মোহাম্মদ আবদুল গফুর : গত পরশু (মঙ্গলবার) ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারি আমাদের দেশে ভাষা আন্দোলনের স্মারক মাস হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের একুশ তারিখে বাংলাকে তদানীন্তন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এমন একটা রক্তাক্ত অধ্যায় সংযোজিত হয় ভাষা শহীদের আত্মদানের মধ্যে দিয়ে যে, এরপর কেউ আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির বিরোধিতা করার সাহস পায়নি। তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায়, বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রাপ্তি একুশের সর্বপ্রধান অর্জন।
একুশের এ ঐতিহাসিক অর্জনের প্রভাব পরবর্তীকালে দেশের সীমানার বাইরেও অনুভূত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরে বাংলা ভাষার অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয় তাতে ১১ ব্যক্তি শহীদ হন। আরও পরে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষিত হওয়ায় বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের এসব আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রাপ্তি যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি জাতীয় পর্যায়ে ভাষা আন্দোলনের অবদানও মোটেই কম নয়। বলা হয়ে থাকে ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই আমরা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ নামের স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করেছি। এ কথা যত সহজভাবে উচ্চারণ করা হয়ে থাকে, ততটা গুরুত্বসহকারে এই উচ্চারণের যথার্থতা অনুভব করা হয় না বলেই আমাদের আশঙ্কা। এই উচ্চারণের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অতীত সন্ধান অপরিহার্য।
পলাশী বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে ১৭৫৭ সালে এই উপমহাদেশে বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদী শাসন শুরু হয় এ কথা আমরা সবাই জানি। ১৯০ বছরের সেই বৃটিশ পরাধীনতার অবসানে ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবস্থান ছিল উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকাসমূহে। বৈরী জনপদ দ্বারা ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুটি পৃথক ভূখ- নিয়ে একটি রাষ্ট্র গড়ার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে প্রায় নেই বললেই চলে। এই বাস্তবতার স্বীকৃতি হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তিরূপী ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৯৪৬ সালে এই ইস্যুতে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে তদানীন্তন অবিভক্ত বঙ্গে পাকিস্তান দাবির প্রবক্তা মুসলিম লীগ জয়ী হয়ে জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠন করে। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের বিজয়ী সংসদ সদস্যদের নিয়ে দিল্লিতে যে সম্মেলন হয়, সে সম্মেলনে লাহোর প্রস্তাবের আংশিক সংশোধন করে উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একাধিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে আপাতত একটি (পাকিস্তান) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাব উত্থাপন করেন বঙ্গীয় মুসলিম লীগ দলীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। প্রস্তাব উত্থাপনকালীন ভাষণে একপর্যায়ে তিনি বলেন, অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, পাকিস্তানই আমার শেষ দাবি কিনা? এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেব না আমি। তবে এ কথা অবশ্যই বলব, এ মুহূর্তে পাকিস্তানই আমার প্রধান দাবি। অর্থাৎ তিনিও উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র (বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেন না।
ইতিহাসসচেতন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের স্মরণ থাকার কথা, ১৯৪৭ সালের পার্টিশনের প্রাক্কালে ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে বৃহত্তর সার্বভৌম বাংলা নামের একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন মুসলিম লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম এবং কংগ্রেসের শরৎচন্দ্র বসু। এ উদ্যোগের প্রতি লীগ নেতা কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমর্থন থাকলেও গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল প্রমুখ অবাঙালি নেতা এবং শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি প্রমুখ বাঙালি নেতার প্রবল বিরোধিতার কারণে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয় । সে সময় শেষোক্ত নেতা (শ্যামা প্রাসাদ) এমনও বলেন, ভারত ভাগ না হলেও বাংলা ভাগ হতেই হবে। নইলে বাঙালি হিন্দুরা চিরতরে বাঙালি মুসলমানদের গোলাম হয়ে যাবে।
এবার আমরা পুনরায় মূল আলোচ্য বিষয় ভাষা আন্দোলন তথা একুশে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে ফিরে যাই। আমরা যখন বলি ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে, তখন আমরা সচেতন বা অচেতন যেভাবেই হোক, ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবতাকেই স্বীকার করে নিই। ভাষা আন্দোলনের মেনিফেস্টো হিসেবে পরিচিত “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু” শীর্ষক যে পুস্তিকা ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় সে পুস্তিকায় ভাষা আন্দোলনের সূচনাকারী সংস্থা তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবুল কাসেমের নিবন্ধে তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ১৯৪০ সালে লাহোরে মুসলিম লীগের সভায় যে প্রস্তাব গৃহীত হয় তাতে তো উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। তার তুলনায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তো অনেক ক্ষুদ্র। সুতরাং এই দাবির বিরোধিতা করা অর্থহীন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাস করত সমগ্র পাকিস্তানের শতকরা ৫৬% জন অধিবাসী এবং তাদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। সেই ৫৬% পাকিস্তানীর মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা ছিল গুরুতর অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক। সেই নিরিখে ভাষা আন্দোলন তথা একুশে চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল গণতান্ত্রিক মূল্যেবোধের স্বীকৃতি প্রদান।
আমরা যখন বলি ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই আমরা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি, তখন আমরা শুধু ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেই না, একুশের চেতনার মধ্যে আমরা জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের পবিত্র কর্তব্য ও দায়িত্বের কথাও স্বীকার করে নেই।
ভাষা আন্দোলন তথা একুশের চেতনা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে যে বিষয়টি অবশ্য সর্বাগ্রে চলে আসবে সেটি হচ্ছে মানুষের জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব। আমি কোণ বংশে কোণ দেশে কখন জন্মগ্রহণ করব তা নির্ধারণের এখতিয়ার যেমন আমার হাতে নেই, তেমনি কোণ ভাষাভাষী হয়ে জন্মগ্রহণ করব তা নির্ধারণ করারও সুযোগ নেই আমার। এসবই বিশ্ব¯্রষ্টার এখতিয়ার। পৃথিবীর সকল ভাষাই সেই পরম ¯্রষ্টার সৃষ্টি। আমি কোন ভাষাভাষী সমাজে জন্মগ্রহণ করব তা যেহেতু আমি জানি না, আমার উচিত হবে আমার ¯্রষ্টা নির্বারিত মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা।
আমাদের আজকের আলোচনার উপসংহার টানতে গিয়ে আমরা দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, একুশের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন যেন আমাদের অনেকের কাছে ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার পর শহীদ মিনারে ঘটা করে পুষ্পস্তবক প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমনকি ইংরেজি মিডিয়া স্কুলে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রদানকে যারা একটা আত্মগরিমার বিষয় বিবেচনা করি, তারাও ঐ বিশেষ রাতে শহীদ মিনারে ভিড় ঠেলে ঐ স্ববিরোধী কাজে অংশগ্রহণকে একটা বড় কাজ বলে বিবেচনা করে থাকি। ফেব্রুয়ারি মাস চলে গেলে মহান একুশের চেতনা তো দূরে থাক ভুলেও ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করি না।
আমাদের মনে রাখতে হবেÑ একুশের চেতনা শুধু অর্থহীন-তাৎপর্যহীন দুটি শব্দ মাত্র নয়। একুশের চেতনা আমাদের শিক্ষা দেয় মাতৃভাষার প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধাপোষণ ও দায়িত্ব পালনের কথা। আর যেহেতু ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই এসেছে স্বাধীন বাংলাদেশ, তাই আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অতন্দ্র দৃষ্টি রাখা ও একুশের চেতনার প্রতি আমাদের পরম পবিত্র দায়িত্বের অন্তর্গত। অন্যদিকে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশে প্রথম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে তাই একুশের চেতনার অন্যতম দাবি যে কোন মূল্যে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে যথাযথ মর্যাদাদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
আমরা যদি এখন প্রশ্ন করি ভাষা আন্দোলন তথা একুশের চেতনার এসব অন্তর্নিহিত দাবিকে আমরা বাস্তবে কতটা গুরুত্ব প্রদান করছি কতটা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারব তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। প্রথমেই আসে মাতৃভাষার প্রতি আমাদের বাস্তবে গুরুত্ব দানের কথা। বাংলাকে অফিস-আদালতের ভাষা করা ছিল ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি। এবার ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আসার প্রাক্কালে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা একপর্যায়ে আমাদের জানান যে, এরপর থেকে আদালতের রায় বাংলায় লেখার চেষ্টা করা হবে। এর অন্য অর্থ হলো ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৫৬ বছর পরও এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এখনও সকল পর্যায়ে শুরু করা হয়নি।
এর পরই আসে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করা। এ ব্যাপারে বিশেষভাবে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম বাংলা করার ব্যাপারে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকায় ভাষা আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা মরহুম অধ্যাপক আবুল কাসেম সেই ষাটের দশকেই “বাঙলা কলেজ” নামে একটি কলেজ স্থাপন করে, হাতে-কলমে বাংলা মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রদানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। কিন্তু তার এত বছর পর আজও সর্বপেক্ষা বাংলা মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। বিপরীতক্রমে বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এখন বাংলা ভাষার প্রবেশাধিকার পর্যন্ত নেই।
ভাষা আন্দোলন তথা একুশের চেতনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা। কিন্তু আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আমলেই গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একটি মাত্র সরকারি দল রেখে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সাথে মাত্র ৪টি সরকারী পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। বহু দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে এ দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুন প্রতিষ্ঠা করা হলেও একপর্যায়ে তদানীন্তন সেনা প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক ক্যুর মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশে সেনাপতি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সম্প্রতি এক সভায় প্রশ্ন রেখেছেন তাকে জনগণ স্বৈরাচার বলে কেন? তিনি নিশ্চয়ই বোঝেন একটি নির্বাচিত সরকারকে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বসলে তাকে স্বৈরাচার ছাড়া অন্য কোন নামে ডাকা যায় না। তিনি শুধু স্বৈরাচার হিসাবেই কুখ্যাত নন, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তাঁর মত অভিনয়দক্ষতাও অন্য কারো নেই। রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রথম দিকে তিনি সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎ দানের সময় তাঁর পাশে এটা বুঝাতে শহীদ জিয়ার ছবি রাখতেন যে, তিনি জিয়ার ভক্ত। অথচ তিনি এই কিছুদিন আগেই ভারতে গিয়ে বলে এসেছেন তিনি আগাগোড়া আওয়ামী লীগের সাথে আছেন। অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রতিনিধি পদে নিয়োগ পাবার পর অবশ্য এ নিয়ে আর কোন রাখঢাকেরও সুযোগ নেই।
একুশের চেতনার অন্যতম দিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হলেও একুশের চেতনা সৃষ্টি স্বাধীন বাংলাদেশে এখন এমন এক সরকার ক্ষমতাসীন রয়েছে যা দেশের সকল দলের নিকট গ্রহণযোগ্য কোন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়নি। দেশের দুই প্রধান দলের অন্যতম বিএনপির বয়কট করা নির্বাচনে খালি মাঠে গোল দিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া এ সরকারপ্রধান সংসদে এ সম্বন্ধে স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় এক হিসাবে ভালই হয়েছে। সংসদে তাদের সমালোচনা শুনতে হচ্ছে না। বিরোধী দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বক্তব্য যিনি এতই অপছন্দ করেন, গণতন্ত্র সম্পর্কে তার তো কোন শ্রদ্ধাবোধ থাকার কথা না। কারণ গণতন্ত্রের মূল কথাই হলো বিরুদ্ধ মতের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ ও সহনশীল থাকা।
দেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে এরশাদ-পরবর্তী আমলে অবাধ নির্বাচনে নির্বাচিত খালেদা জিয়ার শাসনামলের শেষ দিকে প্রধানত তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার দাবির মুখে দেশের সকল জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয়-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের বিধান সংবিধানে বিধিবদ্ধ হয়। ঐ বিধান যে আমাদের দেশের বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের নিরিখে সর্বাপেক্ষা উপযোগী তা তখন প্রমাণিত হয়। কারণ ঐ বিধানের মাধ্যমে দেশের দুই প্রধান দল পরপর নির্বাচিত হয়ে দেশে পরিচালনার সুযোগ লাভ করে। পরবর্তীকালে একপর্যায়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে ঐ বিধান পরিবর্তন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুনরায় তাঁর দলের ক্ষমতাসীন হওয়াটা নিশ্চিত করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার উত্থাপিত সেই মূল প্রস্তাব অনুসারে দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থায় ফিরে গেলে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হবে। নইলে দেশে নির্বাচনের নামে নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই কায়েম থাকবে, যা হবে একুশের চেতনার ঘোরতর পরিপন্থী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন