তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘আশ্রয়’-এর উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সমিতির সদস্য উপকারভোগীদের মধ্যে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য একটি করে কুঠি (ঘর) দেয়া হয়েছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে চার হাজার টাকা। অথচ এলাকার হাটবাজারে এসব কুঠি (ঘর) বিক্রি হচ্ছে আটশ থেকে এক হাজার টাকায়। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্প কর্মকর্তা, মাঠকর্মী ও ঠিকাদার যোগসাজশ করে সদস্যদের এক হাজার টাকা মূল্যর কুঠি দিয়ে চার হাজার টাকা দাম দেখিয়ে অর্থ লোপাট করেছেন। এদিকে অর্থ লোপাটের এই খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। চাঁন্দুড়িয়া ইউপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সদস্য বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করা হলে সমিতির সদস্যদের মধ্যে সরবরাহ করা কুঠি নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যাবে। জানা গেছে, ২০১৩ সালে রাজশাহীর তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া, সরনজাই ইউনিয়ন (ইউপি) ও গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের (ইউপি) গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্যে হাঁস-মুরগি পালনে সহায়তা করতে তাদের মধ্যে কাঠের তৈরি কুঠি (ঘর) বিতরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বেসরকারি সংস্থা আশ্রয় (এনজিও) পিকেএসএফের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এসব এলাকার এক হাজার চারশ পরিবারের মধ্যে পাঁচ হাজার কুঠি সরবরাহ করা হবে। প্রতিটি কুঠির মূল্য ধরা হয়েছে চার হাজার টাকা। এসব কুঠি সরবরাহের জন্য চাঁন্দুড়িয়া ইউপি সদস্য ও করাতকল মালিক কেরামত আলীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় আশ্রয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও করাতকল মালিক মিলেমিশে কুঠি প্রকল্পের টাকা হরিলুট করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে বেসরকারি সংস্থা আশ্রয় (এনজিও)-এর উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মাত্র এক হাজার টাকা মূল্যর কুঠি সরবরাহ করে চার হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে প্রকল্পের দুই কোটি টাকার মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন ইউপি সদস্য ও চুক্তিবদ্ধ করাতকল মালিক কেরামত আলী। এসব ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্রদের ভাগ্য উন্নয়নে বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট করে একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের পকেট ভারী করেছেন। কিন্তু হতদরিদ্ররা তাদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ করাতকল মালিক ও ইউপি সদস্য কেরামত আলী বলেন, প্রতিটি কুঠি তৈরিতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা ব্যয় হলেও এনজিও ধরেছে ৪ হাজার টাকা। তাহলে আপনি কীভাবে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মূল্য ধরলেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এটা এনজিও কর্মকর্তা ও আমাদের ব্যাপার। এটা নিয়ে এত বেশি বোঝা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে আশ্রয়-এর উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পের তানোর শাখা কর্মকর্তা (ম্যানেজার) আবদুল ওহাব বলেন, প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। তিনি বলেন, এক হাজার ৪০০ পরিবারের মধ্যে ৫ হাজার কুঠি বিতরণ শেষের দিকে কুঠি প্রতি ৪ হাজার টাকা করে ব্যয় ধরা হয়েছে। তাহলে আপনাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করাতকল মালিক কীভাবে সাড়ে ৫ হাজার টাকা কুঠিপ্রতি ব্যয় ধরেছে জানতে চাইলে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে চাঁন্দুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে চাঁন্দুড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন বলেন, কুঠি প্রকল্পের সিংহভাগ টাকাই হরিলুট করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সরেজমিন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন