মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পীদের দারুণ কদর ভারতে বাংলাদেশী শিল্পীদের দারুণ উপেক্ষা

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোবায়েদুর রহমান : ভারতীয় সিনেমার বাংলাদেশে প্রদর্শন, বাংলাদেশ টেলিভিশনসমূহ ভারতে প্রদর্শন না করা, বাংলাদেশে ২৫/৩০টি ভারতীয় হিন্দি এবং বাংলা চ্যানেল দেখানো- এগুলো নিয়ে বছরের পর বছর বিভিন্ন মিডিয়ায় লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু সবকিছুর ফলাফল হল ‘যথা পূর্বং তথা পরং’। একমাত্র ভারতীয় সিনেমার বাংলাদেশে প্রদর্শন এখন পর্যন্ত ঠেকে আছে। সেটারও কারণ হল, গরজ বড় বালাই। কারণ বাংলাদেশে যদি ভারতীয় হিন্দি সিনেমা প্রবেশ করে তাহলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধ্বংস হওয়ার প্রশ্ন তো রয়েছেই, বাংলাদেশের সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই ভাতে-পানিতে মারা যাবেন। পরিচালকরা মারা পড়বেন, কারণ তাদের পরিচালিত কোন ছবিই চলবে না। নায়ক-নায়িকারা মারা পড়বেন, কারণ সালমান খান, রনবীর কাপুর এবং দীপিকা পাডুকন, প্রিয়াংকা চোপরারা যখন বাংলাদেশের সিনেমার পর্দায় আসবেন তখন আমাদের নায়ক-নায়িকারা শুধু ম্লান হবেন না, একেবারে হারিয়ে যাবেন। এ আর রহমানের মতো সংগীত পরিচালকদের সুরে যখন শ্রেয়া ঘোষালরা কণ্ঠ দেবেন, তখন আমাদের কণ্ঠশিল্পীরা তলিয়ে যাবেন। সুতরাং বাংলাদেশে ভারতীয় ছায়াছবির প্রদর্শনীর যে বিরোধিতা করা হচ্ছে সেটি বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঠেকাবার জন্য নয়, বরং নেহায়েৎ অর্থনৈতিক কারণে, অর্থাৎ খেয়ে পরে বেঁচে থাকার কারণে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারটিতে সিনেমা জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে একজোট হতে পেরেছেন। একজোট হয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। সেই কারণেই এখনো বাংলাদেশে ভারতীয় ছায়াছবির প্রদর্শনী ঠেকে আছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি বাঁচানোর কোন বিবেচনা এখানে কাজ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল দেখানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রেম কোন ভূমিকাই রাখতে পারেনি। এ ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক ফ্যাক্টর কাজ করেছে।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়া, পরকীয়া প্রেম ইত্যাদি বিষয়ে কারো কোন সিরিয়াস মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। একটি ভারতীয় বাংলা চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠান বাংলাদেশের সাধারণ মানুষরা পাগলের মতো দেখতেন। অনুষ্ঠানটির নাম হলো ‘কিরণ মালা’। এই কিরণ মালা দেখা নিয়ে বাংলাদেশের দু’জন তরুণীর নাকি মৃত্যুও ঘটেছে। তারপরও সেই চ্যানেলটির ঐ অনুষ্ঠান তথা চ্যানেলটির প্রদর্শনী বাংলাদেশে বন্ধ হয়নি। (অবশ্য এই সিরিয়ালটি এখন শেষ হয়েছে)। এখন পরিস্থিতি এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশের লাখ লাখ দর্শক বাংলাদেশের অনেকগুলো চ্যানেল ছেড়েই দিয়েছেন। তারা এখন ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো দেখছেন। এখন তো লক্ষ লক্ষ পরিবার রয়েছে, যারা ভারতের বিশেষ বিশেষ বাংলা চ্যানেলগুলো দেখছে। যেসব চ্যানেলের দিকে বাংলাদেশের মানুষ ঝুঁকে পড়ছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘জি বাংলা’, ‘স্টার জলসা’, ‘কালার বাংলা’ ইত্যাদি। হিন্দি চ্যানেলগুলোর মধ্যে ‘স্টার প্লাস’, ‘সনি’ এবং ‘জিটিভি’ তো রয়েছেই। স্টার জলসার একটি সিরিজের নাম ‘বধূবরণ’। বছরের পর বছর ধরে সিরিজটি চলছে। এই সিরিজটির মূল উপজীব্য তিনটি। সেগুলো হলো ফ্যামিলি ক্লিক, হিন্দু ধর্মের দেব দেবীদের দুঃখের দিনগুলোতে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা। আরেকটি অদ্ভূত এবং অবাস্তব বিষয়ও এই ধারাবাহিকটিতে জুড়ে দেয়া হয়েছে। সেটি হলো ভূত-প্রেত। দুই পুত্রবধূর এক পুত্রবধূকে বোমা বিস্ফোরণে হত্যা করা হয়। অতঃপর সেই পুত্রবধূ ভূত হয়ে অপর পুত্রবধূকে পরামর্শ দেয় এবং ভয় দেখায়। এসব সিরিয়ালে ঠাকুর ঘরের ছড়াছড়ি। প্রত্যেকটি আপদ-বিপদে তারা ঠাকুরের ওপর ভরসা করে। (এটিও কয়েক বছর চলার পর শেষ হয়েছে)। জি বাংলায় বেশকিছু দিন ধরে একটি সিরিয়াল চলল। সিরিয়ালটির নাম ‘এসো মা লক্ষী’। মাসের পর মাস ধরে চলা এই সিরিয়ালে প্রজাপতি ব্রহ্মা, মহাদেব শিব, নারায়ণ বিষ্ণু, বিদ্যাদেবী সরস্বতী, ধন মানের দেবী লক্ষী, ইন্দ্রদেব, দেবতা বৃহস্পতি, দেবতা শনি, দেবতা গনেশ থেকে শুরু করে তাবৎ দেবতার কাহিনী মাসের পর মাস প্রচার করা হয়েছে। স্টার জলসার আরেকটি সিরিয়ালের নাম ‘ভক্তের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ’। আরেকটি সিরিয়ালের নাম ‘তারানাথ তান্ত্রিক’। হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দু দেবদেবীদের কাহিনী সম্বলিত সিরিয়ালে ভারতীয় বাংলা ও হিন্দিু চ্যানেলগুলো সয়লাব হয়ে গেছে এবং আমরা বাংলাদেশে বসে সেগুলো গোগ্রাসে গিলছি। এখন বাংলাদেশের বড়রা তো দূরের কথা, টিন এজাররাও হিন্দু দেব দেবীদেরকে চিনে গেছে। কিন্তু মহাবীর খালিদ, বখতিয়ার খিলজী, মোহাম্মদ বিন কাসেমের কথা কয়জন জানে?
তাদের বিপরীতে আমাদের চ্যানেলগুলো দেখুন। বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ও সংস্কৃতির কোন ছায়াপাত সেখানে নেই। ধর্মের কথা বললেই মৌলবাদ, ইসলামী লেবাস পরলেই মোল্লা আখ্যা দেয়া হবে। যারা অপকর্ম করে তাদের দাড়ি, গোলটুপি এবং কল্বিদার পাঞ্জাবী থাকতেই হবে। আমাদের নাটক, নভেল এবং সিনেমাকে এতো সেক্যুলারাইজ করেও ভারতীয়দের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মন গলানো যায়নি। তারা আজও বাংলাদেশী কোন চ্যানেল পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে ঢুকতে দিচ্ছে না। কেন ভারতে বাংলাদেশী চ্যানেল ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না ! এ ব্যাপারে সিনেমার রথী-মহারথীরা কি করছেন? টেলিভিশনের মালিকরাই বা কি করছেন? প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং যখন ঢাকা এসেছিলেন তখন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী লেভেলে নাকি এই প্রশ্নটি উঠেছিল। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, তিনি বিষয়টি দেখছেন। এখনও কি তিনি দেখছেন? কত দিন তিনি দেখতে থাকবেন?
পারিবারিক কুটনামী, পরকীয়া, নর-নারীর প্রেমের খোলামেলা দৃশ্য এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্য ও নিষ্ঠাবানতার ভিত্তিতে এসব সিরিয়াল নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ভাষা এক হওয়ার ফলে এবং তাদের নির্মাণশৈলী উন্নততর হওয়ার ফলে তাদের সিরিয়াল বাংলাদেশে দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে। ভারতীয় টিভির প্রভাব হয়েছে সর্বগ্রাসী। এখন বাংলাদেশের মানুষের পোশাক আশাকে, চলাফেরায়, আচার ব্যবহারে ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতীয় যুবকরা টাইট প্যান্ট এবং টাইট শার্ট পরছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। ছেলেরা আগে লম্বা এবং ঢিলেঢালা পাঞ্জাবী পরতো। কিন্তু ভারতীয় বাঙালি তথা ভারতীয় পুরুষরা এখন টাইট পাঞ্জাবী পরছে। ফলে বাংলাদেশীদের পাঞ্জাবীও টাইট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের চুলের রং কালো। চুল পেকে গেলে কলপ দিয়ে কালো করা হয়। কিন্তু পশ্চিমা সমাজের মেয়েরা তাদের কেশ বিন্যাস করার সময় সবুজ, সোনালী প্রভৃতি রং ব্যবহার করছেন। দেখাদেখি ভারতীয়রাও করছে। দেখাদেখি বাংলাদেশেও তার মৃদু ঢেউ আসতে শুরু করেছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের ৮ বছরের শাসনামলের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর ধনিক গজিয়ে উঠেছে। এরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এদের হাতে অগাধ পয়সা। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা খরচ করে এরা বিদেশী সংস্কৃতি আমদানি করছে। ভারতের একজন তরুণী কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল। একথা সত্যি যে তিনি ভালো গান করেন। তার কণ্ঠ ভালো, সুরও ভালো। বেশ কয়েক মাস আগে তাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। আবার নাকি আনা হচ্ছে। বিকেলের ফ্লাইটে তিনি ঢাকা আসেন। স্টেজে দু’ঘণ্টা পারফর্ম করেন। তারপর রাতের প্লেনে তিনি দিল্লী অথবা বোম্বে ফিরে যান। এই তিন-চার ঘণ্টার জন্য তার ঢাকা আগমন এবং নির্গমনের জন্য বিমান ভাড়া এবং পাঁচতারা হোটেল ভাড়া ছাড়াও তাকে নাকি সম্মানী দেয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু ঢাকা এসে তিনি কি শোনান? শোনান লেটেস্ট হিন্দি ফিল্মের ধুম ধাড়াক্কা গান।
এ তো গেল শ্রেয়া ঘোষালের কথা। বিগত ৬/৭ বছরে দেখা যাচ্ছে, ঝাঁকে ঝাঁকে  শ্রেয়া বেগমরা ঢাকা আসা-যাওয়া করছেন। কত কোটি টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছেন সেটি নিয়ে সংস্কৃতিক অঙ্গনে নানান কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শ্রেয়া ঘোষাল আর শাহরুখ খানদের কথা আর কত বলব? ভারতীয় শিল্পীদের বাংলাদেশে আসা-যাওয়াটা অনেকটা ১২ মাসে ১৩ পার্বনের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর টাকার বন্যা ছড়িয়ে সঙ্গীত উৎসব করা হয়। একেক বছর একেক রকম উৎসব। কোনো বছর ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের উৎসব। ৫ থেকে ৭ দিনের উৎসব। সারা ভারত থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ওস্তাদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা প্রতিদিন সারারাত ধরে গানবাজনা করেন। ভারতে ফিরে যাওয়ার সময় কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে যান। এছাড়া লোকসঙ্গীত উৎসব। এসব উৎসবের নাম দেয়া হয়েছে ‘ফেস্ট’। ফেস্টিভ্যালের সংক্ষিপ্ত আকার। আবার সেই ঝাঁকে ঝাঁকে ভারতীয় শিল্পী। ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদী, জারিশারি, লালনের বাংলাদেশে ভারত থেকে আনা হয় পল্লী সঙ্গীত শিল্পী। কারা জোগায় এই কাড়ি কাড়ি টাকা? কারা এই গৌরী সেন? উদ্যোক্তারা বাংলাদেশী হলেও বাংলাদেশের ওস্তাদ অথবা পল্লী সঙ্গীতের দিকপালদেরকে রাখা হয় ব্যাক বার্ণারে।
আমরা জানি না কবে অবসান হবে এই হীনমন্যতার? এমন প্রশ্ন কি কারো মনে উদিত হয় না যে, বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পী আসছেন ঝাঁকে ঝাঁকে কিন্তু এমন ঘটা করে কজন বাংলাদেশী শিল্পীকে পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতের অন্যান্য স্থানে নেয়া হচ্ছে? উত্তর হলো নেগলিজিবল, অতি নগণ্যসংখ্যক। তাদের মধ্যে একজন হলেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। শুধুমাত্র একজন ভালো রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তাকে যদি আনানেয়া করা হয় তাহলে কারো বলার কিছু ছিল না। বন্যার ওপর আওয়ামী লীগ এবং সেই সুবাদে ভারতের বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছে বলেও ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। বন্যা প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী ঘরানার লোক। আওয়ামী সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় তার সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারার’ উৎপত্তি, বিকাশ এবং স¤প্রসারণ। তিনি ছাড়া কি এ দেশে আর কোনো প্রতিভাবান শিল্পী নাই? তাদের কেন ডাক পড়ে না? যাদের ডাক পড়ে না, তাদের তো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আর সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে এ দেশে যত মাতামাতি হয়, হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে কি কলকাতায় তেমন মাতামাতি হয়েছে? কিংবা ইমদাদুল হক মিলনকে নিয়ে? আমরা নিজেরাও কি আমাদের আত্মসম্মান দেখব না?
বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের পর্দা দখল করে আছে ‘জি বাংলা’, ‘স্টার প্লাস’, ‘স্টার জলসা,’ ‘সনি’ প্রভৃতি ইন্ডিয়ান চ্যানেল। কেউ কেউ বলেন যে, পশ্চিমের অর্থাৎ ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের কোন দর্শক আমরা পূবে অর্থাৎ বাংলাদেশে টানতে পারিনি। বরং পুবের দর্শক অর্থাৎ বাংলাদেশের দর্শক পশ্চিমে অর্থাৎ ভারতে চলে গেছে। তারা বলেন, ভারতে এখনও ১ হাজার চ্যানেল। তার পরেও তারা বাংলাদেশের কাউকে চেনে না। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ৩০/৩২টি চ্যানেল। অথচ ভারতীয় প্রায় সব শিল্পীকেই বাংলাদেশ চেনে। অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, শাহরুখ খান বা আমির খান তো অনেক ওপরের, ভারতীয় ছোট পর্দার অনেক অয়রহ গয়রহও বাংলাদেশে এখন ব্যাপক পরিচিত। এর কারণ একদিকে ভালো গল্প ও প্লট, শক্তিশালী অভিনেতা ও সুদক্ষ পরিচালনা; অন্যদিকে তাদের ক্যামেরা, সাউন্ড ও লাইটিংসহ কারিগরি দিকের উৎকর্ষতা। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ‘জি বাংলা’য় চলছে রিয়ালিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ নামক রিয়ালিটি শো। পশ্চিমবঙ্গের পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে যে, তাদের সময় রাত সাড়ে ১০টায় যখন এই অনুষ্ঠান চলে, পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ করে কলকাতার রাস্তাঘাট নাকি ফাঁকা হয়ে যায়। এর চেইন ইফেক্ট পড়েছে ঢাকা তথা বাংলাদেশেও। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যখন এই অনুষ্ঠান চলে, তখন আমাদের ৯০ শতাংশ দর্শকের চোখ নাকি বাংলাদেশের ৩০টি চ্যানেল থেকে সরে যায়। সরে গিয়ে ‘জি বাংলা’র ওপর নিবদ্ধ হয়। আমরা কি ‘সা রে গা মা পা’র মতো কোন অনুষ্ঠান বা তার চেয়েও উন্নতমানের কোনো অনুষ্ঠান বানাতে পারি না? হয়তো পারি, হয়তো পারিনা। কিন্তু কঠোর বাস্তবতা হলো এই যে , এখন পর্যন্ত এ দেশে সেই মানের কোনো অনুষ্ঠান তৈরি হয়নি। অথচ সেই অনুষ্ঠানে আমরা কি দেখি? সেখানে আধুনিক গানের সাথে  হিন্দু পুরাণভিত্তিক গান এবং কীর্তনের ছড়াছড়ি। এ্ই সব অনুষ্ঠান দেখে আমাদের দর্শক হিন্দু দেবদেবী চিনে যাচ্ছে। ধাতস্থ হচ্ছে কীর্তন এবং ভক্তি সঙ্গীতে। তাদের কাছে হিরো এবং হিরোইন হয়ে উঠেছেন প্রসেনজিৎ, জিৎ, শ্রাবন্তি, রচনা, কোয়েল মল্লিকসহ অন্যরা। এখন সঙ্গীত  পরিচালক  এবং গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে শান্তনু মৈত্র, কুমার সানু, অলকা ইয়াগনিক, হরিহরণ খুব পপুলার।
এতদিন  বাংলাদেশে রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদি মোহাম্মদ, পাপিয়া সারোয়ার এদেরকে নিয়ে খুব গর্ব করা হতো। এখন জি বাংলা, তারা মিউজিক এবং স্টার জলসার কল্যাণে জয়তী চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশে খুব পপুলার হয়ে উঠেছেন। তাদের ক্রমবর্ধমান পপুলারিটির অনুপাতে বাংলাদেশের  শিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে এখন কোন জায়গা পাচ্ছে না। এসবের সাকুল্য পরিণতিতে বাংলাদেশে এখন চলছে প্রবল ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
Email: journalist15@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Milon ২১ মার্চ, ২০১৭, ১:২২ এএম says : 0
akdom khati kotha bolesen
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ২১ মার্চ, ২০১৭, ১:২৩ এএম says : 0
ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে বাঁচতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
Total Reply(0)
ফোরকান ২১ মার্চ, ২০১৭, ১:২৫ এএম says : 0
আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গণের যারা আছে তারা বিষয়টি উপলব্ধি করলে সবচেয়ে বেশি কাজে দিবে।
Total Reply(0)
Ripon Chowdhury ২১ মার্চ, ২০১৭, ১:২৬ এএম says : 0
Thanks a lot to the writer for writing this very very important news.
Total Reply(0)
এস, আনোয়ার ২১ মার্চ, ২০১৭, ১১:৪৪ এএম says : 0
এ জন্যই প্রবীনরা বলেন, "সেধে সেধে স্বামী ধরলে মোহরানা পাওয়া যায় না।"
Total Reply(0)
K.M. Syful Islam ২১ মার্চ, ২০১৭, ১:৫১ পিএম says : 0
শুধু শিল্পি কেন ?
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২১ মার্চ, ২০১৭, ২:৩৯ পিএম says : 0
Bangladesher beshir vag shilpl varoter dalali kore ai karone ekhon bash
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন