সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চাকরি দেয়ার কথা বলে ১২ দিন আটকে রেখে গণধর্ষণ

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে : মালয়েশিয়ায় চাকরি দেয়ার নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে টানা ১২ দিন গণধর্ষণের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক মহিলা পালিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ বিষয়ে গত ৩১ মার্চ বাড়ি ফিরে থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননী নির্যাতিত ওই মহিলা (২৫) জানায়, আট বছর আগে তার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের চুপড়িয়া গ্রামে বিয়ে হয়। দুই সন্তান হওয়ার পর স্বামী তাকে বাপের বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যায়। গণধর্ষণের শিকার ওই মহিলা জানায়, আলীপুর ইউনিয়নের তার এলাকার গাঙনিয়া কাহারপাড়ার বাবুর আলী গাজীর ছেলে নূর ইসলাম গাজী (৪০) তাকে সরকারি খরচে মালয়েশিয়ায় চাকরি দেয়ার কথা বলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। নিরক্ষর হওয়ায় প্রথমে তিনি রাজি হননি। পরে মায়ের চাপে তিনি রাজি হন। সে অনুযায়ী নূর ইসলামের সহযোগী গাঙনিয়া গ্রামের নবাব আলীর ছেলে আবু বক্কর গাজী তাকে সাতক্ষীরা হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য গত ১৮ মার্চ রাত সাড়ে ৭টার দিকে ভোমরা-সাতক্ষীরা সড়কের বাদামতলা মোড় থেকে একটি গ্রামবাংলা গাড়িতে তুলে দেয়। তাকে সাতক্ষীরা সঙ্গীতা সিনেমা হল মোড়ে নামিয়ে দেয়ার পর নুর ইসলাম তাকে নিয়ে ১৯ মার্চ সকালে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে আসে। সেখান থেকে গাবতলী এলাকার জনৈক হাসানুর রহমানের পাঁচতলা বাড়িতে নিয়ে গেলে সেখানে পাচারের জন্য নিয়ে আসা ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন মহিলাকে সে দেখতে পান। ওই বাড়ির মালিকের ৪০/৩, নয়া পল্টন (২য় তলা), ঢাকা-১০০০ এ বিদেশে লোক নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত অফিস রয়েছে। নির্যাতিত মহিলা জানায়, তাকে ঘরে আটকে রেখে পরপর তিন দিন ধর্ষণ করে নুর ইসলাম। তারপর তাকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে সে সাতক্ষীরায় চলে যায়। এরপর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় চার থেকে পাঁচজন তাকে দিন-রাত পালাক্রমে ধর্ষণ করত। ৩০ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় ওই বাড়ির এক দারোয়ানের সহযোগিতায় সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি ফেরে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ছোট ও ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামকে অবহিত করেন। তাদের পরামর্শে সে বাদি হয়ে গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় নুর ইসলাম ও আবু বক্করের নাম উল্লেখ করে পাচারের অভিযোগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন ওই রাতেই ঘটনার তদন্তে যান। তিনি মাহমুদপুর বাদামতলায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার পর থানায় ফিরে আসেন। এরপরও অজ্ঞাত কারণে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে আসামিরা মাহমুদপুর গ্রামের শুড়িখালির আব্দুস সালাম, শহীদুলসহ কয়েকজন ৮ হাজার টাকা নিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নুর ইসলাম জানায়, বায়ারের কথামতো তিনি ওই নারীকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে রেখে চলে আসেন তিনি। এরপর কি হয়েছে তা সে জানে না। আবু বক্কর গাজী জানায়, নুর ইসলামের কথামতো তিনি ওই মহিলাকে ১৮ মার্চ রাতে বাদামতলা মোড় থেকে গাড়িতে তুলে দেয়। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, ধর্ষণের ঘটনা অনেক দিনের। তাই আলামত পাওয়া যাবে না। নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে দেরি হচ্ছে, তাই মামলা হবে কি না এখনই বলা যাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন