মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হিজাব : কতিপয় অজুহাত ও তার জবাব

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ৭ মার্চ, ২০১৭


মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম

\ দুই \
হে বোন! প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় করে আপনি কত কিছু শিখে নিচ্ছেন। কিন্তু যে জ্ঞান আপনাকে পরকালীন শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখবে, মৃত্যুর পর আল্লাহর ক্রোধ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে, সেই জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে আপনার একটু আগ্রহ থাকা কি উচিত নয়? আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেছেন- ‘যদি তোমাদের জানা না থাকে তাহলে জ্ঞানী ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করো।’ [সূরা আন-নাহল ১৬ : ৪৩]
তাই প্রতিটি নারী-পুরুষের উচিত হলো পরিপূর্ণ পর্দার জন্য কী কী প্রয়োজন তা শিক্ষার্জন করা। কোনো কাজে বা বিশেষ প্রয়োজনে যদি বাইরে যেতে হয়, তাহলে অবশ্যই শরিয়ত নিষেধ করেনি। তবে সঠিকভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ে বের হওয়া উচিত। শয়তানের কূটচাল ধ্বংসের নিমিত্তে সবার এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ যে প্রয়োজনে কোনো নারী ঘর থেকে বের হয়, তার চেয়ে নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শনের ফলে সমাজে সেটা যে পরিমাণ দূষণ ছড়ায় তা অনেক অনেক বেশি মারাত্মক ও ক্ষতিকর।
কোনো নারী যদি তার নিয়তের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হয় এবং পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে আসলেই আন্তরিক হয়, তাহলে মানসিকভাবে দৃঢ় হওয়া দরকার। একবার ইসলাম মানা শুরু করলে তাকে সাহায্য করার জন্য হাজারো হাত এগিয়ে আসবে। কারো মন যদি ইসলামের কোনো বিধানের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেবেন। এ ব্যাপারে কুরআন মাজিদে ইরশাদ রয়েছে- ‘যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য সংকট থেকে বের হওয়ার পথ করে দেন। আর তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন যা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে না।’ [সূরা আত-তালাক, ৬৫ : ২-৩]
হাল ফ্যাশনের জালে যে মুসলিম তরুণী আটকা পড়েছেন তার জন্য ইসলামী চিন্তাবিদগণের পরামর্শ হলো, সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার মালিক আল্লাহ তাআলা। পোশাকের আভিজাত্য, হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা কারো সম্মান ও মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারে না। কেবল আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং শরিয়তের বিধিবিধান মেনে পরিপূর্ণ পর্দার মাধ্যমেই নিজের আত্মমর্যাদা ও সম্মান নির্ধারিত হয়। এ ব্যাপারে কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক, আল্লাহর কাছে সে-ই সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী।’ [সূরা আল হুজুরাত, ৪৯ : ১৩]
কাজেই সেই দিনকে ভয় করা উচিত যেদিন আজকের কথিত প্রগতিশীল ও ফ্যাশনসম্পন্ন নারীদের ডেকে আল্লাহ বলবেন- ‘আজকের এই শাস্তি উপভোগ করো! পৃথিবীতে তো নিজেকে খুব শক্তিশালী সম্ভ্রান্ত মনে করতে! এটাই সেই শাস্তি, যে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ করতে। [সূরা আদ দুখান, ৪৯ : ৫০]
পঞ্চম অজুহাত : পর্দা পালনে অনীহা প্রকাশ করে অনেকে অজুহাত দায়ের করে থাকে যে, ‘এতো গরমে কি হিজাব পরে থাকা যায়?’
জবাব : প্রচন্ড দাবদাহ কিংবা তীব্র গরমের অজুহাতে যারা হিজাব বা পর্দাবিধান মেনে চলে না, তাদেরকে প্রথমেই কুরআন মাজিদের একটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আল্লাহ তাআলা বলছেন- ‘ওদের বলুন! জাহান্নামের আগুন আরো বেশি গরম; যদি তারা বুঝতো!’ [সূরা আত তাওবা, ৯ : ৮১]
জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা ও তীব্রতার সাথে এই দুনিয়ার তাপমাত্রার তুলনা করা সম্ভব নয়। আসলে শয়তান আমাদেরকে এমন এক ফাঁদে ফেলেছে, এমন এক জাল বুনেছে, যে জালে আটকে গেলেই পৃথিবীর এই সামান্য উত্তাপ থেকে পড়তে হবে জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনে। তাই প্রত্যেকের উচিত শয়তানের এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা।
মূলত সূর্যের উত্তাপকে নিগ্রহ না ভেবে তাকে মহান আল্লাহর একটা অনুগ্রহ ভাবা প্রয়োজন। কেননা সূর্যের এই উত্তাপ আমাদের সেই সত্যকেই মনে করিয়ে দেয় যে, জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা এর চেয়ে আরো কত লক্ষ কোটি গুণ বেশি! যে গরম আমরা এখন সহ্য করছি, জাহান্নামের উত্তাপের তুলনায় তা কিছুই নয়। তাই পার্থিব আয়েশ ত্যাগ করে ফিরে আসা প্রয়োজন আল্লাহর আনুগত্যের ছায়াতলে। গায়ে তুলে নিতে হবে তাঁরই নিরাপত্তার আবরণ। নিজেকে বাঁচাতে হবে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে। যে তীব্র গরমময় শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন- সেখানে তারা কোনো ঠান্ডা বস্তুর স্পর্শ পাবে না; ফুটন্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছাড়া অন্য কোনো পানীয়ের স্বাদ পাবে না।’ [সূরা আন নাবা, ৭৮ : ২৪-২৫]
মনে রাখতে হবে যে, জান্নাতের চারপাশ ঘিরে আছে কষ্ট, সংগ্রাম আর কঠোর পরিশ্রম। কবির ভাষায়- ‘কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কোমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ কভু আসে কি মোহিতে?’ তাইতো জান্নাতের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা কষ্টগুলো পেরিয়ে আসলেই রয়েছে অনন্ত সুখের জান্নাত। পক্ষান্তরে জাহান্নামের চারপাশে ছড়ানো আছে কামনা-বাসনার প্রলোভন। এই প্রলোভনে পড়ে গেলেই তার জন্য রয়েছে অনন্তকালের শাস্তিদায়ক জাহান্নাম। তাই সাময়িক গরম সহ্য করে আল্লাহর বিধান পর্দা পালন করলে অবশ্যই পরকালীন চিরস্থায়ী প্রশান্তি রয়েছে।
ষষ্ঠ অজুহাত : যারা পর্দা পালনে আগ্রহী নয়, তাদের অনেকের সাক্ষাৎকার নেয়া হলে তাদের অনেক তরুণীই অজুহাত দিয়ে থাকে যে- ‘আমার ভয় হয় যে, আমি হয়তো হিজাব শুরু করে আবার ছেড়ে দেব। কারণ আমার মতো অনেকেই হিজাব শুরু করে আবার ছেড়ে দিয়েছে!’
জবাব : এই বোনের অজুহাতের আসল জবাব দেয়ার আগে এক কথায় বলা যেতে পারে যে, সবাই যদি এই আশঙ্কা প্রকাশ করে তাহলে হয়তো এভাবে আস্তে আস্তে পুরো দ্বীনই নিঃশেষ হয়ে যাবে। কারণ কেউ হয়তো ভবিষ্যতে সালাত ছেড়ে দেয়ার আশঙ্কায় সালাত ধরবেই না। বুড়ো বয়সে রমযানের সিয়াম পালন করতে পারবে না, এই ভয়ে তারা হয়তো যুবতী বয়সেও সিয়াম পালন করবে না।
আসলে আমরা ঘুণাক্ষরেও ঠাওর করছি না যে, শয়তান কিভাবে আমাদের তার ফাঁদে ফেলছে। আমরা ভুলেও ভেবে দেখছি না যে, সে কিভাবে আমাদের সঠিক পথ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। মনে রাখবেন, আপনার পালন করা কাজটি যত ছোটই হোক না কেন সেটা নফল কিংবা সুন্নাহ যাই হোক কাজটা যদি আপনি সবসময় নিয়মিত করেন, তাহলে আল্লাহ তাতেই সবচেয়ে বেশি খুশি হন। সেক্ষেত্রে হিজাবের মতো অবশ্যপালনীয় একটা কাজে আল্লাহ কতটা খুশি হবেন, তা ভাবতেই মন ভরে ওঠে!
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে ঘোষণা করেছেন- ‘কাজ যতই ছোট হোক, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল সেটিই, যে কাজটি কেউ নিয়মিত করে। [বুখারি, ১১/১৯৪] পরিতাপের কথা হলো, যে মানুষগুলো একসময় হিজাব করা ছেড়ে দিয়েছে, আমরা কি কখনো তাদের এই ছেড়ে দেয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছি? যাতে করে তারা এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন? যতোক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সত্যকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত কেন এই সত্য পথনির্দেশের ব্যাপারে পরিপূর্ণ আস্থা অর্জনের কারণ ও যুক্তিগুলো খুঁজে দেখার প্রয়োজন বোধ করছি না! শুধু পর্দাবিধানের প্রতিই নয়, সত্য ও সঠিক পথের ওপর অবিচল থাকার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। যাতে করে আল্লাহর দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থার সাথে আমাদের সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে।
সঠিক পথের ওপর অবিচল থাকার আরেকটা উপায় হচ্ছে, ইসলামিক বিধিবিধানগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা; পূর্ণাঙ্গভাবে সেগুলো মেনে চলা। এর মধ্যে হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা অন্যতম। আল্লাহ বলেছেন- ‘তাদের যা বলা হয়েছে, তারা যদি সেটা মেনে চলতো, তাহলে এটা তাদের জন্যই ভালো হতো।  উপরন্তু এটা তাদের ঈমানকে আরো মজবুত করতো।’ [সূরা আন নিসা, ৪ : ৬৬]

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন