শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

আওয়ামী লীগ-বিএনপির স্নায়ুযুদ্ধ

উপ-সম্পাদকীয়

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো অনেক দিন বাকি। অথচ এর মধ্যেই আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচার শুরু করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্মেলনে প্রধান ইস্যুই ছিল নির্বাচন। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে যাওয়ার, তাদের সঙ্গে সখ্য ও সদ্ভাব গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চান না। তার এ কথার ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হোক, প্রধানমন্ত্রী সেটা চান। সম্মেলনে এ বার্তাও দেয়া হয়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী হতেই হবে। এরপর থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই আগামী নির্বাচনে দলের পক্ষে ভোট চাইছেন। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ইশতেহার ও খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচনের সম্ভাব্য বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে কাজ করছে বেশ আগে থেকেই। কাজগুলো এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত রাজনৈতিক মিত্র এবং বর্তমান সংসদে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলে পরিচিত জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে কয়েক মাস আগেই। তারও নির্বাচনী ইশতেহার, প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদির কাজ চলছে। দলটি প্রথমে ঘোষণা দিয়েছিল তিনশ আসনেই প্রার্থী দেবে। এখন শোনা যাচ্ছে, নতুন একটি জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। ওদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ঘোষণা না দিলেও তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। এত আগেই নির্বাচনের আবহ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করতে পারেন, নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগেও হতে পারে। এটা অবশ্য সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। পর্যবেক্ষকদের কারো কারো ধারণা, ক্ষমতাসীন দল এখন একটি অনুক‚ল পরিবেশ ও সময়ের মধ্যে আছে। এখন নির্বাচন দিলে তার বিজয় অবধারিত। ভবিষ্যতে পরিবেশ-পরিস্থিতি কী রকম হয়, বলা যায় না। কাজেই, সরকার আগাম নির্বাচন দিয়ে সুফল আগেই ঘরে তোলার জন্য উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগাম নির্বাচন হলেও হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে লাগাতারই বলা হচ্ছে, আগাম নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। সংবিধান নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, আগাম নির্বাচন ও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে যেহেতু ব্যতিক্রম হওয়ার আশঙ্কা নেই, সুতরাং আগাম নির্বাচনের চিন্তা অবান্তর।
অতএব ধরে নেয়া যায়, ২০১৯ সালের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও অন্যান্য দল প্রস্তুতিমূলক কাজকর্ম এগিয়ে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন কিছু দিন বেশ সরগরম হয়ে উঠেছিল। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনায় রেখেই বিরোধী রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজ আশা করেছিল যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ, সাহসী ও দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আমরা এখানে সে আলোচনায় যাব না। শুধু এটুকু বলা যেতে পারে, সরকার সূ² কৌশলে তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। হঠাৎ তরিকত ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি এতটা গুরুত্ব পেয়ে গেল কেন, সেটা আমলে নিলেই বোঝা যাবে, সূ² কৌশলটা কীভাবে কাজ করেছে। ক্ষমতাসীন দল ও মহল খুশি। কারণ, তাদের কৌশল কাজ করেছে। অন্যরা হতাশ। কারণ, এমন কৌশল হতে পারে, তারা কল্পনাও করতে পারেনি। চরম ব্যর্থ ও সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে নিন্দিত বিগত নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ পরবর্তী নির্বাচন কমিশন কেমন হবে- এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আমাদের মতোই হবে। তাই যদি হয়, তবে আগামী সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, সেটা আন্দাজ করা মোটেই কঠিন হওয়ার কথা নয়।
এর মধ্যেই দুটি প্রসঙ্গ বিশেষভাবে সামনে এসে পড়েছে। প্রথম প্রসঙ্গ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা। দ্বিতীয় প্রসঙ্গ, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা। এ দুটি প্রসঙ্গ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এক ধরনের স্নায়ুর লড়াই শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের দুটি বৃহৎ দলই নয়, একে অপরের ক্ষমতার প্রতিদ্ব›দ্বীও বটে। ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ার অন্যতম কারণ, ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্বাচনটি কেবল একতরফা বলেই সাব্যস্ত হয়নি, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মতে, ওটা কোনো নির্বাচনই হয়নি। যা হোক, ওই নির্বাচনের মাধ্যমেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং ক্ষমতার নির্বাধ সুখ উপভোগ করছে। সঙ্গত কারণে সরকার বা সরকারি দল চাইতে পারে, বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হোক কিংবা বিএনপি অংশ না নিক। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হলো, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হন এবং এ কারণে বা অন্য কোনো কারণে বিএনপি যদি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক চরিত্র যেমন হারাবে তেমন তার গ্রহণযোগ্যতাও আগের নির্বাচনের মতো প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। দেশের বিভিন্ন মহলসহ আন্তর্জাতিক মহল ২০১৪ সালের মতো বিতর্কিত, একতরফা ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় না। তারা চায়, সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন হোক। বর্তমান সরকার তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে যে প্রশ্ন ও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটা কোনো সরকারের জন্যই কাক্সিক্ষত নয়। সে কারণেই হয়তো অনিচ্ছা সত্তে¡ও সরকার চাইছে, কোনো না কোনোভাবে বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তবে এমনভাবে না আসুক যাতে তার ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ‘কোনো না কোনোভাবে’ আসার ব্যাখ্যায় অনেকের অভিমত হলো, সরকার মাইনাস খালেদা জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে চাইছে। সেটি সম্ভব না হলে বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি করে একটি অংশকে বিএনপির নামে নির্বাচনে আনতে চাইছে। এতে দুই ক‚লই রক্ষা হতে পারে। বিজয় নিশ্চিত হতে পারে এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ দূরীভ‚ত হতে পারে। অবশ্য সরকার চাইলেই এ রকম হবে কিনা, এখনই আন্দাজ করা সম্ভব নয়।
বিএনপি অনেক দিন ধরে বলে আসছে, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে তৎপর। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা বিচারাধীন, সেসব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করার মাধ্যমে এটা করতে চাইছে। মামলায় তার দন্ড হলে তিনি গ্রেফতার হতে পারেন, জেলে যেতে পারেন এবং সে কোনো কারণে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাতে পারেন। সরকারের মিত্র তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান মামলার রায় হওয়ার আগেই একটা রায় দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হবেন, প্রয়োজনে তাকে জেলে পাঠানো হবে, গৃহবন্দি করা হবে। যদি আদালতের বিচারে দোষী হন, তার সাজা হবে। সরকার আদালতের আদেশ মানতে বাধ্য হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একটু অন্যভাবে বললেও তার কথারও মানে কিন্তু ওই রকমই হয়। তিনি বলেছেন, খালেদ জিয়াকে গ্রেফতার কিংবা জেলে পাঠানোর কোনো ভাবনা সরকারের নেই। আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সে কারাগারে যাবে কি যাবে না, বা মাফ পাবে কি পাবে না সেটা আদালত বলতে পারেন। যদি এমন হয়, মামলার বিচারে বেগম খালেদা জিয়ার দন্ড হলো, তিনি জেলে গেলেন সে ক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে? এর সোজা উত্তর, উচ্চতর আদালতে যাবে। এমন কি, এ কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতেও পারে। তেমন কিছু হলে সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৃতিত্ব ও সাফল্য অর্জন করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়াকেও মাইনাস করা গেল, বিএনপিকেও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা গেল। চাই কি বিএনপির কিছু লোককে টোপ দিয়ে নতুন একটা বিএনপি খাঁড়া করে নির্বাচনে বিএনপির নাম ব্যবহার করাও সম্ভবপর হতে পারে।
বিএনপি নির্বাচনবাদী বা নির্বাচনমুখী দল, কোনো বিপ্লবী দল নয় যে, নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। বিএনপির নেতারা সব সময়ই বলে আসছেন, তারা নির্বাচন করতে চান, তবে শর্ত হলো, নির্বাচনের কাক্সিক্ষত পরিবেশ ও সমতাভিত্তিক মাঠ থাকতে হবে। এ পর্যন্ত বিএনপি একবারই মাত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে অংশগ্রহণ করেনি। কেন ২০১৪ সালের ওই নির্বাচনে সে অংশ নেয়নি তা সবারই জানা এবং এর উপযুক্ত ব্যাখ্যা বিএনপির কাছে আছে। কাজেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বা নিতে চায়, এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশের খুব একটা অবকাশ নেই। বেগম খালেদা জিয়া কোনো মামলায় দন্ডিত হলে, নির্বাচন করতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একটি বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যের সার কথা হলো, দন্ডিত হলে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, এটা সঠিক নয়। এ ধরনের প্রচারণা অমূলক। বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল করতে কৌশলে অপপ্রচারণা চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। তার মতে, যদি সাজা হয়, আপিল করা হবে। আপিল হলো বিচারের ধারাবাহিকতা। তখন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে তিনি প্রার্থী হতে, দল ও জোটের নেতৃত্ব দিতে পারবেন। এ নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে তা অমূলক।
স্বাভাবিক ধারণা ও বিবেচনায় বলা যায়, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এ নিয়েও একটি বিতর্ক তৈরির চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার একমাত্র কারণ ছিল, তার নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি সরকারের মেনে না নেয়া। সেই দাবি থেকে বিএনপি সরে আসেনি। এখন সে বলছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা। আসলে দলনিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকার ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বিএনপির তরফে উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারি দল বা সরকার তার পূর্বাবস্থানের কথাই বলেছে। জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। সংবিধানে সহায়ক সরকার বলে কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আরও বলা হয়েছে, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে বাধ্য হবে। না নিলে তার নিবন্ধন বাতিল হবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির দাবি মানা না মানা দিয়ে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম পত্রিকান্তরে বলেছেন, বিএনপিকে তার প্রয়োজনেই নির্বাচনে আসতে হবে। দলের নিবন্ধন রক্ষা করতে হবে। তার নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইনের ৯০ এইচ (১) ধারায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পাঁচটি কারণে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। এই ধারার (ই) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল যদি পর পর দুটি সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে তার নিবন্ধন বাতিল হবে। এই উপধারায় বরাতেই বলা হচ্ছে, নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্যই বিএনপি নির্বাচনে আসতে বাধ্য হবে। বুঝতে অসুবিধা হয়, আইনের এই প্যাঁচে আটকে বিএনপিকে বিনা প্রশ্নে, বিনা দাবি পূরণে নির্বাচনে আনতে চাইছে সরকারি মহল।
বিএনপিও এ ব্যাপারে তার কঠোর অবস্থান প্রদর্শন করেছে। দলের নেতারা বলেছেন, নিবন্ধন বাতিলের জুজুর ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। নিবন্ধন হারানোর যে ভয় দেখানো হচ্ছে, সেই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কায় বিএনপি তার দাবি পরিত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেবে, এমন ধারণা যারা করছেন, বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে তাদের জন্য যথাযথ জবাব রয়েছে। বিএনপির একজন নেতা জানিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
এই ধরনের বাক-বিতন্ডা ও স্নায়ুযুদ্ধ প্রকৃত সমাধানের নির্দেশ করে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, আর একটি নির্বাচনের মাধ্যমে তার সুরাহা হতে পারে। দেশ-বিদেশের সবাই চায়, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হোক। এ জন্য আলাপ-আলোচনা ও সমাঝোতায় কোনো বিকল্প নেই। মাইনাস করা কিংবা কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে বাধ্য করা কোনো সমাধান দেবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের যথেষ্ট অখ্যাতি হয়েছে। সুযোগ এসেছে সেই অখ্যাতি দূর করার। গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সুশাসন, আইনের শাসন এসব নিয়ে যে প্রশ্ন আছে তা অপনোদনের একমাত্র পথ হলে কাক্সিক্ষত নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা।
এখানে মনে রাখা দরকার, কোনো দল বা সরকারই অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকতে পারে না। এক সময় না এক সময় তাকে ক্ষমতা অন্যের হাতে ছাড়তে হয়। সরকারি মহলের উচিত হবে জনগণের রায়ের ওপর ভরসা রাখা। জনগণের ভালো করে থাকলে জনগণ খোদ গরজেই আওয়ামী লীগের পক্ষে রায় দেবে। কৌশল করে, জনগণেকে বোকা বানিয়ে কিংবা কাউকে মাইনাস করে, বাধ্য করে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় টিকে থাকার তার কোনো দরকার নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন