিমালায় প্রতি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নের জন্য পৃথকভাবে জেলা সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা সভাপতি-সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক সমন্বয়ে ৬ সদস্যবিশিষ্ট মনোনয়ন কমিটি করে। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশিতরা জোর লবিং শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, খুব শীগ্রই ইউপি নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিষয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এবার দলের ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান এবং এলাকায় গ্রহণযোগ্য ও জনসমর্থনপুষ্ট নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। জানা যায়, বোয়ালখালীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৭ ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়নের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন, শাকপুরা ইউনিয়ন- বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মোনাফ, আবদুর রউফ, ব্যবসায়ী মো. জানে আলম ও গিয়াস উদ্দীন সোহেল। সারোয়াতলী ইউনিয়ন- সাবেক চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন, নুরুল আমিন চৌধুরী, ও ব্যবসায়ী দীলিপ সর্দার। পোপাদিয়া ইউনিয়ন- ৩ বারের নির্বাচিত ও বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম জসিম, এস এম জাহাঙ্গীর ও শামসুল আবেদীন তারেক। চরণদ্বীপ ইউনিয়ন-শামসুল আলম কন্ট্রাক্টর, সাবেক চেয়ারম্যান মো. রফিক, মাহবুবুল আলম, আকতার উদ্দীন তালুকদার, ব্যাংকার আবদুল মন্নান, বাবর চৌধুরী, মো. ইউনুছ ও মঈন উদ্দীন আজাদ। শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন-বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোকারম, ইসমাইল হোসেন খোকন, রেজাউল করিম রাজা, মো. নুরুল হুদা, জমির উদ্দীন ও রতন চৌধুরী। আহল্লা কড়লডেঙ্গায় সাবেক চেয়ারম্যান মনছুর আহমদ বাবুল, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল ওয়াদুদ, ওসমান গণি, মো. মিয়া চৌধুরী। আমুচিয়া ইউনিয়ন-সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ হোসেন, সুব্রত বিশ্বাস সিকিম, মো. সেলিম নেওয়াজ ও উপজেলা পূজা কমিটির সভাপতি অজিত বিশ্বাস। তবে ঐতিহ্যবাহী এ আমুচিয়া ইউনিয়নে-পদবী ছাড়া বিভিন্ন কাজে-বরাদ্দে সমাজে এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত ও জাল-জালিয়তিতে চ্যাম্পিয়ন খ্যাতি প্রাপ্ত মুসলিম বিদ্বেষী বর্তমান চেয়ারম্যান কাজল দে’ও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা যায়। এ ছাড়া আরো অনেকেই ইউপি নির্বাচনে জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সিনিয়র ও প্রবীণ নেতাদের মাধ্যমে দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। তবে এলাকার তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এ নির্বাচনে স্বচ্ছ-সৎ ও উন্নয়নমুখী চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা জানান, জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দ সঠিক, সৎ, এলাকার ও দলের উন্নয়নে কাজ করে এমন প্রার্থী বাছাই করতে ব্যর্থ হলে একদিকে স্থানীয়ভাবে নেতা কর্মীরা দুর্নীতিবাজ প্রার্থীদের বয়কট করবে, অন্যদিকে এলাকায় এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ও উদ্ভব হবে বলে তারা সাফ জানিয়ে দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন