মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বাধাহীন আ.লীগ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বিএনপি তৃণমূল

প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বাধাহীন অবস্থানে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। বিপরীতে রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি-জামাতের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে বইছে উদ্বেগ, আতঙ্ক, অজানা আশঙ্কাসহ ভবিষ্যত নিরাপত্তার অশ্চিয়তা। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এহেন পরিস্থিতি এখন সিলেটের তৃণমূলে বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে মন ভালো নেই বিএনপি-জামাত সমর্থকদের। বিরাজ করছে চাপা সংশয়, সন্দেহ। সরকার দলের রাজনীতির দৃঢ়তায়, তারা মূলত দিশেহারা। তারপরও নির্বাচনী আমেজে শরিক হওয়ার উত্তেজনা তাদের চোখে-মুখে। প্রথমবারের মতো এবার দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সারাদেশে। অতীতে ব্যক্তির ইমেজ, গোষ্ঠীগত শক্তি, অর্থ, স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তির পাশাপাশি, আত্মীয়তার বন্ধন-ই ছিল স্থানীয় নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অন্যতম নিয়ামক। এমনকি নির্বাচনকে সামনে রেখে বংশগত সম্পর্কের পাশাপাশি দূর-আত্মীয়তার বন্ধন নতুন করে উন্নয়ন ঘটত। কিন্তু এবার রাজনীতিক ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ায় আমূল একটি পরিবর্তন ঘটেছে সামগ্রিক অবস্থায়। দলীয় পরিচয়ে বিভাজন হয়ে পড়ছে পরিবার, গোষ্ঠীসহ সব সম্পর্কে দলীয় অবস্থান পাকাপোক্ত করতে যেয়ে সামজিক পূর্বেকার শৃংখলায় বিরাট ধাক্কা বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাম্য মাতব্বরসহ স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের চিরায়ত ভিলেজ পলিটিক্স গুলিয়ে যাচ্ছে রাজনীতিক আদর্শে। বিশেষ করে নির্বাচন কেন্দ্রিক সংঘবব্ধ মোড়লীপনার কোন খেল থাকছে না। এর পরবতীতে রাজনীতিক শক্তিমত্তার প্রদর্শন অলংকার হয়ে উঠতে যাচ্ছে। সে অবস্থায় অনেক অনেক এগিয়ে থাকছে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ও প্রচেষ্টা। বিপরীতে বিরোধী দল তথা বিএনপি জামাত সমর্থদের শংকিত ও ভবিষ্যত নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন। কারণ নগর বা উপজেলা কেন্দ্রীয় রাজনীতির যে গরম বাতাস ছিল, সেই অবস্থা এখন গাঁও গেরামে ঢেউ তুলেছে। নীরবতা ভেঙে ডোর টু ডোর এখন রাজনীতির চর্চা চলছে। প্রতীক সাথে সাথে মত ও আদর্শের বিজয় পেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছেন কে কোন দলের সমর্থক। দেশের রাজনীতিতে দমন নিপীড়নের ভয়ার্ত অবস্থায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এমনিতেই কোণঠাসা। সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে নিজকে রক্ষায় নানাভাবে কৌশলী হয়ে উঠেছিলেন তারা। অনেকে সরকার দলের স্থানীয় নেতাদের সাথে স্বার্থগত সম্পর্ক তৈরি করে নিজেকে নিরাপদ করে তোলার চেষ্টায় ছিলেন সদা ব্যস্ত। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টার দোরগোড়ায় আঘাত করছে দলীয় প্রতীকের ভারিক্কি। এখন দলীয়ভাবে একজন আরেকজনের দিকে আঙ্গুল তুলছেন, কথা বলছেনও সেইভাবে। বিভক্তি মধ্যে দিয়ে পরিচিত হয়ে উঠছেন কে কোন দলের। বাপ-বেটা-স্ত্রী-কন্যা-নাতি নাতিনী প্রত্যেকেই দলীয় বিবেচনায় আলোচিত হয়ে উঠছেন। ভোটের পূর্বেই গুনে নেয়া যাচ্ছে ভোটের আগাম সম্ভাব্য হিসাব। এমনকি আমজনতা বলে গাঁও-গেরামে কেউ থাকার চেষ্টা করে পারছে না। দলীয় পরিচয় সমর্থন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বাধ্য হয়ে জোর দেখেই মৌন কিংবা প্রকাশ্যে সমর্থন জানাচ্ছেন তারা। সরকার দলের প্রতি সমর্থন যতটা জোরে দেখাতে পারছেন ঠিক ততটা বিরোধী দলের প্রতীকে প্রতি নিজের সমর্থন গোপন করছেন। অপরদিকে, বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাকর্মীরাও ভাব বুঝে কথা বলছেন। যথা সম্ভব নিজেদের রাজনীতিক নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চলাচ্ছেন। কারণ নির্বাচন পরবর্তী রোষাণলের চিন্তায় তারা উদ্বিগ্ন। সরকার দলের চক্ষুশুলে পরিণত হয়ে দমন নিপীড়নে পড়তে চান না তারা। এতোদিন গোপন তালিকায় পড়ে তটস্থ থেকেছেন। সেই তালিকায় পড়ে জেল জুলুমসহ ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনও করেছেন। কর্ম-ছাত্রজীবন লাটে উঠেছে অনেকের। সেই ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে ছটফট করে কূল কিনারা হয়নি তাদের। এখন মরার উপর খাঁড়া ঘা হয়ে উঠেছে দলীয় প্রতীকের নির্বাচন। নিজের আদর্শিক সম্পর্ক না পারছেন প্রকাশ্যে তুলে ধরে প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে, না পারছেন নিজেকে চাপিয়ে রেখে ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। উভয় সংকটে পড়ে দিশেহারা বিএনপি-জামাত সমর্থকরা। অনেক গোপনে আঁতাত করছেন সরকার দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর সাথে। তারপরও শেষ রক্ষা হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই কারে মনে। সরকার দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিএনপি-জামাতেন, সেই সব সমর্থক ও সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করে নিজেদের পক্ষে নেয়ার কৌশল করছেন। অপরদিকে, বিরোধী দলের প্রার্থীরা সেই সব লোকদের নিজের পক্ষে রাখার আপ্রাণ প্র্রচেষ্টা চলাচ্ছেন। কিন্তু ভরসা দিতে পারছেন না, সরকার দলের নানামুখী চাপ মোকাবিলার কারণ খোদ প্রার্থীরাও নিজেদের অবস্থান নিয়ে শংকিত, উদ্বিগ্ন। সিলেটের একাধিক ইউনিয়নের লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, এ নির্বাচনের একটি ভিন্ন মাত্রা হচ্ছে দলীয় প্রতীক। মানুষের মধ্যে রাজনীতিক সচেতনার পাশাপাশি, বিভেদ ও অসহিষ্ণুতার ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামীণ জনপদগুলোতে বিষয়টি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাজনীতিক ভেদাভেদ দিয়ে একে অন্যকে হেয় ও শায়েস্তা করার মানসিকতা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমজনতার জন্য বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। তবে নতুন প্রজন্ম একটি সময় তাল মিলিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এতে করে জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে চিন্তা ধারার সম্মিলন ঘটবে, যা নিঃসন্দেহে কল্যাণকর। কিন্তু এর আগে রাজনীতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে দমিয়ে রাখার টার্গেট মানুষের স্বাভাবিক মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করে তুলেছে। যেকারণে সর্ব মহলের মানুষ চাপা আতঙ্কে ভুগছে। শুধু মাত্র সরকার দলের সমর্থক ছাড়া। তবে স্থানীয় জনসাধারণের একটি অংশ ¯্রােতের সাথে তাল মিলেয়ে চলার চিন্তা করছেন। তারা মনে করছে, সরকার দলীয় সমর্থক নির্বাচিত হলে, উন্নয়ন-অগ্রগতি শুধু নয়, সাধারণ মানুষ রাজনীতিক দমন নিপীড়ন থেকে অনেকাংশে রেহাই পাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন