সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীতে নারী ও শিশু ধর্ষণ দিন দিন আশংকাজনক হারে বেড়ে চলছে। সপ্তাহের বেশীরভাগ দিনই জেলার কোন না কোন স্থানে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। এমন কোনো মাস নেই যে মাসে ৮ থেকে ১০টি নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে না। গত বুধবার রাতে নরসিংদী শহর সংলগ্ন টাওয়াদী গ্রামে একটি বোবা মেয়েকে গণধর্ষণের মামলা হওয়ার পর রায়পুরার রতনপুর থেকে ৭ বছর বয়সী এক ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে এখন হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জ লড়ছে। গত শনিবার এব্যাপারে রায়পুরা থানায় ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এ নিয়ে নরসিংদী জেলা চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধর্ষণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। এর আগে ২০১৬ সালে নরসিংদী জেলায় ধর্ষণ হয়েছে কমবেশি ১২৭ জন নারী ও শিশু। এর আগের বছর ২০১৫ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৫ জন নারী ও শিশু। সর্বশেষ ধর্ষণের শিকার হয়েছে রায়পুরার রতনপুর গ্রামের ৭ বছর বয়সী এই হতভাগী স্কুলছাত্রী। রায়পুরা থানা সূত্রে জানা গেছে, অলিপুরা ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের এসবি একাডেমির প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী স্কুল ছুটির পর সহপাঠীদের সাথে বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। সহপাঠীদের সাথে হেঁটে যাওয়ার সময় একই গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম তাকে জোরপূর্বক মুখ চেপে ধরে পার্শ¦বর্তী একটি পিয়ারা বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যায়। এ অবস্থায় পিশাচ নজরুল তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা শিশুটির সহপাঠিরা বাড়িতে গিয়ে তার স্বজনদেরকে জানালে তারা মেয়েটিকে খোঁজাখুঁজি করে পিয়ারা বাগানে এসে অজ্ঞান ও বস্ত্রহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে ধর্ষিতার পিতা বাদী হয়ে নজরুলকে আসামি করে রায়পুরা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। রায়পুরা থানার মামলা নং ২৫(২)১৭। মামলা দায়েরের পর থেকে প্রভাবশালী আসামির লোকজন বাদীকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য বাদীকে চাপ দিচ্ছে। অপরদিকে একটি মহল আসামিকে গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশের উপর চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে বোবা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সুমন, মোরাদ, সামসুল হক, উজ্জলকে ৪ দিনের রিমান্ড নিয়েছে নরসিংদী থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তাদেরকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করার পর গতকাল শনিবার তাদের রিমান্ড আবেদনের শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়। ধার্যকৃত তারিখ অনুযায়ী আজ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত তাদের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বলাবাহুল্য যে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে নরসিংদী রেলস্টেশন এলাকায় ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুরাফেরা করার সময় উল্লিখিত ৪ অটোচালক তাকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে শহর সংলগ্ন টাওয়াদি মহল্লার আমিনা বেগমের বাড়িতে নিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। বোমা কিশোরীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে দৌড়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং ধর্ষকদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন