মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে : আইলা বিধ্বস্ত কয়রায় শুকনো মৌসুমেই খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানির উৎস্য পুকুরগুলোয় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় লোকজনের দুর্দশার অন্ত নেই। দূর দূরান্ত থেকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে প্রতিদিন শত শত নারী পুরুষদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে মহারাজপুর কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশি এবং দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে আংশিক গভীর নলকূপের পানি খাবারযোগ্য। বাকি অংশের মানুষ পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া বাগালী, মহেশ্বরীপুর ও আমাদি ইউনিয়নের কোন গভীর নলকূপের পানি মোটেও খাবারযোগ্য নয়। এ সকল এলাকার লোকজন সারাবছর পুকুরের পানি পান করে দিন পার করছে। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পুরোপুরি লোনা পানিতে তলিয়ে গেলে খাবার পানির পুকুরগুলো ও পুকুর পাড়ে স্থাপিত পিএসএফ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। একটানা ৩ বছর জোয়ার-ভাটা ওঠানামায় পলি পড়ে পুকুরগুলো ভরাট হয়ে খাবার পানির উৎস নষ্ট হয়ে যায়। আইলা পরবর্তী গত ৩-৪ বছর ধরে সরকার ও এনজিও সংস্থাগুলো ভরাট পুকুরগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েকটি করে পুকুর এবং পিএসএফ সংস্কার করা হয়েছে। এ সকল পুকুর থেকে প্রতিদিন সকাল হতে গভীর রাত অবধি শত শত নারী পুরুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে এসে সারিবদ্ধভাবে ঘণ্টার ঘণ্টার পর দাঁড়িয়ে কলস ভর্তি করে খাবার পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। বাগালী ইউনিয়নের বামিয়া সরকারি পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরপাড়ের পিএসএফে শত শত নারী লাইন দিয়ে কলস হাতে পানির জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ সময় মনিরা ও রাধা রানী নামের দু’মহিলাসহ উপস্থিত সকলে জানায়, সংসারের কাজকর্ম ফেলে রেখে পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে প্রতিদিন এখান থেকে পানি নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়। অধিক সময় অপচয় হওয়ায় অনেকে বাড়িতে কাজ কর্ম ঠিকমতো করতে না পারায় সাংসারিক অশান্তি সৃষ্টি হয় বলে তারা জানান। যে সব এলাকায় গভীর টিউবওয়েল রয়েছে সেগুলো চাহিদার তুলনায় কম বিধায় সেখানেও লোকজনের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এজন্য এলাকা ভিত্তিক নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। বাগালী ইউপির সাধারণ জনগণ বলেন, মরু এলাকার পশু পাখি যেমন পানির জন্য দিকবিদিক ছোটাছুটি করে তেমনি বাগালী ইউনিয়নের ১০ সহস্রাধিক পরিবার পানির জন্য ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছোটাছুটি করছে। পানীয় জলের সংকট লাঘবে বেশি বেশি পুকুর খনন ও পিএসএফ স্থাপন করা গেলে এর সমাধান হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উপজেলার ৫নং কয়রা গ্রামের আব্দুল গফুর সরদার জানান, তাদের খাবার পানির জন্য ১৫ কিলোমিটার দূর জোড়শিং ও বজবজা এলাকা থেকে পানি এনে পান করতে হয়। এ রকম সমস্যা ৪নং কয়রা, মঠবাড়ী, তেঁতুলতলারচর, পাথরখালী ও কাটকাটাসহ অনেক এলাকার মানুষের। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. শহিদুল হক বলেন, উপজেলার অধিক অংশ এলাকায় খাবার পানির সমস্যা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরের সহযোগিতায় কয়েকটি পুকুর সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া টিউবওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা যথেষ্ঠ নয়। এ জন্য তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করেছে খাবার পানির উৎস যোগানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বদিউজ্জামান বলেন, কয়রা এলাকায় খাবার পানির সমস্যা লাঘবে টিউবওয়েল ও রেইন ওয়াটার হার্ভেসটিং বসানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন