আবদুল আউয়াল ঠাকুর : মরহুম গিয়াস কামাল চৌধুরী এবং মরহুম সৈয়দ আবদুল কাহহার যথাক্রমে ঐক্যবদ্ধ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৮০ সালে। সেবার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাংবাদিক নেতাদের বঙ্গভবনে দাওয়াত করেছিলেন। নির্বাচিত পরিষদের সদস্য হিসেবে সেদিন আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ঐ অনুষ্ঠানে যাবার। মূলত তখন সাংবাদিকদের নেতা ছিলেন মরহুম আনোয়ার জাহিদ। সেবারের নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পেয়ে তিনি নির্বাহী পরিষদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গভবনে প্রীতিভোজের আগে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার জাহিদ ভাইকে কিছু বলার জন্য আহ্বান জানান। জাহিদ ভাই ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট গিয়াস কামাল চৌধুরীকে কিছু বলতে বলেন। সেদিন বোধকরি গিয়াস ভাইয়ের জীবনের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা তিনি দিয়েছিলেন। মাত্র এক কি দুই মিনিটে তিনি সাংবাদিকদের বাসস্থানের জন্য জমি চাইলেন। তার কথা শেষ না হতেই প্রেসিডেন্ট জবাব দিলেন, ঠিক আছে, জমি দেখে আমাকে জানান। স্পঞ্জ পায় দিয়ে অফিস করবেন। রিকশা ভাড়ার টাকা দিয়ে বাড়ি বানাবেন। সে সময়ে মূলত মতিঝিল এলাকা ঘিরেই পত্রিকার জগৎ ছিল। তখন ওয়াহাব কলোনী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নামে বরাদ্দ দেয়ার আলোচনাও উঠেছিল। এর পর পানি অনেক গড়ায়। ঢাকার একমাত্র সাংবাদিক আবাসিক এলাকাটি এখন মিরপুরের পল্লবী থানার ব্লক এফ-এ অবস্থিত।
সাংবাদিক আবাসিক এলাকাটি যখন বরাদ্দ দেয়া হয় তখন কথা ছিল কাছাকাছি নদী থেকে মাটি এনে এলাকা ভরাট করে দেয়া হবে। সাংবাদিকরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হওয়ায় সে সময়ের স্বৈরশাসক এ সংক্রান্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ফাইলটি ছুড়ে ফেলে দেন। এরপর নগরীর বর্জ্য দিয়ে এলাকাটি উঁচু করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন সিটি মেয়র নাজিউর রহমান মঞ্জু। এর পরবর্তী মেয়র মাহমুদুল হাসানও এ সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকারের পতনের পর জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সমিতির প্রবীণ সদস্য জনাবালী খন্দকারের কাছে দলির হস্তান্তরের মাধ্যমে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে এটি বুঝিয়ে দেন। এরপর অবশ্য এলাকাকে বাসযোগ্য করতে আরো কিছু সরকারি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভ‚মিকা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সাংবাদিকরা যাতে হাউজ বিল্ডিং ঋণ দান সংস্থার টাকা সহজে পেতে পারে সে জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমান সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এভাবে অত্যন্ত ধীরগতিতে হলেও একটু একটু করে মিরপুরের একপ্রান্তে অবস্থিত সাংবাদিকদের এই এলাকাটি গড়ে উঠেছে। এটি এখনো চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ১৮০ জনের জন্য মূলত বরাদ্দ থাকলেও এখন সেখানে যারা থাকছেন তারা সকলেই সাংবাদিক নন। নানা কারণে নানা বাস্তবতায় এখানে এখন অনেকেই রয়েছেন যারা হয়ত কখনোই সাংবাদিক ছিলেন না। এখন সেখানে ডেভেলপাররা কাজ করছেন। ফলে পরিস্থিতির আরো পরিবর্তন হতে বাধ্য। সোজা ভাষায় বলা যায়, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন সাংবাদিকদের জন্য প্লট বরাদ্দ করেছিলেন তখন তিনি বিশেষ অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে এটি ‘কেবলমাত্র’ সাংবাদিকদের জন্যই নির্ধারিত রেখেছিলেন। আমরা তার সম্মান রক্ষা করতে পারিনি। সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকাকালে তিনি একবার এই এলাকা পরিদর্শনে আসেন এবং আমাদের সাথে বেশকিছু সময় কাটান। মতবিনিময় করেন। মতবিনিয়মকালে আমি তার কাছে তুলে ধরি যে সামনের রাস্তাটি এয়ারপোর্ট সড়ক হিসেবে পরিচিত এবং এটি প্রথমদিকে ১৫০ ফুট ছিল অথচ এখন এটি সংকীর্ণ হচ্ছে এর কারণ কি? মনে হলো, বিদ্যুৎ চমকে যাবার মত তিনি চমকে উঠলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তার সাথে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলেন। এরপর তিনি সেখানেই সিদ্ধান্ত দিয়ে এলেন এটি এয়ারপোর্ট রোড এবং দ্রুতই এর বাস্তবায়ন করা হবে। কথার খেলাপ হয়নি। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটি চমৎকার সড়ক দ্রæততম সময়ের মধ্যেই নির্মিত হয়। বাস্তবতা হলো, সড়কটি নির্মাণে একধরনের অলিখিত বৈষম্য করা হয়েছিল। বর্তমানে সেখানে মিরপুর ডিওএইচএস রয়েছে সেখান থেকে সড়কটি যত আধুনিকতা পেয়েছে পূরবী সিনেমা হল থেকে কালশী পর্যন্ত ততটা পায়নি। অন্যদিকে নতুন সড়কটি নির্মিত হবার পর সবচেয়ে দুর্ভোগে পরে সাংবাদিক আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। একবার বৃষ্টির পানি আটকে যাবার কারণে গাড়িসহ বিপুল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরপর সড়কের ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন করা হলেও দেখা যায় বৃষ্টি হলেই অন্য কোথাও পানি না জমলেও সাংবাদিক আবাসিক এলাকার মাঠে জোয়ার বয়ে যায়। নিচু এলাকা এবং অনেকদিন কোন ধরনের সংস্কারের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত থাকার কারণই পরিস্থিতি নাজুক আকার ধারণ করে। এখন এ এলাকায় উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ধারণা করা যায়, ড্রেন এবং সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে এলাকাটি একটি প্রকৃতই আধুনিক এলাকায় পরিণত হবে। একসময় এক শ্রেণীর আমলার হীনমন্যতার কারণে যে নিম্নাঞ্চলটি সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হেয়েছিল এখন সেটিই আধুনিক আবাসস্থল হচ্ছে। এখন এই এলাকার সাথে গুলশান, বনানী, বিমানবন্দরের দূরত্ব অনেকটাই পায়ে হাঁটা পর্যায়ে চলে এসেছে। শোনা যাচ্ছে আরো উন্নয়নের কথা। আসলে উন্নয়ন তো ধারাবাহিকতারই অংশ। এ ধারা চলতে থাকলে হয়ত একসময় আরো মালিকানার পরিবর্তন হবে তবে এলাকার নাম সাংবাদিক আবাসিক এলাকাই থেকে যাবে। থেকে যাবে এই এলাকা প্রতিষ্ঠার চেতনাও।
এ কথা আমরা সকলেই স্বীকার করছি এক ছন্নছাড়া সময়ের মধ্যদিয়ে আমরা অতিবাহিত করছি। যৌতুক, মাদক, হানাহানি, ছিনতাই, সন্ত্রাস সবকিছু যেন গিলে খাচ্ছে। নেশার টাকার জন্য খুন হচ্ছেন পিতা। পরকীয়ায় ভেসে যাচ্ছে সংসার। নানা অপসংস্কৃতির বানে টিকে থাকাই যেখানে সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে সেখানে সাংবাদিক আবাসিক এলাকা প্রকৃতই একটি ব্যতিক্রমী এলাকা। একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এলাকায় শান্তি-নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাকেই অধিকতর বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত
এ এলাকায় যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারাও প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। সমিতির নির্বাচিত বর্র্তমান পরিষদ অনেকটা ব্যতিক্রমী সামাজিক কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করেছেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবেই গত শুক্রবার সমিতির সদস্যদের সন্তানদের এক ব্যতিক্রমী পরিচিতি সভার অয়োজন করেছিল। দেখা গেল বিকেল হতে হতেই অডিটরিয়ামটি পূর্ণ হয়ে সামনের মাঠ অবদি ভরে ওঠে। সমিতির নতুন-পুরাতন, প্রবীণ-তরুণ সকলেই তাদের সন্তান, স্ত্রী, স্বামী নিয়ে সমবেত হন। অনেকের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়েছে তাদের কাছে এটি ছিল এক পরম পাওয়া। শেষ বসন্তের পড়ন্ত বিকেলের অনুষ্ঠানে প্রায় সকল মহিলা ও মেয়েরা সাজসজ্জায় ফুলের ব্যবহার করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আনুষ্ঠান হলটি তার সাদামাটা থাকল না। মনে হয়নি এখানে বাতির ঝলকানি নেই, নেই নামিদামি কনসার্টের আয়োজন বরং প্রত্যেকের প্রাণের ছোঁয়ায় গোটা অনুষ্ঠানই যেন এক অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়ে উঠে। মনে হলো অনেকদিন ধরে যেন এরা এমন একটা অনুষ্ঠানের অপেক্ষাই করছিল। শুধু মনে হওয়া নয় যখন সন্তানদের পরিচিতি অনুষ্ঠানের মাঝে দুএকজন কথা বললেন তখন তাদের মধ্যেও শোনা গেল তারই প্রতিধ্বনি। অন্তত বছরে একবার এভাবে মিলিত হবার, ফ্যামিলিডে অথবা এমন ধরনের কিছু করার একটা আর্জি ফুটে উঠেছিল প্রায় সবার মধ্যেই। এখানে একটু বলে রাখা দরকার, সমিতির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটির আর একটি নাম হচ্ছে সাংবাদিক পল্লী। অনেকে শুরুতে এ নামটি রাখারও পক্ষে ছিলেন। যাই হোক নাম থাক বা না থাক গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে যেভাবে সুখ-দুখ, ভাল-মন্দে একে অপরের থাকার একটা প্রবণতা কাজ করে সাংবাদিক আবাসিক এলাকায়তেও ব্যাপারটি রয়েছে। এখনও এলাকা থেকে কর্মস্থলে আসতে-যেতে অন্তত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। মূলত সাংবাদিকরা অর্থিকভাবে সচ্ছল নন। তাদের পরিবারের কোন ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটলে কর্মস্থল থেকে গিয়ে তার সমাধান করে আসা নিতান্তই বাতুলতা। সে বিচেনা থেকেই মহিলা ও মেয়েদের মধ্যে পারস্পরিক জানাশোনার আরেকটি ফোরাম হচ্ছে নারী ও শিশু কল্যাণ পরিষদ। সমিতির প্রবীণ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পী সৈয়দ এনায়েত হোসেনের স্ত্রী মিসেস নুরুল ওয়ারা নুরী এর দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিক আবাসিক এলাকার জামে মসজিদ মসজিদুল ফারুকের খতিব মওলানা মুফতি মিজানুর রহমানও তার জুমার বয়ানে এলাকার ঐক্য ও সম্প্রীতি নিয়ে কথা বলেন। নামাজান্তে দোয়া করেন। আরো দুএকটি সংস্থাও রয়েছে। ফলে পাস্পরিক বোঝাপাড়ার ব্যাপরটি মাঠে অনেকদিন থেকেই রয়েছে। সমিতির প্রতিষ্ঠার শুরুতে প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস ঘটা করে পালন করা হতো। নানা কারণে হয়ত তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মহিলা সমিতি মাঠের শিশুদের নিয়ে এ কর্মসূচি চালু রেখেছে। একসময়ে তাদের অলোচনা সভায় সদস্যদেরও দাওয়ত জানাতো। যাই হোক যে কথা বলছিলাম তাহলো সদস্য সন্তানদের পরিচিতি অনুষ্ঠান। একসময় যারা এই মাঠে বসতি স্থাপন শুরু করেছিলেন তারা সকলেই সাংবাদিক ছিলেন। এখন যেহেতু সেই বাস্তবতা নেই সে কারণে সন্তানদের পরিচিতিতেও তার ব্যত্যয় ঘটেছে। দেখা গেল সমিতির অনেক সদস্যের সন্তানই এখন দেশের অমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে শ্রেণী-পেশার দায়িত্বশীল পদে সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। এসব সন্তান এই প্রথমবারে মত নিজেদের মধ্যে পরিচিত হয়ে উঠল। এই পরে সম্মিলনের গুরুত্ব তুলে ধরে সমিতির সম্পাদক আমিনুল হক তার লিখিত বক্তব্যে বললেন, ‘আমরা দুদশক ধরে এখানে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। ইতোমধ্যে তোমরা বড় হয়ে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছ। আমরা তোমাদের সকলকে ভালভাবে চিনি না এবং তোমরাও আমাদের সকলকে সেভাবে চেন না। একটি মহল্লায় বসবাস করার জন্য পাস্পরিক চেনাজানা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক একান্ত প্রয়োজন। আমরা আশাকরি আজকের এই সমাবেশের মাধ্যমে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হবে এবং তোমাদের মধ্যে পাস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্য তৈরি হবে যা এই এলাকায় বসবাসের পরিবেশ আরো উন্নত করবে।’ পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধ মূলত গড়ে তুলতে হলে নিজেদের মধ্যে তার চর্চা অপরিহার্য। সেজন্য প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। দল-মত নির্বিশেষে এই শ্রদ্ধাবোধের কোন বিকল্প নেই। সে কথারই প্রতিধ্বনি করলেন সন্তানদের নিয়ে কিছু বলার শুরুতে বিএসএসসের সাবেক এমডি বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুন হাবিব। স্পষ্টতই তিনি মতের সহনশীলতার এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বললেন সবকিছুর উপরে এলাকাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এলাকার ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয় এমন কিছু কোন বিচেনাতেই করা যাবে না। আলোচনাতেই উঠে আসে সময়ের নানা প্রসঙ্গ, বর্তমান প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি-মনমানসিকতার নানা বিষয়। সেখানে বলা হয়, সন্তানরা পিতামাতার প্রতি কি ধরনের আচরণ করবে তা পবিত্র কোরআন সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটিও পাঠ করা হয় যেখানে বলা হয়েছে, তোমাদের আচরণে পিতামাতা যেন টুঁ শব্দটিও করতে না পারে। প্রত্যেকের জন্য তাদের পিত-মাতার জন্য আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতে বলা হয়েছে, হে আল্লাহ আপনি আমার পিতা-মাতাক ঐরূপ রাখেন যেরূপ তারা আমাদের শৈশবে রেখেছে। প্রকৃত বিবেচনায় পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে একটি সভ্য সমাজ গড়ে তোলা অসম্ভব। এ জন্য মূল্যবোধের চর্চা সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের কোন বিকল্প নেই। সাংবাদিক গৃহসংস্থান সমবায় সমিতি মূলত সে কাজটিই করার চেষ্টা করেছে। পরস্পরকে না জানলে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। বক্তা-শ্রোতা-আমন্ত্রিত সকলের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা প্রমাণ করেছে একটি এলাকার উন্নয়ন বলতে কেবল রাস্তাঘাট ইমারত আধুনিক বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহারকেই বুঝায় না বরং মনের উন্নয়নই আসল। সে উন্নয়নের জন্যই প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সে বার্তাই সুনির্দিষ্ট করেছে সাংবাদিক আবাসিক এলাকার সদস্য-সন্তানদের মিলন। সংক্ষিপ্ত এ আলোচনায় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত বিএসএসের সাবেক এমডি মোফাখারুল আনাম সমিতির সদস্য আইনজীবী অফজাল হোসাইন পলাশসহ আরো অনেকেই কথা বলেছেন।
গ্রামের কথা আলাদা। বর্তমানে রাজধানী মূলত মহল্লাভিত্তিক। দেখা যায় প্রায় প্রতিটি মহল্লাতেই নিরাপত্তার জন্য গেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাতে নাইট গার্ডেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এখন অধিকাংশ এলাকেতেই রাতের চুরি প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ প্রায় প্রতিটি মহল্লাতেই দেখা যাচ্ছে সকাল-দুপুর এমনকি সন্ধ্যা হতে না হতেই বিভিন্ন বাড়ির দোকানের খোলা জায়গায় একশ্রেণীর উঠতি তরুণ জেঁকে বসে আছে। এরা কোন মুরব্বি মানে না। সম্মানবোধ বলতে কি জিনিস তা এদের কেউ শিখিছে এমনও মনে হবার কোন কারণ নেই। প্রায়শই এখন খবর হচ্ছে এলাকার তরুণদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার কথা। বলা হচ্ছে তরুণরা তাদের পরিচিত স্বভাব ছেড়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, এরা এতটা আস্কারা পাচ্ছে কিভাবে? পত্র-পত্রিকায়-মিডিয়ায় খবর বেরুলে তাদের নানা পরিচয় পাওয়া যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, এরা একদিনে এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেনি। এরা প্রশ্রয়বিহীন নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এদের নিয়ন্ত্রণ করা বা তাদের হাতে এদের ছেড়ে দেয়া যৌক্তিক নয়। এরা আমাদের সন্তান, আমাদের ভবিষ্যৎ। প্রজন্ম নষ্ট হয়ে গেলে রাস্তাঘাট, ভবনাদি, সেতু, কালভার্ট, ব্রিজ এসব দিয়ে কি হবে? এসব কাদের জন্য? সে কারণেই প্রতিটি মহল্লায় অভিভাবকদের সন্তানদের নিয়ে একত্র হওয়া খুবই জরুরি। তাদের সাথে কথা বলুন, তাদের সহনশীল ও সহমর্মী করে তুলুন। তাহলেই একটি সম্প্রীতির দেশ গড়ে তোলা যাবে। রাজনৈতিক মত যাতে তরুণদের উন্নতির বাধা না হয়, তারা যাতে ব্যবহৃত হতে না পারে, বোধকরি সেদিকে নজর দিলে সেটিই হবে প্রকৃত উন্নয়ন ও কল্যাণ।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন