বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

নিউ মিডিয়ায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাঈদ অভি : একবিংশ শতাব্দীর যোগাযোগব্যবস্থা নতুন ধারার যোগাযোগমাধ্যম-শাষিত হয়ে উঠছে যাকে ‘নিউ মিডিয়া’ নামকরণ করা হয়েছে। কেবলমাত্র প্রভাবের ক্রমস¤প্রসারণই নয় বরং পুরাতন যোগাযোগ মাধ্যমের অপূর্ণতাকে ঢেকে দিয়ে তার স্থান দখল করে নিচ্ছে নিউ মিডিয়া। ‘ম্যাস মিডিয়া’ হিসেবে একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, তদুপরি সহজলভ্য, অর্থপূর্ণ ও কার্যকর যোগাযোগের মতো ট্রেডিশনাল গণমাধ্যমের ব্যর্থতার জায়গাগুলোতে দারুণ সফল নতুন ধারার গণমাধ্যম। নিউ মিডিয়া বলতে বোঝায় আধুনিক ইলেক্ট্রনিক কমিউনিকেশন ডিভাইস এবং ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে, এমনকি ট্রেডিশনাল বা পুরাতন গণমাধ্যমও নতুনভাবে বাসা তৈরি করে নিচ্ছে নিউ মিডিয়ার ভেতরে। এভাবে যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে যাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। নিউ মিডিয়া পরিণত হয়েছে পাবলিক স্ফেয়ারে যেখানে নিয়মিত নানা বিষয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। সাধারণ জনগণের জন্য যে সুবিধাদি নিউ মিডিয়া বয়ে নিয়ে এসেছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি বনাম ব্যক্তি কিংবা দল বনাম দলের রাজনৈতিক আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ ডিসকোর্সের স্থান-কাল-পাত্রের চরিত্র ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। গ্রামে রাজনীতি সচেতনতা শহরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম, এবং এই কম পরিমাণ আলোচনাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত হয় টঙ দোকানগুলোতে। নিউ মিডিয়ার সুফল গ্রামঅব্দি পৌঁছে যাওয়ার ফলে একটি বড় সংখ্যক মানুষ এ ধরনের আলোচনা করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। এরা অধিকাংশই তরুণ জনগোষ্ঠী। শহরে রাজনৈতিক আলোচনার স্থান পূর্বে ক্লাব, সভা, জনসমাগম ইত্যাদি হলেও রাজনৈতিক ময়দান ও আলোচনাস্থানের স্থানান্তর ঘটছে। রাজনৈতিক বক্তব্য ও মতামতের বহিঃপ্রকাশ মুখের শব্দের চাইতে হাতের টেক্সটে বেশি ঘটছে ভার্চুয়াল জগতে। রাজনৈতিক যোগাযোগ ও মতাদর্শগত মেলবন্ধনও তৈরি হচ্ছে নিউ মিডিয়ার ভূমিতে।
ডিজিটাল মিডিয়ায় জনসংখ্যা রীতিমতো হু হু করে বাড়তে থাকার ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো রাজনৈতিক যোগাযোগ ও প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে আগ্রহসহকারে স্ব স্ব দলের প্রচারণা ও বিরোধী দলকে নিবৃত্ত করার কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। এমনকি দলীয় নেতারাও অনেকক্ষেত্রে নিউ মিডিয়ার প্রভাব অনুধাবন করে ভার্চুয়াল জনসংযোগ করে থাকেন। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নির্বাচন, ভোটদান ও জনমতও অনেকক্ষেত্রে নিউ মিডিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত রাজনৈতিক ডিসকোর্স, প্রচারণা ও প্রোপাগান্ডা দ্বারা আক্রান্ত হয়। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ মূলত সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নাগরিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দল ও উদ্যোগকে প্রভাবিত করতে সচেষ্ট হয়।
তরুণদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং এই ধারার গণমাধ্যমই তাদের রাজনৈতিক ধ্যানধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে বড় মাত্রার ভ‚মিকা পালন করে। তরুণদের উল্লেখযোগ্য হারে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক। নিউ মিডিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের মিথষ্ক্রিয়া রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংযোজন, সংশোধন, এমনকি নতুন মতাদর্শের উদ্ভব ঘটাতেও সক্ষম।
সহলভ্যতা, তাৎক্ষণিক যোগাযোগের সম্ভাব্যতা ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের চাহিদার একত্রীকরণের সুবিধাকে পুঁজি করে ইতোপূর্বে নানাদেশে নানাধরণের আন্দোলন ও প্রতিরোধ-প্রতিবাদ গড়ে উঠতে দেখা গেছে যার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে নিউ মিডিয়া। নিউ মিডিয়ার নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে চরমতম সাফল্য এনে দিয়েছিল কথিত আরব বসন্তের সময়কালে। ফেসবুক ও টুইটারভিত্তিক যোগাযোগের কল্যাণে তিউনিসিয়ায় গণবিপ্লব বেগবান হয়, মিশরের আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যোগাযোগের দরুণ শেষ পর্যন্ত আড়াই লাখ লোক জমায়েত হয় তাহিরির স্কয়ারে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীতে শাহবাগকে ঘিরে ২০১৩ সালে ফুলেফেঁপে ওঠা গণজোয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরই অবদান।
একটি মুদ্রার দুটো পিঠের মতো নিউ মিডিয়ায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণও সবসময় ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অনেকসময় সা¤প্রদায়িকতা ও জাতিবিদ্বেষের একটি ভাগাড় হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট। এসব জায়গা থেকে প্রচারিত অসুস্থ রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা মাঝে মাঝে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয় যার কারনে নানা সময়ে নানাধরণের দাঙ্গা, ফ্যাসাদ ও সা¤প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়। তবু একথা অনস্বীকার্য যে নিউ মিডিয়া অকল্যাণের পাশাপাশি বহু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে রাজনৈতিক গতিশীলতা ও রাজনৈতিক যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরিতে। তবে ব্যক্তিপর্যায়ের সচেতনতা এবং সুষ্ঠু ব্যবহার নতুন ধারার গণমাধ্যমকে অধিকতর কার্যকরী করে তুলতে সক্ষম।
ষ লেখক : শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন