সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বরাদ্দ না মেলায় ঠায় দাঁড়িয়ে পিলার

বালু নদীর তৃতীয় সেতু নির্মাণ

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া এলাকায় রাজধানীর রামপুরা হতে রূপগঞ্জ সড়কে বালু নদীতে তৃতীয় সেতুটির এক বছরেই নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১৪ বছরে বাস্তবায়ন হয়নি তা। কারণ হিসেবে জানা গেছে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় কিছু পিলার তৈরির করার পরও সেতুটি বাস্তবায়ন না করেই ঠিকাদার পালিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত রূপগঞ্জ-রামপুরা সেতুটির অনুমোদন হয় ২০০১ইং সালে সে সময় এটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০০৩ ইং সনে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত¡¡াবধানে এ সেতুটি এক বছরেই শেষ হওয়ার চুক্তিতেই কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাহিদ এন্টারপ্রাইজ। তবে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এ সেতু বাস্তবায়নে অর্থ পায় কেবল ৫০ লাখ টাকা। পরে আর কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় দুটি স্পেন তথা ৪টি পিলার তৈরি করার পরই থেমে যায় এর বাস্তবায়ন কাজ। পরবর্তী বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে কাজ ফেলে রাখতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের দাবি, এ সেতুটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর সাথে রূপগঞ্জেরই নয় বরং পূর্বাঞ্চলীয় জনপদের সাথে যোগাযোগে আশানুরূপ ভ‚মিকা রাখতে পারত এ সেতু। কাঁচপুর ও ডেমরা সেতুর উপর দিয়ে চলমান যানবাহনের চাপ অনেকাংশেই কমে যেত। নিত্য যানজটের কাঁচপুর, ডেমরার পরিচয় হতে পারত আরামদায়ক সড়কে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ১৪ বছর ৪টি পিলার দেখেই শান্তনা নিয়ে আছে উভয় পাশের জনগণ। রাজধানীর সাথে মাত্র এক কিলোমিটার ব্যবধান কাটাতে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় সড়কপথে। এ দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই। এ সেতুটি বাস্তবায়ন হলে একদিকে স্থানীয়দের যেমন ভাগ্যেও চাকার মোড় ঘুরে যেত তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থায় স্বস্তি পেত রাজধানীতের আসা বিভিন্ন জেলার লোকজন। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলীউল হোসেন বলেন, নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ সেতুর কাজ শেষ করতে এখন অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। এ সেতুটি বাস্তবায়নে নতুন বরাদ্দ পাওয়ার কথা রয়েছে। সেটা পেলে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে। তবে বরাদ্দ কবে পাবে সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন জানান, সেতুটি সওজের হলেও রামপুরা থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার যে রোডম্যাপ রয়েছে সেটার ১০ কিলোমিটার সড়ক আমাদের আওতায়। ফলে রাজধানীর প্রকল্পের সাথে আমাদের প্রকল্পের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অংশের ২ কিলোমিটার রাস্তার কাজ বা রাস্তা না থাকায় এমনকি হুকুমদখল না থাকায় খুব দ্রæত এ কাজ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এদিকে সরেজমিন দেখা যায়, সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৭৫ দশমিক ৫ মিটার। যার প্রস্থ ১০ মিটার। নির্মাণ নকশায় স্প্যান রয়েছে ৪টি। ঝুঁকি নিয়ে খোলা রডগুলো দাঁড়িয়ে আছে নদীর গতি পথেই। নদীতে চলাচলরত নৌযান বাধাগস্ত হচ্ছে এ স্প্যানের কারণে। কোনো কোনো স্প্যানের রডগুলো বেঁকে গিয়ে নদীতে চলাচলরত নৌযানের বিঘœ ঘটছে। এদিকে সেতুটির উভয় পাশে জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে হুকুমদখল কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি মর্মে মহামান্য হাইকোর্টে একাধিক মামলা করা হয়েছে। তারা তাদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় একটি পক্ষ এ সেতু বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছেন। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ সেতুটি নির্মাণ করা হলে রূপগঞ্জসহ ঢাকার খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা ও এর আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের সুবিধা হতো। নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তৈরি হতো নতুন কর্মসংস্থান। অন্যদিকে সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদীসহ ১২ জেলার লোকজন ও তাদের যানবাহন এ পথেই ঢাকায় প্রবেশ ও বাহির হতে পারত। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা, তারাব ও সুলতানা কামাল সেতুর যানজট কমে যেত। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাহিদ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ব্যবস্থাপক হাবিবুল্লা পান্না বলেন, আমাদের দরপত্র অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ শেষ করেছি। পরে বরাদ্দ না পাওয়ায় অনিশ্চয়তায় কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ইছাখালী ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। বালু ও শীতলক্ষ্যায় আরো দুটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু মামলা জটিলতায় বালু নদীর উপর তৃতীয় সেতুটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে। খুব শিগগিরই এ মামলাজট খুলে জনগণের আশা পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন