আবদুল আউয়াল ঠাকুর : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন বিজয় কেবল ভারতীয় রাজনীতিতে নয়, আঞ্চলিক রাজনীতিতেও নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নতুন বিজয়ের পর নতুন ভারত তৈরির শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, একটি নতুন ভারতের উদয় হচ্ছে। ১২৫ কোটি ভারতবাসীর শক্তি ও দক্ষতার ভিত্তিতে উঠে আসছে একটি নতুন ভারত। তিনি আরো বলেছেন, ২০২২ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করব তখন আমরা এমন একটা ভারত তৈরি করব, যা গান্ধীজি, সর্দার প্যাটেল ও বাবাসাহেব ভিমরাও অম্বেদকারকে গর্বিত করবে। ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান হঠাৎ আলোর কোনো ঝলকানি নয়। ’৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্তে¡র আলোকে বিভক্ত ভারত শাসনের দায়িত্ব পেয়েছিল কংগ্রেস। সেই থেকে প্রায় চার দশক কংগ্রেস ও ব্রাহ্মণরাই ভারত শাসন করেছে। ভারতীয় রাজনীতি-কূটনীতি মূলত এক বিশেষ শ্রেণির হাতেই আবর্তিত হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা যাবে, মনমোহন সিংয়ের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়েই কংগ্রেস রাজনীতির দেউলিয়াপনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। আরো খোলাখুলি ভাবে বলা যায়, জগজীবন রামের আমল থেকে ভারতের রাজনীতিতে যে ধারার শুরু হয়েছিল মনমোহন সিংয়ের মধ্য দিয়ে তার প্রাথমিক যুগের অবসানের পরই ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। সোনিয়া গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার ব্যাপারটি মূলত কংগ্রেস রাজনীতির এক বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবেই বিবেচিত। একইভাবে বলা যায়, কংগ্রেসি শাসনামলে ভারতীয় রাজনীতির অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা নানা প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ও তঞ্চকতাকে পুঁজি করে ভিতরে ভিতরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করে এই দলটি। প্রকৃত প্রস্তাবে হিন্দুত্বকে পুঁজি করেই তাদের বিকাশ শুরু হয়। ভারতের প্রতিষ্ঠাতা গান্ধী ভারত বিভক্তির সময় বলেছিলেন, হিন্দুস্তান হিন্দুদের, তবে সেখানে মুসলমানদেরও থাকতে দিতে হবে। কংগ্রেসের শাসনামলে এই তত্তে¡র যে হিপোক্রেটিক ব্যবহার হয়েছে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে সেখানে সংঘটিত দাঙ্গায় বেছে বেছে মুসলমানদের হত্যার ঘটনা। বাবরি মসজিদ নিয়ে সৃষ্ট দাঙ্গায় শত শত মুসলমান পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এর পরেও নানা ঘটনায় মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে তাদের জীবন্ত দগ্ধ করা হয়েছে। গর্ভবতী মুসলিম নারীদের পেট চিরে সন্তান ফেলে দেয়া হয়েছে। আর কাশ্মীরে যা ঘটেছে তার আলোচনা নতুন করে তুলে কোনো লাভ নেই। অস্কারবিজয়ী ভারতের প্রতিবাদী লেখক অরুন্ধতি রায় ভারতীয় এই বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেছেন তার লেখায়, বিশ্লেষণে এবং নানা আলোচনায়। সেই ভারতে এবার বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির বিজয় অবশ্যই বিশেষ বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এখানে বলে রাখা ভালো, জগজীবন রাম ও নরসীমা রাও উভয়ই শিকার হয়েছিলেন ভারতীয় বর্ণবাদের। কেবলমাত্র দলিত শ্রেণির বলে জগজীবন রাম ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। এমনকি তার মৃত্যুর পরও তিনি যথাযথ সম্মান পাননি। অনুরূপভাবে নরসীমা রাওকেও হটে যেতে হয়েছিল অনার্য বলে। সে বিবেচনায় নরেন্দ্র মোদি অনেক বেশি এগিয়েছেন। জাতপাতের ভারতে তার এই উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর।
মিনি ইন্ডিয়া বলে পরিচিত উত্তর প্রদেশসহ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির দখলে এসেছে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কোনো সন্দেহ নেই, উত্তর প্রদেশের ফল মোদির রাজনৈতিক সুনামি ছাড়া আর কিছুই নয়। বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদি যে ভেলকি দেখিয়েছিলেন এবারের বিধান সভাতেও ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি। আর উত্তর প্রদেশ দখলের কৃতিত্ব তিন বছর আগের সাফল্যকেও ম্লান করে দিয়েছে। ব্যাপারটি কেবলমাত্র একটি অঞ্চলেই ঘটেছে, তা বলা যাবে না। এর ঢেউ লেগেছে পশ্চিমবাংলাতেও। সেখানেও পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবনাচিন্তা করছেন তারা আপাতদৃষ্টিতে নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিলের ইস্যুকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বর্তমান আলোচনায়। এই সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদিকে শেষ করে দেবে বলে মনে করা হলেও দেখা যাচ্ছে, এটি শাপেবর হয়েছে। ভারতীয়রা মোদির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাহলে এটি অবশ্যই ভাববার রয়েছে। কারণ নোট বাতিলের পর প্রকাশিত খবরাদিতে দেখা গেছে, সাধারণ ভারতীয়দের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। ভাববার রয়েছে যদি এ থেকে তাদের দুর্দশাই বাড়বে তাহলে অবশ্যই তারা মোদি সরকারকে সমর্থন দিত না। অবশ্যই এর অন্তর্নিহিত কিছু বিষয় রয়েছে, যা ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করেছে। বিজেপি রাজনীতির মূল বিষয় হচ্ছে হিন্দুত্ব। এটাও বলা অনুচিত নয় যে, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মূল বিষয় হচ্ছে হিন্দুত্ব। কেবলমাত্র নিজেদের হিন্দু বিবেচনা থেকেই একটি ঐক্যবদ্ধ ভারতের ব্যাপারে অধিকাংশেরই কোনো দ্বিমত নেই। ব্যাপারটির ভিত্তিমূলে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ। মুসলমানদের আগে কেউ ঐক্যবদ্ধ ভারত প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। মুগল সাম্রজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের মৃত্যুর পর ভাগ্য বিড়ম্বিত সম্রাট হুমায়ুনের জীবদ্দশাতেই আফগান নেতা আদিল শাহের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপতি হিমু চুনার দুর্গ রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। হুমায়ুনের মৃত্যুর সাথে সাথে তিনি দিল্লি ও আগ্রার দিকে ধাবিত হন। এ সময়ে হিমু ৫০ হাজার অশ্বারোহী ও ৫০০ হস্তীসহ ইব্রাহিম সুরকে আক্রমণ ও পরাজিত করে আগ্রা দখল করেন। বাহ্যিকভাবে তিনি আদিল শাহের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলেও মুঘলদের বিরুদ্ধে তার রণোন্মত্ততার গোপন উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠা। এরপর হিমু দিল্লিও দখল করেন। নিজেকে স্বাধীন রাজা হিসেবে ঘোষণা করে বিক্রমজিত বা বিক্রমাদিত্য উপাধি ধারণ করেন। তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে সার্বিক জয়ে আরো অগ্রসর হতে থাকেন। হিমুর একলাখ সৈন্য ও দেড় হাজার হস্তীবাহিনীকে পানিপথে সম্রাট আকবরের বাহিনীকে মোকাবিলা করে। যুদ্ধে হিমু পরাজিত হন। কয়েকশ বছর মুসলমানদের ভারত শাসনের পর মুসলমানদের হাত থেকে ভারত দখল করে নিয়েছিল বৃটিশরা। নানা কৌশলে তারা পর্যায়ক্রমে সর্বভারতীয় শাসনভার গ্রহণ করেছিল। প্রায় দু’শ বছর বৃটিশরা ভারত শাসন করেছে। বৃটিশ ভারতে একপর্যায়ে দেশ স্বাধীন করার ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও কারা ভারত শাসন করবে সে ব্যাপারে মতভেদ দেখা দেয়। যদিও এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। বৃটিশরা স্পষ্টতই অনুভব করেছিলেন কোনো অবস্থাতেই মুসলমানদের কাছে ভারতের শাসনভার তুলে দেয়া যাবে না। যাইহোক, ভারতের প্রথম বৃটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন যা ভারতীয় ইতিহাসে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত তার ব্যর্থতার মধ্যদিয়েই পরিষ্কার হয়েছিল যে, হিন্দু-মুসলমান দ্ব›েদ্বর অবসান না হলে বৃটিশ তাড়ানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ ভারতে হিন্দু-মুসলমান দুটি আলাদা জাতিসত্তা। অন্যভাবে বলা যায়, ডিভাইড এবং রুল থিয়োরি অনুযায়ী শাসকরাও তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে একে উসকে দিয়েছিল। ১৮৫৭ সালের পর থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন স্থান করে নিয়েছে। ইংরেজ নেতৃত্বে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে শাসন-দখলের যে প্রক্রিয়া আস্তে আস্তে রূপ নিতে থাকে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে। প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বৃটিশরাজ ভারতের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ভারত শাসননীতিতেও পরিবর্তন আসে। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ এ অঞ্চলের রাজনীতিতে একটি বড় বিবেচ্য বিষয়। প্রকাশ্যত শাসন সুবিধার কথা বলা হলেও ভিন্ন কৌশলের অংশ হিসেবেই বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছিল। শাসন প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ ছিটকে পড়ার পর বঙ্গভঙ্গের বাস্তবতায় পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের কিছু উপকার হতে পারে এ বিষয়টি হিন্দুত্ববাদীদের গাত্রদাহের কারণে পরিণত হয়েছিল। সর্বভারতীয় বিবেচনায় এটি একটি অঞ্চলের বিষয় হলেও বঙ্গভঙ্গকে রুখতে সারা ভারতের ব্রাহ্মণ থেকে শুরু করে শূদ্র পর্যন্ত ঐক্য বন্ধন তৈরি করেছিল। সর্বভারতে হিন্দুত্বের এই উত্থানের ইতিহাসই আজকের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার দাবি রাখে। প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকাশ্যত ব্যর্থতা তাত্তি¡কতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। আর এ পথেই ভারত বিভক্ত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ পরবর্তীতে গঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। হিসেবের বিচেনায় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের বয়সের ব্যবধান অনেক। বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতীয় সমাজ বাস্তবতায় এটা তখন প্রমাণিত যে, বৃটিশদের সহায়তায় ভারতীয় হিন্দুদের বর্বরতায় মুসলানদের বাস করা কঠিন হয়ে উঠেছে। ভারতে হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বসবাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা মুসলমানদের থাকা সত্তে¡ও প্রমাণিত হয় যে, এটা অসম্ভব। এই অসম্ভবই তুলে ধরা হয়েছিল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্তে¡। তিনি স্পষ্টতই প্রমাণ করেছিলেন কৃষ্টি -কালচারে ভারতে মুসলমানরা এবং অন্যরা অভিন্ন নয়। তার এই দ্বিজাতিতত্তে¡র আলোকেই শেষ পর্যন্ত ভারত বিভক্ত হয়েছিল।
জনসংখ্যার বিবেচনায় ভারত বিশ্বের একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী। কংগ্রেস আমলে এই নিরপেক্ষতার চরিত্র যা ছিল তা নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। ভারতে মুসলমানসহ অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ভারত এক বিভীষিকাময় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কাজে ছিল তার উল্টোটি। হিপোক্রেসির সর্বশেষ নজির কংগ্রেস রেখে গিয়েছে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনে। আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে অনৈতিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচনে কংগ্রেস সরকার হস্তক্ষেপ করে। এটি কার্যত আগ্রাসনের শামিল। কংগ্রেস শাসনামলে সেখানে চলা কংগ্রেসের হিপোক্রেসির বিরুদ্ধেই ভারতের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। প্রথমদিকে বিজেপির বিজয় নিয়ে যত ধরনের বিশ্লেষণ হয়েছে এখন দিন যত এগোচ্ছে বিশ্লেষণের ধরনও পাল্টাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ক্ষমতায় এসে তিনি ভারতের বন্ধ দুয়ার খুলে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। জনসংখ্যার কথা বাদ দিলে ভারত এখনো প্রকৃত বিবেচনায় কোনো সভ্য দেশে পরিণত হতে পারেনি। এখনো সেখানে লাখ লাখ লোক প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগ করে। কন্যাসন্তান জন্মানোর আগেই হত্যা করে পিতামাতা। কৃষ্টি-কালচারের বিবেচনাতেও ভারতীয়রা কোনো ভদ্রতার ধার ধারে না। তাদের সৌজন্যবোধ নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দেশটি এখন মূলত বহুজাতের মানুষের নিরাপদ চারণভ‚মিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সেখানে অবশ্যই অর্থনৈতিক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, ব্যবসার অবস্থা হয়তো তৈরি হয়েছে। ওই প্রেক্ষিতে বিজেপির বর্তমান বিজয় দেখলে এটা বলা যায় যে, দায়দায়িত্বের ব্যাপারটি এককভাবে তার বা তাদের ওপরই বর্তাবে। যে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার বিষয়কে কেন্দ্র করে সারা ভারতে মুসলমানদের নিধন করা হয়েছিল এই বিজয়ের পর সেই মন্দির প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটিও সামনে চলে আসবে। যে মন্দিরের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই সেটি হয়তো প্রতিষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক বাস্তবতা বাবরি মসজিদের জায়গায়। এটাও বলা বোধহয় অনুচিত নয় যে, নিঃসন্দেহে এই বিজয়ের প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়বে।
যে নতুন ভারত গড়ার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তা মূলত হিন্দুদের ভারত। একসময়ে দ্বিজাতিতত্তে¡র কথা বলাতে কোনো কোনো মহল সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খুঁজে বেড়াতেন। তারা মনে করতেন, এখানে সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ রযেছে। ভারতে হিন্দুত্ব মূলত আগ্রহী সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। নেপালের ঘটনা প্রমাণ করেছে ভারতীয় এই সংস্কৃতি কতটা মারাত্মক। সেখানের জনগণ স্বেচ্ছায় ভারতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ভুটান তার দেশের সাথে ভারতীয় সড়ক যোগাযোগে আপত্তি তুলেছে। চীন-পাকিস্তানের আলোচনা তো অর্থহীন। দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে সেদিন বাংলাদেশের রাজধানীতে যা ঘটেছে তা তো ভারতীয় এই সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। এ বাস্তবতায় বলা যায়, ভারত দিনদিনই একটি আগ্রাসী শক্তিতে পরিণত হতে চলছে। সেখানকার সকল শ্রেণির মধ্যেই এই প্রবণতা যে দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে তার প্রমাণ এবারের নির্বাচনে বিজেপির অধিক শক্তি অর্জন। প্রতিটি দেশের সিদ্ধান্তই সে দেশের জনগণের। ভারতে এখন যা ঘটছে সেটি সে দেশের জনগণের ইচ্ছাতেই ঘটছে। এর পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা কষ্টকর। সেখানে মুসলিমরা এখন বিজেপির সাথে মিলে কাজ করছে। ভারতের এই হিন্দুত্বের বিজয়কে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে দেখলে তার এক ভিন্ন অর্থ দাঁড়াতে পারে। যেভাবেই ব্যাখ্যা করা যাক না কেন, এটাই সত্যি যে, বিশ্বরাজনীতি এখন মূলত ধর্মকেন্দ্রিক। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোতেও এখন নির্বাচনে ধর্মীয় ¯েøাগানই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর একটা ভিন্ন ব্যাখ্যাও রয়েছে। আধুনিকতার নানা জটিলতায় মানুষ এখন বিপর্যস্ত। মানুষ মুক্তির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। ভালোমন্দ যাই হোক, এটা স্বীকার করতেই হবে, বিশ্বরাজনীতি এখন পরিবর্তনমুখী। ভারতের এই হিন্দুত্বের অগ্রাভিযান যে কোনো বিবেচনায় আমাদের জন্য বিশেষ মূল্যায়নের দাবি রাখে। আমাদের টিকে থাকার সাথে আমাদের জাতীয় বোধ-বিশ্বাসের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা যা চলছে তারও নতুন কোনো মূল্যায়নের প্রয়োজন নেই। ভারতের রাজনৈতিক পরিবর্তন বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা সমাধানে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটাবে না। বাংলাদেশ তার কোনো ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি। আদৌ পারবে কিনা তাও বলা কষ্টকর। পানি-সীমান্তসহ যে কটি সমস্যা গুরুতর আকারে রয়েছে তার কোনো সমাধানের আলামত নেই। বোধকরি এখানেই জাতীয় সংহতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন