বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

অগ্নি নির্বাপণে আরো সতর্ক হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. ওসমান গনি : বছরের প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে প্রতি নিয়ত আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। এতে করে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দেশের ব্যবসায়ী লোকজন। সাথে সাথে ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসার সাথে জড়িত লোকজন। আগুন লাগার কারণে একদিকে যেমন ব্যবসায়ী ক্ষতি হচ্ছে অপরদিকে কর্মজীবী লোকেরা হারাচ্ছে তাদের কর্ম। ফলে না খেয়ে না পড়ে অতি কষ্টে জীবন ধারণ করছে ঐ পরিবারের লোকজন। সাধারণত আমাদের অসতর্কতার কারণে প্রতিদিন এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। আমাদের অসতর্কতার কারণে আমরা যেমন হারাচ্ছি কোটি কোটি টাকা অপরদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবেও ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে অগ্নিকান্ডের ঘটনা। বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি। এসব অগ্নি দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসাবে বছরে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। গত ৮ বছরে সারা দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৯২৮ জন। আহত হয়েছে ১২ হাজার ৮২৫ জন। অগ্নি নির্বাপণের
দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যানে ওই সময়ে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে বহু অগ্নিকান্ডের ঘটনা এর বাইরে রয়ে যাওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা এর বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মতে, সারা দেশে প্রতিদিনই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ অগ্নিকান্ডের কারণ বৈদ্যুতিক। বিদ্যুৎ ও আগুনের ব্যবহার বাড়ায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাও বাড়ছে। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্সের বাহিরেও রয়েছে বহু অগ্নিকান্ডের ঘটনা। যেগুলোর অনেক হিসাব ফায়ার সার্ভিসের কাছে নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খবর না আসায় সে হিসাবও পাওয়া যায় না। প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারই উত্তম। সাধারণ মানুষ যথাযথভাবে সচেতন হলে তা কমিয়ে আনা যাবে। কোথাও আগুন লাগলে মানুষ সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে জানালেও প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। বড় অগ্নিকান্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে সবার দৃষ্টি কাড়লেও প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আগুনের ঘটনা ঘটছে। এসব অগ্নিকান্ডের অন্তত ৬৫ ভাগ ঘটছে বৈদ্যুতিক কারণে। এছাড়া সিগারেটের আগুন, গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, রাসায়নিক দ্রব্য, বিস্ফোরণ, আগুন নিয়ে খেলা, অসতর্কতাসহ নানা কারণে ঘটছে প্রলয়ঙ্করী অগ্নিকান্ড। নাশকতার কারণেও ঘটছে তা। মুহূর্তেই সব কিছু পুড়িয়ে সাজানো সংসার ছাই করে দিচ্ছে। প্রতিদিন দেশে অর্ধশতাধিক অগ্নিকান্ড ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছরের ২ ডিসেম্বর শেষ রাতে গুলশান-১ এর ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে ও ভবন ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ওই মার্কেটের ২৯৫টি দোকান। একই সঙ্গে পাশের পাকা মার্কেটের আরো ২৩৪টি দোকানও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই অগ্নিকাÐে কেউ নিহত না হলেও কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ ওই রাতেই শেষ হয়ে গেছে। এর দু’দিন পর গত ৪ ডিসেম্বর মিরপুরের ছফুরা টাওয়ারের ৯ তলায় আগুন ধরে। এসব অল্প কিছু অগ্নিকাÐ সবার নজরে আসলেও অনেক সময় সাধারণ মানুষের কাছে এর প্রকৃত চিত্র ও ক্ষয়ক্ষতি আড়ালে রয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশে অগ্নিকাÐের প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স হতে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার জন্য চিঠি দিয়ে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। আগুন মোকাবেলায় দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। তারপর ও সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানই তা আমলে নিচ্ছে না। আবার সচেতনতার অভাবেই বহু অগ্নিকাÐ ঘটছে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হচ্ছে বিলম্বে। এতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি বাড়ছে। প্রয়োজনীয় সচেতনতা যেমন অগ্নিকাÐ কমাতে পারে তেমনি দ্রæত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। তাছাড়া অগ্নিকাÐের ব্যাপারে দেশের সকল পেশাশ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে। যেহেতু দেশের অগ্নিকাÐের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সেই হিসাবে আমাদের দেশের প্রতিটি জায়গার বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি রাখতে হবে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতেকের বিদ্যুৎ লাইন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কোথাও কোনো গোলযোগ আছে কিনা। বিশেষ করে মেইল-ফ্যাক্টরি, বড় বড় শপিংমলগুলোর বেলায় আরও বেশি নজর দিতে হবে। দেশের প্রতিটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আগুন নিভানোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আমাদের দেশের আগুনে পুরে বেশি ক্ষয়-ক্ষতির কারণ হলো সঠিক সময়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর না দেয়া, অপরদিকে খবর দিলেও রাস্তা-ঘাটের সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে ফায়ার সার্ভিস জায়গা মতো পৌঁছতে না পারা।
ষ লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন