বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দাকোপের ৮ স্কুল দেড় যুগেও এমপিওভুক্ত হয়নি দেড় শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর মানবেতর জীবন

প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : খুলনার দাকোপ উপজেলার ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। এছাড়া ৮টি জুনিয়ার এপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় শতাধিকেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় মোট ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি কলেজ ও ৫টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জুনিয়ার এমপিওভুক্ত হলেও একটি করে কলেজ ও মাদ্রাসাসহ ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহুবার আবেদন-নিবেদন, আন্দোলন করে দীর্ঘ ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি সরকারিভাবে কোন ভবন। ফলে শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়ায় জুনিয়ার এপিওভুক্তর ৩০ জনসহ এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় শতাধিকেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করে চলেছে। সূত্রে জানা যায়, এলাকার বিদ্যানুরাগী ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা শিক্ষার প্রসারে নিজ উদ্যোগে এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। কিন্তু সকল শর্ত পূরণ করে সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে ভাল ফলাফল অর্জন করে আসলেও এমপিওভুক্ত হয়নি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমান প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের টিন সেটের ঘরগুলোরও বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া সংস্কারের অভাবে মরিচা পড়া ছাউনির টিন ভেঙে বর্ষাকালে পানি পড়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। এমনকি শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বর্তমানে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের মাঠে গাছতলায় পাঠদান চলছে। এ সংকট নিরসন না হলে এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যায়নরত প্রায় ১৪শ’ শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় গড়ে তোলার কাজটিও মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় অনেকে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। যার কারণে ইতিমধ্যে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো আমতলা বানীশান্তা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তালুকদার আক্তার ফারুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কামারখোলা ইউনিয়ন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কামনিবাসিয়া রাসখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিলডাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রামনগর ধোপাদী দাকোপ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চালনা মহিলা কলেজ ও জয়নগর দাখিল মাদ্রাসা। এছাড়া জুনিয়ার এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়গুলো হল সুন্দরবন আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পানখালী মমতাজ বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়, সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বাজুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিলডাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়, জেপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আবুল হোসেন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। তালুকদার আক্তার ফারুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার মন্ডল বলেন, দুই হাজার সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সকল শর্ত পূরণ করে সুনামের সাথে বিনা বেতনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে ভাল ফলাফল অর্জন করে আসলেও বহুবার আবেদন নিবেদন ও আন্দোলন করেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। বর্তমানে শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে গাছতলায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করছি। সদ্য চাকরি ছেড়ে যাওয়া এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অলকেশ রায় বলেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিনা বেতনে কাজ করেছি। পরিবারে অভাব-অনাটনের কারণে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছি। রামনগর ধোপাদী দাকোপ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নন এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় উপজেলা কমিটির সভাপতি গৌরপদ মন্ডল জানান, এ বিদ্যালয়টি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এ উপজেলায় নন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের টিন সেটের ঘরগুলোরও বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে মরিচা পড়া ছাউনির টিন ভেঙে বর্ষাকালে পানি পড়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ দানও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অচিরেই এ সংকট নিরসন না হলে এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন