আবদুল আউয়াল ঠাকুর : নিরাপত্তার ধারণা বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়। আধুনিক বিশ্বে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ধারণায় কিছু পরিবর্তন হলেও মৌলিক ধারণায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে শক্তিশালী দেশগুলোর তুলনায় কম শক্তিসম্পন্ন দেশগুলোর নিরাপত্তা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর কোন প্রান্তে কী ঘটছে তা বের করে নিয়ে আসা কোনো ব্যাপারই নয়। ফলে বিশ্বের কোন দেশ কখন কী করছে তা নিমিশেই বেরিয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়তই এ নিয়ে নানা আলোচনা সামনে উঠে আসছে। সে কারণে আত্মরক্ষার কৌশলেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। প্রথাগত পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত নানা ধরনের পরিবর্তন স্থান করে নিয়েছে। মূলত প্রতিরক্ষার ধারণার সাথে জাতীয় স্বাধীনতার সম্পর্ক রয়েছে। এর মূল বিষয় রাষ্ট্রীয় নীতি। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সুতরাং নিরাপত্তার প্রসঙ্গ নিয়ে যদি কোনো আলোচনা ওঠে বা থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে জনগণই হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মালিক। প্রতিরক্ষা ধারণায় দুটি বিষয়কে বিবেচনায় আনা যায়। জানাশোনা উদাহরণ দিয়ে এর সূত্রপাত করা যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন হয়েছিল প্রধান সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায়। শত শত সৈন্য অস্ত্র গোলাবারুদ পড়ে রইল কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরাজয়ের শিকার হলেন সিরাজ-উদ-দৌলা। আবার ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক যুদ্ধের বিবরণ রয়েছে যেখানে সেনাপতির সিদ্ধান্তের কারণেই বিজয় সম্পন্ন হয়েছে। মুতার যুদ্ধে পরপর তিনজন সেনাপতির শাহাদতের পর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ। তার যুদ্ধ কৌশলে সে যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হয়েছিল। যুদ্ধে সেনাপতির ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনার প্রয়োজন নেই। এটি স্বীকৃত। আগের যুগের তুলনায় বর্তমান যুগে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মাত্র সেদিন হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসরাইলি সেনাপ্রধান পদত্যাগ করলেন। এটি হচ্ছে একদিক। এই ক্ষতি যতটা তার চেয়েও রাজনৈতিক গাদ্দারির ক্ষতি অনেক বড়। আমাদের চোখের সামনে বড় উদাহরণ হচ্ছে সিকিম। দেশটির নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জী স্বাধীনতা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন। পলাশীতে যে স্বাধীনতা আমরা হারিয়েছিলাম প্রায় দু’শ বছর লড়াই করে তা ফিরে পেয়েছি কিন্তু সিকিমের জনগণ যা হারিয়েছে তা হয়তো ইহজনমেও আর ফিরে পাবে না। আজকের দিনে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা লাভ করলেও মূলত ভৌগোলিক অখন্ডতার প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কথা উঠেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর নিয়ে। বলা হচ্ছে, এই সফরে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে দিল্লি জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রস্তাবিত ২৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশে অস্ত্র (মিলিটারি হার্ডওয়ার) বিক্রি করতে চাইছে। এই চুক্তি হলে ভারত অস্ত্র কেনার শর্তে বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ (লাইন আব ক্রেডিট) দেবে- যা দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে হবে। হিন্দুস্থান টাইমস এ সংক্রান্ত খবরে বলেছে, গত নভেম্বরে চীনের কাছ থেকে দুটো সাবমেরিন কেনায় বাংলাদেশের ওপর ক্ষুব্ধ ভারত। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বলা হয়েছে, আসন্ন সফরে যেভাবেই হোক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে হাসিনার সই করানোর চেষ্টায় ভারত। এই চুক্তি সম্পাদন হলে এটাই হবে কোন দেশের সাথে নয়াদিল্লির সবচেয়ে বড় আকারের প্রতিরক্ষা চুক্তি। অনুচুক্তি বা সমঝোতা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে যৌথ সহযোগিতায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করবে। এ ছাড়া সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ আরো নিবিড় হবে। বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির আরো বাড়ানো হবে। কয়েক বছর ধরে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে চলমান যৌথ মহড়ার পরিধি আরো বাড়ানো হবে।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন ওমর এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে ভারত সফরকালে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নামে চুক্তি বা এমওইউ সম্পাদন প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় স্বাধীনতা বিপন্ন করার কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। বদরুদ্দীন ওমরের এ বক্তব্যের ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তির অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের একটি চুক্তি করেছিলেন। সম্পাদিত ওই ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির ১২ ধারায় বলা হয়েছিল, কেউই চুক্তিভুক্ত অপর দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোনো সামরিক জোটে শামিল হবে না বা অংশগ্রহণ করবে না। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণ পরিচালনা করবে না এবং অপর দেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে বা অপর দেশের জন্য সামরিক হুমকি সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো কাজে নিজের দেশের এলাকা ব্যবহৃত হতে দেবে না। চুক্তিভুক্ত কোনো দেশ আক্রান্ত হলে বা আক্রমণের হুমকি দেখা দিলে হুমকি মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে উভয় দেশই অনতিবিলম্বে পারস্পরিক পরামর্শে মিলিত হবে এŸং এভাবে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। চুক্তি অনুযায়ী যে কোন একটি দেশের নিরাপত্তা বা সংহতি বিপন্ন হলে কার্যকর উপায় উদ্ভাবনের জন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার লেখে, ১২ অনুচ্ছেদে বিভক্ত ভারত-সোভিয়েত চুক্তির অনুরূপ এ ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। এই চুক্তি সম্পাদনের পরবর্তী দু-একটি ঘটনার মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ছিল, বিদ্রোহী মিজো দমনে ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশে আগমন ঘটেছিল। ওই বছর ২৪ মার্চের রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্রোহী মিজোদের দমন করার কাজে এখানকার আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ভারতীয় সেনারা আবার প্রবেশ করেছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি শুনতে আর দশটা চুক্তির মতো মনে হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে এ ধরনের চুক্তি হচ্ছে জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের যত চুক্তি হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই চুক্তির কারণে দেশপ্রেমিকদের রক্তে হোলি খেলেছে চুক্তিকারীরা। কারণ, কথায় যাই থাক মূল চুক্তির অন্তনির্হিত সত্য হচ্ছে, চুক্তিকারী প্রভাবশালী দেশই মূলত অন্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষমতার পালাবদলে কারা ক্ষমতায় থাকবে, কারা জনগণের ভাগ্য নিয়ন্ত্রকের ভ‚মিকায় থাকবে সেটিও মূলত নিয়ন্ত্রিত হয় এসব চুক্তির রক্ষকদের হাতেই। পৃথিবীর বহু দেশে এ ধরনের চুক্তির বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল হয়েছে, হচ্ছে। এ অঞ্চলে সাবেক পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ সালের ১৯ মে করাচিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাফরুল্লাহ খান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কেনেথ ইমারসন পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তির কারণে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। ১৯৫৩ সালের ১৪ ও ১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহের কাউন্সিল সভায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছিল। ১৯৫৫ সালের ২১, ২২, ২৩ অক্টোবর ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “এই কাউন্সিল অধিবেশনের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, পাকিস্তান সরকার গত কয়েক বৎসর পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি, বাগদাদ চুক্তি, সিয়াটো চুক্তি প্রভৃতি এমনসব চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে যেসব চুক্তির দ্বারা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং দেশের অর্থনৈতিক ব্যবসাগত ও বাণিজ্যিক স্বাধীনতা ক্ষুণœ হয়েছে।” সাতসমুদ্রতের নদীর পারের দেশের সাথে চুক্তির কারণে যদি দেশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষুণœ হয় তাহলে বৈরী প্রতিবেশীর সাথে অনুরূপ চুক্তির পরিণতি কী হতে পারে তা অনুমান করা সম্ভব নয়। পাক মার্কিন সামরিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে সে সময়ের রাজনীতিতে যাই ঘটুক না কেন, এটাই সত্যি যে, পাকিস্তানে ’৭১ সাল পর্যন্ত কোনো গণতান্ত্রিক শাসন না আসতে পারার মূল কারণ ছিল এই চুক্তি। আবার নতুন করে অনুরূপ চুক্তি যখন ভারতের সাথে হওয়ার আলোচনা হচ্ছে সঙ্গত বিবেচনাতেই দেশের রাজনীতির ভাবনা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন যা ঘটছে তাকে যদি একটি কঠিন সময় বলা যায় তা হলে তা খুবই কম হবে। এক বাকরুদ্ধকর বাস্তবতায় চলছে বাংলাদেশ। এ কারণে চলমান ‘গণতন্ত্র’ জনগণের জন্য এক ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা অর্থাৎ ভোটাধিকারের কথা বলার অপরাধে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে এখন প্রতিনিয়ত জঙ্গি মামলার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। করতে গেলে গ্রেফতার-আটক-হয়রানি এমনকি গুমের মতো ঘটনা নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এরপর দেখা যাবে ভারতের সাথে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদিত হলে জনগণ তার বিরোধিতা করলে তা নিরোধে সরাসরি ভারতীয় বাহিনীকে ডাকা হবে। নতুন নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। ভোটে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবেন। তার আমলে হওয়া প্রথম নির্বাচনে দেখা গেল জনগণ তার কথায় কোনো আস্থা পায়নি। নজিরবিহীনভাবে কম ভোট পড়েছে। অন্যদিকে প্রকাশ্যে সিলমারা, সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনতাইসহ ভোটে কারচুপি বলতে যা বোঝায় তার সবটাই হয়েছে বলে প্রকাশিত খবরাদিতে দেখা যাচ্ছে, অথচ নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতা আর রকিব কমিশনের কথার সাথে বর্তমান কমিশনের কথায় কোনো তারতম্য আছে বলে মনে হয় না। বোধকরি নাম পরিবর্তন করে বললেই হয়। সরকারি দলের দায়িত্বশীলরা বলছেন, বিএনপিকে মাঠে নামতে দেবেন না। সুতরাং নির্বাচনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। এই প্রশ্ন আরো গুরুতর আকার হয়ে দেখা দিয়েছে ভারত সফরকালে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদনকে ঘিরে। এই সফরের সময়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে তার রূপরেখো চ‚ড়ান্তকরণের কাজ চলছে বলেও বলা হয়েছে। তবে সহযোগিতার চরিত্র নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অবশ্য এখনো কিছু কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভারত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পক্ষে হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশ তেমন কিছু চায় না। এমনকি ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ শব্দযুগল নিয়েও আপত্তি রয়েছে। বিষয়টিকে তারা বরং সমঝোতা স্মারকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী। দেশীয় রাজনীতিতে বাংলাদেশ এমন কোনো ধারণার সৃষ্টি করতে চায় না যে, দেশটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হতে যাচ্ছে। যৌথ সহযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য কোন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করা হবে সে বিষয়ে অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। বাংলাদেশের একটি সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ভারতীয় নেতৃত্বকে বাংলাদেশ এটুকুু বুঝিয়ে দিয়েছে, একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তারা সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তার করবে। মূল আলোচনা বিশ্লেষণ করলে এটা বোঝা যায়, আগামী নির্বাচনকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়েছে একদিকে সরকারি মহল, অন্যদিকে ভারতীয় পক্ষ। ২০১৪ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার যেভাবে অনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি ভঙ্গ করে বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে তার সাথে বর্তমান আলোচনার একটি যোগসূত্র রয়েছে। ব্যাপারটি হলো এরকম যে, ভারতীয়দের সাথে একমত হলে হয়তো তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখা হবে, নয়তো তারা হাত গুটিয়ে নেবে। এক্ষেত্রে সরকারি মহল কী চিন্তা করছে অথবা তারা কীভাবে দেখছে সেটি তাদের ব্যাপার হলেও এর সাথে গুরুতর জাতীয় স্বার্থের সম্পর্ক রয়েছে। অন্যান্য দেশের সাথে কোথায় কী হয়েছে সেসব আলোচনায় না গিয়ে বলা যায়, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সাথে কোনো বিবেচনাতেই সৎপ্রতিবেশীর আচরণ করছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায়নি। পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হওয়ার পরেও তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে ভারতকে যতটা দিয়েছে, তার সিকি ভাগও আনতে পারেনি। এ সময়ে বাংলাদেশ ভারতের স্বার্থে অনেক বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে, সীমান্তে ভারতবিরোধী বিদ্রোহী দমনসহ কানেকটিভিটি চুক্তি করে ভারতকে অনেক সুযোগ করে দিয়েছে।
বর্তমান বিশ্বেও এমন অনেক দেশ পাওয়া যাবে যে দেশে কোনো সেনাবাহিনী নেই। লিবিয়ার সাবেক নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফী তার দেশের সীমান্ত প্রতিবেশীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের আলোচনায় অনেকে বলেন, বন্ধু বদলানো যায় প্রতিবেশী বদলানো যায় না। অনেকে আবার এ ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আধুনিক রাষ্ট্রেও প্রায়শই রাষ্ট্রের ভুগোল পরিবর্তিত হচ্ছে। ভুগোল পরিবর্তিত হলে প্রতিবেশীরও পরিবর্তন হয়। সম্পর্ক কোনো একপক্ষীয় বিষয় নয়। এটি কেবল দেয়ার নয়, নেয়ারও। দেয়া-নেয়ার এই সম্পর্ক নির্ভর করে মনমানসিকতার ওপর। ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যে সমর্থন করেছে তা কোনো বিবেচনাতেই নিঃস্বার্থ নয়। সে কথা বড় নয়। ভারত একটি বড় প্রতিবেশী দেশ। তার দেশের অভ্যন্তরেই এখনো অনেক বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। কাশ্মীর থেকে শুরু করে সেখানে নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। এ পর্যন্ত ভারত কোনো দেশের সাথে এ ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি। বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। অবশ্যই দেশের শত্রু-মিত্রের ভাবনা থেকেই প্রতিরক্ষা ভাবনাকে মেলাতে হবে। এখানে আপসের কোনো পথ নেই। কারণ বিষয়টি জনগণের সাথে জড়িত। জনগণকে নির্বোধ বিবেচনায় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে বোধকরি সেটা বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না। এখন মূল ভাবনা হচ্ছে নির্বাচন। সরকার যদি ভারতের সাথে জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কোনো চুক্তি সম্পাদন করে বা ভবিষ্যতে করার জন্য অঙ্গীকার করে তা হবে জাতির জন্য আত্মঘাতী। বাংলাদেশে গণতন্ত্র-ভোট-নির্বাচন এসবের মূল বিষয় যদি হয় ভারতীয় নীলনকশার বাস্তবায়ন তাহলে বোধকরি পুরো বিষয় নিয়েই ভাবার সময় এসে গেছে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই জনগণের কাছে ভারতীয় প্রস্তাব পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন