মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে : আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মাশরুম চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন প্রতিবন্ধী যুবক মামুন। তিনি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌর এলাকার মান্দারতলা গ্রামের আব্দুর রহিম জোয়ার্দ্দারের ছেলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় মামুন। ১৯৮০ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করা অবস্থায় হঠাৎ করে তার বাম হাত-পাসহ শরীরের একটি অংশ অকেজো হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে অজানা এ রোগ তার একটি হাত ও পা পুরোপুরি অকেজো করে দেয়। গরীব বাবা সাধ্যমত দেশ-বিদেশে চিকিৎসাও করিয়েছেন মামুনকে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আত্মবিশ্বাসী মামুন বসে না থেকে বাড়িতে বসেই চালিয়ে যান পড়ালেখা। ১৯৮৩ সালে শারীরিক অক্ষমতা সত্তে¡ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হন তিনি। পরিবার ও সমাজের অবহেলা আর অবজ্ঞার মধ্যে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলেও নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে মামুন মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন মাশরুম চাষ। ২০০২ সালে স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মাত্র ১৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি আরো মনোযোগী হন মাশরুম চাষে। ধীরে ধীরে তার ব্যবসাও বড় হতে থাকে। ভ্যানে করে মানুষের কাছে মাশরুম বিক্রি ও এর উপকারিতা সম্পর্কে নিজেই জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালিয়ে সফল হন। এদিকে দিন বদলের সাথে সাথে মানুষের মাঝে মাশরুমের গুণাবলী সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি হতে থাকায় ভাগ্য ফিরতে শুরু করে প্রতিবন্ধী যুবক মামুনের। মাত্র ২০ শতাংশ জমি থেকে এখন তার পরিধি বেড়ে নিজ বাড়িতে প্রায় ১ একর জমির ওপর বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করছেন তিনি। এখান থেকে বছরে তার প্রায় ২/৩ লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান মামুন। যা দিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভালোই চলছে তার সংসার। স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও মামুনের পাশে দাঁড়ানোর ফলে ২০১৬ সালে মামুন সফল প্রতিবন্ধী আত্মকর্মী যুবক হিসাবে জাতীয় যুব পুরস্কার লাভ করেন। লাভজনক এ মাশরুম চাষের ব্যবহার সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা ছাড়াও দেশের তরুণ বেকার যুবকদের কাজে লাগাতে চান মামুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন