শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কর্তার নিযুক্ত দালালদের কাছে জিম্মি গ্রাহক

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৈয়দ নাজমুল ইসলাম, উজিরপুর (বরিশাল) থেকে : দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও তাদের নিযুক্ত দালালরা জিম্মি করে রেখেছে উজিরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসকে। ভ‚মি অফিসে এসে হয়রানি ও নিঃস্ব হচ্ছে ভ‚মি মালিকরা। অফিসের প্রধান কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান হিজবুল, অফিস সহকারী মো. আবুল হাসেশ, মহরার পেশকার মোসাঃ ফাতেমা তুজ-জোহরাসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের লালিত দালালদের দুর্নীতির কাছে অসহায় হয়ে পরেছে। উজিরপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি নিয়ে একাধিকবার জাতীয় পত্রিকায় নিউজ ছাপা হলেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন জেহাদ ঘোষণা করেছে তখন অফিসের প্রধান কর্মকর্তা বহল তবিয়তে থাকায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার খুঁটির জোর কোথায়? তথ্যানুসন্ধ্যানে যানা যায়, বাধ্যতামূলক উৎকোচ গ্রহণ করা হয়। লাখে ১১শ টাকা নির্ধারিত ঘুষ। এরপর প্রথম হাজার থেকে ২৪ হাজার পর্যন্ত ৫শ, ২৪ হতে ৩৫ হাজার পর্যন্ত ৬শ, ৩৫ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত ৮শ, ৫০ থেকে ৭৫ হাজার পর্যন্ত ৯শ, ৭৫ থেকে ১ লাখ পর্যন্ত ১১শ টাকা এবং ১ হাজারের নিচে হলে ১শ টাকা। এভাবেই নির্ধারিত ঘুষ দিতে হয় অফিসারদের। অফিস শেষে কতটি দলিলে কত লাখ টাকা হয়েছে তা প্রত্যেক দলিল লেখকে হিসাব করে দিতে হয় ঘুষের নির্ধারিত ফি। এ নিয়ম শুধু সাফ কবলা দলিলের ক্ষেত্রে। এছাড়া হেবা বিল এওয়াজ, দানপত্র, হেবার ঘোষণাপত্র, আমমোক্তারনামা, বায়না চুক্তিনামা, এফিডেবিড এ সমস্ত দলিলের ক্ষেত্রে আবার আলাদা উৎকোচ (ঘুষ) ফি দিতে হয়। এবং দলিল করতে যে সমস্ত কাগজপত্রাদি প্রয়োজন সেখানে যদি কোনো ত্রæটি থাকে তবে কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো উৎকোচ না দেওয়া পর্যন্ত দলিল রেজেস্ট্রি হয় না। কিছু দলিল হয় যা দলিল আইনে পড়ে না। দলিলগুলো অফিসের মধ্যে বিশ্রাম কক্ষে বসে রেজেস্ট্রি করে দেন কর্মকর্তা। দলিল ভিজিট কমিশনের ক্ষেত্রে ফিস ধার্য থাকলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দলিল দাতা/গ্রহীতার দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে উভয় পক্ষ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। দলিল ডেলিভারি ক্ষেত্রে দলিল প্রতি মাসে ৫ টাকা ও ৩ বছরের ঊর্ধ্বে ১শ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও সেখানে নেয়া হয় বেহিসাবে। কর্তার মন জয় করে কাজ না করলে দলিল লেখদের সমূহ বিপদ সামনে এসে দাঁড়ায়। দলিল ডেলিভারির দায়িত্বে থাকা মহরার পেশকার মোসাঃ ফাতেমা তুজ-জোহরা কে দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে সে সকল প্রশ্নকে উপেক্ষা করে বলেন, আমার কর্তৃপক্ষ যা বলেন আমি তাই করি। এছাড়া আমি আর কিছু বলতে পারব না। ঘুষের টাকা উত্তোলনকারী অফিস সহকারী মো. আবুল হাসেশ রাগম্বিত হয়ে বলেন, আপনার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারব না। আমার অনেক কাজ আছে। কিছু জানতে হইলে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে জেনে নিন। তার অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই করি না। ঘুষ দুর্নীতির বিষয় প্রশ্ন করলে প্রধান কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান হিজবুল কোন উত্তর না দিয়ে রাগে-ক্ষোবে গর্জে উঠেন এবং বলেন, এর উত্তর পাইতে হইলে জেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে যেনে নিন। তা না হলে তার অনুমতি নিয়া আসেন। এরপর সাংবাদিকদের সম্পর্কে নানা কথা বলতে থাকেন। একপর্যায় তার অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে আসলে পেছন থেকে এক কর্মচারী এসে বলেন, স্যার আপনার জন্য ১ হাজার টাকা পঠিয়েছে। টাকাটা ফিরিয়ে দিলে কর্মচারী চলে যায়। সূত্র জানায়, তা দেখে রাগে সাংবাদিকতা বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলেন। নাম প্রকাশ না করার সর্তে একাধিক দলিল লেখক বলেন, কোন কোন দিন দলিল লিখে অফিস ও কিছু ব্যক্তিদের চাহিদা পূরণের পর নিজেদের খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়, এমনকি সন্তানদের জন্য একটি চকলেটও নিতে পারি না। এই কাজ শিখেছি, অন্য কোন কাজ পারি না বিধায় সকল অত্যাচার সহ্য করছি। উজিরপুর দলিল লেখক সংগঠনের সভাপতি মো. জামাল হোসেন বলেন, এ বিষয় আপনার প্রশ্নের কোন উত্তর আমি দিতে পারব না, কারণ এই অফিসেই আমাদের কাজ করতে হবে, অতএব অফিসারদের বিরুদ্ধে আমার যাওয়া কোন প্রকারই সম্ভব নয়। এখানে যা হচ্ছে তাতো গোপন কিছুই না। অতএব আমাকে দোষী করবেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন