স্টাফ রিপোর্টার : পুরান ঢাকার সব কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল রোববার দুপুরে লালবাগ শহীদনগর এলাকায় কেমিক্যাল কারখানার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার উদ্বোধন শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ প্রমুখ।
মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, কে কিভাবে, কী ব্যবসা করবে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। যে কোনো মূল্যে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। যে যত বড়ই হোক না কেন, কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, এ রাসায়নিক কারখানাগুলো থেকে আগুন লেগে ইতোমধ্যে অনেক সাধারণ মানুষ মারা গেছে। তাই এসব কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। আমাদের কথা পরিষ্কার, জননিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলতে পারে এমন কারখানা আমরা পুরান ঢাকায় থাকতে দেবো না। এখান থেকে সরিয়ে দেবো। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান চলবে। এসব কারখানা-গুদাম সরিয়ে নিতে মালিকদের কোনো নির্দিষ্ট জায়গা দেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এটা কারখানা মালিকদের ব্যাপার। তারা কারখানা কোথায় চালাবে সেটা তাদের ব্যাপার। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের কিছু করার নেই। এসব কারখানা-গুদাম সরিয়ে নিতে প্রচারও চালানো হয়েছে বলে জানান মেয়র।
মেয়র বলেন, এসব কেমিক্যাল কারখানার মালিককে আর ট্রেড লাইসেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স দেয়া হবে না। ইসলামবাগ, শহীদনগর, চকবাজার, হাজারীবাগ, সিদ্দিকবাজার, বাবুবাজার, নিমতলী, শ্যামবাজার, মোগলটুলি প্রভৃতি এলাকার অবৈধ কেমিক্যালের কারখানাগুলো যেকোনো মূল্যে উচ্ছেদ করা হবে।
গতকাল রোববার লালবাগের শহীদনগর এলাকায় মেয়র সাঈদ খোকনের উপস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান শুরু করে। বেলা সাড়ে ১২টায় অভিযানের শুরুতে একটি কারখানাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুটি কারখানাকে সরিয়ে নিতে বলা হয়। ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ অভিযানে অংশ নেন।
অভিযানের শুরুতে লালবাগের শহীদনগরের ১ নম্বর গলির ইউনিক পলিমারের কারখানায় যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্লাস্টিক পণ্যের জন্য অনুমোদন নিলেও কারখানাটিতে তরল দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ মজুদ ছিল। এসব রাসায়নিক দিয়ে জুতা তৈরির আঠাসহ বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করা হয়।
অভিযানের খবর পেয়ে কারখানাটির মালিক আবদুল করিম সেন্টু পালিয়ে যান। সে সময় কারখানায় কোবাত আলী নামের এক শ্রমিক ছিলেন। পরে আদালত ওই কারখানাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে। অনাদায়ে কারখানার কর্মচারী কোবাত আলীকে ৬ মাসের কারাদÐ দেয় আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা কবির বলেন, এ কারখানায় অগ্নি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্লাস্টিকের জন্য লাইসেন্স নেয়া হলেও তরল কেমিক্যাল মজুদ করে রাখা হয়েছে। অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইনের ২০০৩-এর ১৮ ধারা অনুযায়ী শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে এ শাস্তি দেয়া হয়েছে।
২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকার আগামাসি লেনের কায়েতটুলির সাপ মন্দির রোডে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে ১২৫ জনের মৃত্যু হয়। এলাকাবাসীর বক্তব্য, এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য রান্নার সময় ঘটনাস্থলের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়। পরে আগুন আশপাশে কাগজের দোকান, জুতা ও প্লাস্টিক সামগ্রীর কারখানার দাহ্য পদার্থে লেগে ছড়িয়ে পড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন