মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য : নানা প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর : ২০০৭ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা একযোগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়, যার ধারাবাহিকতাতেই সেনাসমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসে। ওই সরকার দুর্র্নীতি তথা যেসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলে বাস্তবে দেখা যায় তার উল্টোটি। সরকার পরিচালনায় অক্ষম ওই সরকার প্রকৃত বিবেচনায় প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে যা কিছু করেছে তা যে অবৈধ ছিল একটু একটু করে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দুর্নীতি উচ্ছেদের নামে মূলত ওই সরকারের  বিশেষ একটি সংস্থার কেউ কেউ যে দুর্নীতিতে মারাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়ে তার স্বীকৃতি দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সম্প্রতি এক রায়ে বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ভ্যাট ও ট্যাক্সের নামে নেয়া ছয়শ কোটি টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। রায়ের পর মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেছেন, এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে গণতান্ত্রিক দেশে অগণতান্ত্রিক শাসন কখনই কাম্য নয়। দেশের নাগরিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বেআইনিভাবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসব টাকা তুলে নেয়। তবে ওই সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে আপিল বিভাগকে জানিয়েছে, কিছু সদস্য ব্যক্তিগতভাবে এসব করেছে। এই দায় সংস্থার নয়। হাইকোর্টের রায়ে যেসব ব্যক্তি এই কর্মকান্ডে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। আলোচ্য গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যা-ই বলা হোক প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের এমনকি রাজনৈতিক দলের কোনো দায়িত্বশীলের নিন্দিত বা নন্দিত ভূমিকার কারণেই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নিন্দিত বা প্রশংসিত হয়। এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ কম। এই রায়ের মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় যে ধরনের সরকারের কথা বলা হয়েছে সে ধরনের সরকারের বিরুদ্ধেই বড় ধরনের অভিযোগ তুলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। তিনি পুনর্বার উল্লেখ করেছেন, বিএনপি ২০০১ সালে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং আমেরিকার যোগসাজশে ক্ষমতায় এসেছিল।
এর আগে যখন তিনি একই প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছিলেন তখন এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়েছে। একটি দৈনিকের সাথে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা এ নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। অনেকে এই মন্তব্যকে ঘিরে পর্দার আড়ালের রাজনীতির নতুন হিসাব-নিকাশের কথা বলেছেন। অনেক মনে করেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়েও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো হয়তো নতুন কোনো মেরুকরণের কথা ভাবছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সেরকম ইঙ্গিত বহন করে এবং এর যথেষ্ট ভাবার্থ রয়েছে বলেই তারা মনে করছেন। নির্বাচন একটি দেশের অভ্যন্তীরণ ব্যাপার। সেই নির্বাচনে অন্য দেশের প্রভাবকে কোনো বিবেচনাতেই খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মাত্র সেদিন শেষ হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভূমিকা নিয়ে এখনো বিস্তর আলোচনা চলছে। বিদেশি প্রভাব তো অনেক বড় ব্যাপার। নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের কথা জানার জন্য আড়িপাতার কারণে নির্বাচিত হওয়ার পরেও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিদায় নিতে হয়েছিল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির অভিযোগে। যে কোনো কারণেই হোক আমাদের দেশে নির্বাচনকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া হয় না। ভোটাধিকারকে কার্যত কোনো পাত্তাই দেয়া হয় না। ফলে এদেশে ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যেন একটা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার আগে দেখা যাক ক্ষমতাশীনরা জনগণের ভোটের কতটা গুরুত্ব দেন। যে ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে তার প্রকৃত বৈধতা কী? এটি ছিল একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মহল বার বার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসেছে। কই তাতে তো সরকার সাড়া দিচ্ছে না। এমনকি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে কথা হতে পারে এমন ধারণা থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবকে পর্যন্ত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলার কারণে মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবেক রাষ্ট্রদূতের সাথে সর্ম্পকের ব্যতার ঘটেছে, প্রকাশিত বিভিন্ন খবরাদিতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শীঘ্রই সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচন দেয়া হোক, এমন ধারণা আর্ন্তজাতিক মহলকে দেয়া হয়েছিল। সেই ধারণা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ২০০১ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে র ও সিআইয়ের ভূমিকা। এই ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা অর্থহীন। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হয়তো প্রমাণ থেকে থাকতে পারে যে কারণে তিনি এ কথা বলেছেন। জনসাধারণের কাছে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া ভার। কিছু আলামত থেকে হয়তো এর একটা ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে মার্কিন ভ‚মিকা প্রধানমন্ত্রী নতুন কিছু নয়। এটা সেই পাকিস্তান আমল থেকেই রয়েছে। খোদ আওয়ামী লীগকেও এক সময় ভারত-মার্কিনপন্থি বলে বলা হতো। এমনকি ’৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন ভ‚মিকার পরেও দেশে মার্কিন প্রভাব কমেছে তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপন্থি গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি বিশ্বব্যাপী ডানপন্থিদের আস্থা ছিল। বাকশাল-পরবর্তী সময় থেকে মার্কিন সমর্থন নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, যা পরবর্তীতে আরো বিস্তৃতি লাভ করে। এদেশের জনগণের মধ্যে তুলনামূলক বিচারে মার্কিন প্রভাবকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ ছিল না। ইরাক-আফগানিস্তানে ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসনের পর সঙ্গত বিবেচনা থেকেই দুিনয়াজোড়া মার্কিন প্রভাবে যে ধস নেমেছিল বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। যাই হোক না কেন, প্রকাশ্যত সরকারিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কেও তেমন কোন অবনতি হয়নি। যা হয়েছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর। ওই নির্বাচনে সুস্পষ্টভাবেই মার্কিন অবস্থান ভারতের অবস্থানের অনুরূপ ছিল না। যদিও বার বার এটা বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভারত ও মার্কিন স্বার্থ অভিন্ন। সেই বাস্তবতার মধ্যেই আগামী নির্বাচনের সময় যখন সমাসন্ন তখন প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনেছেন। প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন তার কোনো দলিল আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত হয়নি বরং বিশ্বব্যাপী ওই নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্যই বলা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ওই নির্বাচনের পর বাংলাদেশে অনেক দিন কোনো নির্বাচন হয়নি আর সে প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। এ কথা অতুক্তি হলেও সত্যি, সেই সরকারের আমল থেকেই বাংলাদেশে ভারতীয় প্রভাব বিস্তার শুরু হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দেশে উচ্চতর আদালত ভিন্ন প্রসঙ্গে হলেও যাদের বিচার করতে বলেছেন সরকার কিন্তু তাদের বিচারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে যে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী তুলেছেন তার ঢেউ দেশ ছেড়ে বিদেশেও লেগেছে। ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া এবং ব্যক্তি এ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। বিবিসির সাবেক সংবাদদাতা সুবীর ভৌমিক সাউথ এশিয়ান মনিটরে ‘শেখ হাসিনার ক্ষোভের নেপথ্যে’ শিরোনামে একটি বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
নিবন্ধে তিনি নানা বিষয় নিয়ে কথা তুলেছেন। লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলে তার ভারত সফরকে সামনে রেখে কেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং মার্কিন দূতাবাস ২০০১ সালে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিল বলে অভিযোগ উত্থাপন করে এমন ভয়াবহ ধরনের গোলাবর্ষণ করলেন! হাসিনাকে যারা ভারতপন্থি বলে অভিযুক্ত করেন, তারা হয়তো হতচকিত হবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল প্রত্যাঘাত করে ২০০১ সালে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে ‘র’ এবং মার্কিন সহায়তার কথা অস্বীকার করেছেন। পাল্টা আক্রমণ করে তিনি অভিযোগ করেছেন, হাসিনাকে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনে সহায়তার ক্ষেত্রে ‘র’ ভূমিকা পালন করেছে। তবে যারা হাসিনার ঘনিষ্ঠ, তারা কিন্তু তিনি যা করেছেন তা কেন করতে বা বলতে গেলেন বিষয়টি বুঝতে কোনো সমস্যায় পড়েননি। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে ভারতীয় নেতাদের সাথে বিশেষ করে কংগ্রেস ও বামদের সাথে হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এপ্রিলে তার সফরকালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির তাকে স্বাগত জানানোর প্রস্তাব দেয়া এবং মোদি সরকারের তা গ্রহণ করার মধ্যে কোনো বিস্ময় নেই। গত দুই বছর ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ত্রিপুরার গভর্নর তথাগত রায়, সম্পাদক থেকে এমপি হওয়া চন্দন মিত্রের মতো সিনিয়র বিজেপি নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ফলে তাকে র কিংবা ভারতীয় এজেন্সি ও আমলাদের সাথে কাজ করতেই হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী বেশ কয়েকজন কূটনীতিকের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাদেরকে তিনি ভারতের সাথে কূটনৈতিক চ্যানেলে সরকারিভাবে যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করতে পারেন। ভারতীয় নেতাদের, এমনকি বিজেপির সাথেও কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের পর্যাপ্ত রাজনৈতিক চ্যানেল রয়েছে। তার মতে, বাজপেয়ির কান হিসেবে বিবেচিত মিশ্রের সাথে তার সমস্যার শুরু হয়। তার মতে, শেখ হাসিনা এই ‘বাংলাদেশের বন্ধুদের’ ফ্যাক্টরটিকে এত দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পেরেছেন এ কারণে যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের এসব বাঙালি নেতাদের জানেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে বর্তমান সময়ে প্রায়ই ভারতে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী লবিস্ট হিসেবে অভিহিত করা হয়।
মিশ্রকে দেয়া হাসিনার চাঁচাছোলা জবাবে মিশ্রের হাতিতুল্য ইগো এতে আহত হয়েছিল। মিশ্র চেয়েছিলেন হাসিনাকে ‘ঠিক করতে।’ ঢাকায় র’-এর স্টেশন চিফ অমিতাভ মাথুরকে, বন্ধুদের কাছে তিনি টনি নামে পরিচিত ছিলেন, সক্রিয় করা হলো। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ পরাজিত হওয়ার পর টনি মাথুর ভারতীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করতে এবং রিলায়েন্সের আম্বানি ভাইদের সাথে সাক্ষাতের জন্য তার সাথে করে তারেককে দিল্লি ও মুম্বাই নিয়ে যান। আম্বানিরা মার্কিন কোম্পানি ইউনিকলের গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে গ্যাস আমদানির ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জন্য ভারতীয় সমর্থনের গুরুত্বের বিষয়টি বিএনপি বিশ্বাস করত। তারেক তার মায়ের পক্ষ থেকে ভারতে গ্যাস রফতানি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিনা, সে ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। তবে তিনি সম্ভবত ভারতের জন্য স্বস্তিদায়ক কিছু কৌশলী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরে দক্ষিণে কৃষ্ণ গোদাবারি বেসিনে গ্যাসের বিপুল মজুদ পাওয়া গেলে আম্বানিরা বাংলাদেশি গ্যাসের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
মনে করার বিষয়, ভারত অত্যন্ত কঠোরভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েছিল। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ একটি প্রাতঃরাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনাকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ মার্কিন কূটনীতিকরা ভারতকে তাদের কৌশলগত অংশীদার এবং বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনে তারা সমর্থন করছে বলে উপস্থাপন করছিলেন। ওয়াশিংটনে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানি খোবরাগাড়ের দেহ তল্লাশি এবং এর প্রতিশোধ হিসেবে দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করার ঘটনা বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার মারাত্মক মতদ্বৈততারই প্রতিফলন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়ে থাকে। মির্জা ফখরুল যদি ২০১৪ সালে হাসিনাকে সমর্থন করার জন্য ‘র’কে কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন, তবে ভারতীয় সিস্টেম কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও তার না থাকার বিষয়টিই প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে ‘র’ নিশ্চিতভাবেই দিল্লিকে অবহিত করেছে। কিন্তু ‘র’ নয়, বরং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সরাসরি নির্দেশনায় ভারতীয় রাজনীতিক ও কূটনীতিক নেতৃত্ব, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননই নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এ ব্যাপারে ভারতীয় নীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ঢাকা সফরকালে প্রণবের সাথে নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করে খালেদা জিয়া ভালো কাজটি করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতও বিপুল জনসংখ্যার গণতান্ত্রিক দেশ। ফলে কোনো বিদেশি নেতার যদি দিল্লিতে শক্ত পৃষ্ঠপোষক থাকে, তবে সেটা সবসময়ই সহায়ক হয়। কারণ এতে নীতি প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করা যায়।
হাসিনাকে সমর্থন করার জন্য ভারত চতুরভাবে চীনা উদ্বেগকে ব্যবহার করেছিল। প্রবল চীনা যোগাযোগ থাকা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন চীনা সমর্থন বাগিয়ে নেন, আর পুতিনকে ম্যানেজ করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী আমলের পুরনো রুশ সংযোগটি কাজে লাগান প্রণব মুখার্জি। যুক্তরাষ্ট্র এ খেলায় হেরে গিয়েছিল। ওই সমীকরণ এখন বদলে গেছে। ২০০১ সালের মতো বিজেপি ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। কিন্তু মিশ্রের লাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য মোদি কিছুই করেননি। তার ঢাকা সফর এবং এর পর থেকে হাসিনা সরকারকে সমর্থন করার জন্য সম্ভব সবকিছু করেছেন মোদি। ভারতের নিরাপত্তা ও কানেকটিভিটি উদ্বেগ দূর করার জন্য হাসিনার অনেক কিছু করা নিয়ে তিনি ক্রমবর্ধমান হারে প্রশংসিত হচ্ছেন।
ভারত সফরের আগে কেন ‘র’-এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা এ নিয়ে বিবিসিও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, গত আট বছরে ভারত ও শেখ হাসিনার সরকারের মধ্যে একটি বন্ধুত্বসুলভ আস্থার সম্পর্ক রয়েছে। তা সত্তে¡ও ‘র’ সম্পর্কে এমন বক্তব্য তিনি কেন দিচ্ছেন? প্রশ্ন যাইহোক সমর্থনের বিষয়টি কোনো বিশেষ সংস্থার মনে করার কোনো কারণ নেই। এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টিরও কোনো অর্থ নেই। বাংলাদেশের ব্যাপারে ‘র’-এর আগ্রহ এবং কর্মকান্ড এর কর্মকর্তারাই লিখেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করছিলেন তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট জিয়াকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মি. কাউ যিনি সেসময়ে র-এর প্রধান ছিলেন তার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেছিলেন, তিনিই বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো জানেন। ইনসাইড দ্যা ‘র’ বইতে  লেখক লিখেছেন এর মধ্য দিয়ে প্রেডিডেন্ট জিয়া ইন্দিরা গান্ধীকে রাষ্ট্রীয় প্রোটকল সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এ ধরনের বৈঠকে কোনো গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের বসার রীতি নেই। বাংলদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই ‘র’-এর ভ‚মকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কথাও সত্যি যে নেহেরু ডকট্রিন তথা এ অঞ্চলে ভারতীয় আগ্রাসন পরিচালনায় কংগ্রেস যেভাবে বিভিন্ন দেশে র-এর কর্মকান্ডকে বিস্তৃত করেছে তার নানা বিবরণ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ‘র’ সিআইকে নিয়ে বিএনপিকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার অর্থ যদি হয় এ ধরনের কাজ খুবই খারাপ হয়েছে তাহলে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা যে, আগামী নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভারতীয় প্রভাবকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। বর্তমান সরকার না চাইতেই ভারতকে অনেক কিছু দিয়েছে। বিনিময়ে আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যাটুকুও আনতে পারেনি। আগামীতেও পানি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ ভারতীয় স্বার্থের পুরোটাই হয়তো দেয়া হবে। এর পরেও যদি সম্পর্ক কার সাথে, এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং বিরোধীদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙার চেষ্টা হয়, তার অর্থ জনগণের না বোঝার কথা নয়।
awalthakur@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
no name ২৭ মার্চ, ২০১৭, ৯:৪১ এএম says : 1
Ta pakistanider against a kicho lekho.
Total Reply(0)
no name ২৭ মার্চ, ২০১৭, ৯:৪৪ এএম says : 1
if Pakistan is a neighbour of Bangladesh instead of India you could under understand how many problems are.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন