রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হাসপাতালে মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডা

দুই লাখ মানুষের জন্য ডাক্তার একজন

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : ভোলা জেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দক্ষিণ আইচা থানা। রয়েছে বিচ্ছিন্ন দুটি দ্বীপ ইউনিয়ন। ১৯৯৮ সালে এই অঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার কথা ভেবে প্রতিষ্ঠা করে দক্ষিণ আইচা ২০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল। প্রথমদিকে হাসপাতালটি সিকিৎসাসেবা ভালো চললেও এখন সেবা দিচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। হাসপাতাল ভবনগুলোতে মাদক সেবন, জুয়ার, নারী নির্যাতনের নিরাপদ স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। স্টাফদের সহযোগিতা নিয়ে মাদকসেবী ও জুয়াড়িরা আড্ডায় মেতে উঠেছে। দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশের একটি ভাগ রয়েছে বলে একাধিক সূত্রের অভিযোগ। বরাদ্দ ও উন্নয়ন খাত থেকে মাসিক বেতন-ভাতাদি নিয়মিত পরিশোধ করা হলেও হাসপাতালটির আধুনিক যন্ত্রপাতি এখন বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসক থেকে শুরু করে আয়া, মালি, নাইটগার্ড পর্যন্ত চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার (কর্মে) সাথে জড়িয়ে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে কর্মচারীদের কোনো নজরদারি না থাকায় কম্পাউন্ডে ধর্ষণের মতো ন্যক্করজনক ঘটনায় ৩টি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে যে, কর্মচারীদের আবাসিক কক্ষগুলো রাতের বেলা জুয়াড়িদের নিকট প্রতি রাত চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেয়া হয়। অফিস সময়ে মাত্র ১জন ফার্মাসিস্ট হাবিবকে পাওয়া গেলেও বাকিরা নিজেদের অন্য পেশায় ব্যস্ত থাকেন বলে জানা যায়। হাসপাতালের সিকিৎসাসেবার কথা না ভেবে এবং চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষকে আরো ভোগান্তি করতে ভোলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. ফরিদ আহম্মেদ বরাদ্দকৃত অ্যাম্বুলেন্সটিও ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। অত্র এলাকার মানুষ চিকিৎসা সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চিত রয়েছে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর পথ যাত্রী হচ্ছে। আর হাসপাতাল ও ইনডোরে থাকা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো বিনষ্ট হচ্ছে। জনৈক চিকিৎসক সৌদি যুবরাজের হাত ধরে ১৯৯৮ সালে আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, ইসিজি, ডেন্টাল ইউনিট, অ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটারসহ উন্নত চিকিৎসাসেবার লক্ষ্যে নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে এ অত্যাধুনিক মানের ২০শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি। তৎকালীন সৌদি ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে অনুদানের মাধ্যমে ৪জন ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে প্রায় ২ বছর যাবৎ অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে চলছে হাসপাতালটির করুণ দশা। ইতিপূর্বে ২ জন ডাক্তার সরকারি চাকরি নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। মেডিকেল অফিসার হিসাবে ডাক্তার হুমায়ুন কবির হাসপাতালে কর্মরত আছেন। তিনি আবার প্রতিদিন অফিস করেন না। তিনি অন্য উপজেলা লালমোহন বাসা নিয়ে সপরিবারসহ অবস্থান করেন। সেখান থেকে সপ্তাহে ২/১ দিন ১১টার সময় এসে দুপুর ১টায় চলে যান। বাকি একজন মেডিকেল অফিসার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বরিশাল ডেপুটেশনে রয়েছেন। থোক বরাদ্দ থেকে ঔষধ সরবরাহ, ৬/৭ মাস পর পর বেতন প্রদান, লোকবল সংকটের কারণে হাসপাতালের ইনডোর বিভাগ অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগীদের অন্যত্র যেতে হচ্ছে। যাদের আর্থিক অস্বচ্ছলতা রয়েছে তারা বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুকরী-মুকরীর রোগী ইকবাল হোসেন জানান, এক সময় আমরা চিকিৎসা পেতাম এই হাসপাতালে। এখন ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসাসেবা নেয়া সম্ভাব হয়না। কৃকরী-মুকরীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ থেকে প্রায় ৪০ কি.মি. দূরত্বে চরফ্যাশন সদরে চিকিৎসা নিতে এলে অনেক জরুরি রোগীরা পরকালের যাত্রী হয়ে যায়। এব্যাপারে মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবিরের সাথে আলাপ করলেও তার কাছে এই বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন করলেই কথা এড়িয়ে যান এবং ফোন কেটে দেন। হাসপাতালটি দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত ভোলার সিভিল সার্জনের সাথে আলাপ করতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হানিফ সিকদার জানান, মাদক ও জুয়ার আসরের বিষয় আমি জানি না এবং কেউ আমাকে অবগত করায়নি। বিষয়টি আমি দেখতেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন